জেলা

বিশ্বব্যাপী গৃহপরিচর্যা পেশায় যুক্ত শ্রমিকদের পরিস্থিতি ও পরিত্রাণের পথ।


কিংশুক ভট্টাচার্য:-চিন্তন নিউজ:-২৪শেআগস্ট:- ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়নস্ বিশ্বব্যাপী গৃহ পরিচর্যার পেশায় যুক্ত কর্মীদের জীবন ও কাজের সামগ্রিক উন্নতির বিষয়টি গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ‍্য করছে। গৃহপরিচর্যার কর্মীরা সাধারনত চূড়ান্তভাবে নেতিবাচক এবং দুরুহ পরিস্থিতির মধ‍্যে কাজ করতে বাধ‍্য হন। এই অতিমারি সংক্রমণ পরিস্থিতিতে যা আরও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

আইএলওর তথ‍্য অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে প্রায় ছয়কোটি সত্তর লক্ষ মানুষ নিজের ও পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন‍্য এই পেশার উপর নির্ভরশীল। এদের মধ‍্যে আশি শতাংশই মহিলা। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা কোনো চুক্তি ছাড়াই কাজ করেন, যার অর্থ তাঁরা যে কোন সময় সাধারণ অধিকারগুলি হারাতে পারেন এবং চুক্তি না থাকায় তাঁদের কোনও আইনি সুরক্ষা পাওয়ার সুযোগও নেই। স্বাভাবিক ভাবেই এই অস্থির সংক্রমণজনিত সময়ে তারাই আক্রমণের সবচেয়ে সহজ শিকার হয়ে উঠেছেন। সবচেয়ে বেশী ছাঁটাই অথবা বেতন পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী বঞ্চিত তাঁরাই।

আর্জেন্টিনায় বিধিবহির্ভূত শ্রমিকের সত্তর শতাংশ গৃহপরিচর্যার পেশায় নিযুক্ত। যেখানে চুক্তি থাকা শ্রমজীবীদের মধ‍্যেই এই পরিস্থিতিতে কাজে যোগ না দেওয়ার কারনে মাত্র তেত্রিশ শতাংশ সম্পূর্ণ বেতন পেয়েছিলেন। তাঁদের বেশীর ভাগই কাজে অনুপস্থিতিতে বেতন না পাওয়ার আতঙ্কে সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়েও কাজে যোগ দিতে বাধ‍্য হতে হয়। এমনকি লকডাউনের সময় তাঁদের প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র ছাড়াই কাজে যোগ দিতে হয়েছিল।

প্রায় একই ছবি দেখা যায় ইকুয়েডরে। সেখানেও কোনও চুক্তি নেই এবং সংক্রমণের প্রথম মাসগুলিতে প্রায় পঁচাশি শতাংশকে ছাঁটাই করা হয়েছিল। ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল তেষট্টি বছর বয়সী এক গৃহ পরিচারিকার। ঐ পরিচারিকা সংক্রামিত হয়েছিলেন তাঁর কর্মস্থলে ।দেখা গেছে ঐ পরিবার ইতালিতে ভ্রমণ করে ফিরে আসার পরে কোভিভে হয়েছিলেন।

এটি অনুমান করা হয় যে ব্রাজিলে প্রায় একষট্টি লক্ষের অধিক গৃহকর্মী রয়েছেন, কিন্তু তাঁদের য়ধ‍্যে মাত্র চার শতাংশ নিজেদের ইউনিয়নে সংগঠিত। বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই এই পেশায় যুক্তদের পরিস্থিতি যথেষ্ট দুর্বল। উদাহরণস্বরূপ ইন্দোনেশিয়ায় যেখানে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সেখানকার এই পেশাভুক্ত বিয়াল্লিশ লক্ষ মানুষের মধ‍্যে তারা তাদের দেশের ন্যূনতম মজুরির মাত্র বিশ থেকে ত্রিশ শতাংশ পেয়েছে। মধ্য প্রাচ্যে যারা শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়া থেকে অভিবাসী, সেখানে পরিচর্যার পেশায় যুক্ত, আইএলওর তথ‍্য অনুসারে, অনেক সময় তাদের কাজের জন্য মোটেও বেতন দেওয়া হয় না। উপসাগরীয় দেশগুলিতে, তাঁদের মালিকেরা তাঁদের ভিসা নিজেদের কাছে জমা রাখেন এবং তাদের অনুমতি ছাড়া তাঁরা তাঁদের নিয়োগকর্তা পরিবর্তন করতে পারেন না। তিউনিসিয়ার মতোই অন্যান‍্য কিছু দেশে সংক্রমণের গৃহ পরিচর্যার কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের প্রথমদিকেই বরখাস্ত করা হয়েছিল। হংকং ও সিঙ্গাপুরে আইন অনুসারে তাদের নিয়োগকর্তাদের সাথে থাকা বাধ‍্যতামূলক। ছিল, তাই সংক্রমণের সময় লকডাউনের কারনে পাওয়া ছুটির দিনেও তাঁরা অন‍্যত্র থাকতে পারেননি।
ইউরোপের অবস্থা আরও ভয়াবহ।এখানে এই পেশায় রতদের যে কোন সময়ে বরখাস্ত , যৌন নিগ্রহের বা অন‍্যন‍্য নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়।

উপরের সমস্ত তথ‍্যই গৃহ পরিচর্যার পেশার সাথে যুক্ত শ্রমিকদের পেশাগত অবস্থার ভয়াবহতার গুরুত্ব সহকারে তথ‍্য তুলে ধরছে। এদের বৃহত্তর অংশই বিধিবহির্ভূত কাজের সাথে অত‍্যন্ত সামান‍্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কর্মরত। এঁরা সাধারনত খুবই স্বল্প মজুরিতে অস্বাস্থ‍্যকর অবস্থায় কঠোর শ্রমসাধ্য কাজে নির্যাতনের থেকে অরক্ষিত অবস্থায় নিয়োগকর্তার ঘরের মধ‍্যে কাজ করতে বাধ‍্য হয়।

ডব্লিউএফটিইউ এর সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে তারা তাদের সদস‍্য সংগঠনগুলিকে এই ক্ষেত্রের শ্রমিকদের দিকে মনোনিবেশ করে কর্মসূচী গ্রহন করতে বলেছে। ডব্লিউএফটিইউ মনে করে এদের কাজের পরিবেশ উন্নততর করার ও অতিসংক্রমণ কালীন সময়ে আপৎকালীন সহায়তার ব‍্যবস্থা সহ এদের অধিকার অর্জনের সহায়ক দাবী জানিয়ে কর্মসূচী গ্রহন করা উচিত।
সকল বিধিবহির্ভূত গৃহ পরিচর্যার পেশাভুক্ত শ্রমিকদের ইউনিয়ন গঠন অথবা বর্তমান সক্রিয় ইউনিয়নে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করা প্রয়োজন। কেবল সংগঠিত সংগ্রামই পারে সমাধানের রাস্তা দেখাতে। সুতরাং এদের ট্রেড ইউনিয়নগুলিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন, শ্রেণীমুখী লাইন নির্ভর ট্রেড ইউনিয়ন এবং জঙ্গি সংগ্রামই একমাত্র এই অবস্থার সমাধান করতে পারে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।