মিঠু করমোদক : চিন্তন নিউজ:১ লা সেপ্টেম্বর,২০২০:- কমিউনিস্ট পার্টি ও কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের সেই পুরোনো বস্তাপচা হাতিয়ার হলো “কুৎসা”। যখন দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলরা যুক্তি তর্কে বামপন্থীদের কাছে পরাস্ত হয়, তখন আজন্ম বাম বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীলরা বামপন্থীদের বিরুদ্ধে অশ্লীল গালিগালাজ, আর্থিক টোপ, মিথ্যা কুৎসা, ভীতি প্রদর্শন, চরিত্রহনন ও বাড়ি বয়ে এসে হুমকি এবং অবশেষে শারীরিক আক্রমণ চালায় এবং খুনও করে । সোস্যাল মিডিয়াতে ও নিজ নিজ এলাকায় এরকম অনেক খবর মানুষ প্রতিদিন দেখছেন। এই সবকিছুর প্রধান কারণ হলো বামপন্থীদের সাথে যুক্তি তর্কে এঁটে উঠতে না পেরে, দেদার কুৎসা চালিয়ে হিটলার ও গোয়েবলসের উত্তরসুরীরা সমাজের একাংশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেই জনগণই শ্রমজিবীদের দাবী দাওয়ার লড়াইয়ে অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন তারা বামপন্থীদের সঙ্গেই আছেন। জনগণ দ্বারা বহুপরীক্ষিত বামপন্থীদের সততা, সাহসিকতা, মানবিকতা আর চরিত্রের দৃঢ়তা প্রশ্নাতীত। বামপন্থীদের কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা নতুন নয়। এটা দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের একটি অতি পরিচিত পুরাতন খেলা। আমাদের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা আজও অটুট আছে। প্রতিক্রিয়ার শক্তির মিথ্যা কুৎসার জাল ভেদ করেই ফিনিক্স পাখীর মত বামপন্থীরা লাল ঝাণ্ডার তলায় হাজার হাজার মানুষকে সমবেত করেছে। আর এটা দেখেই প্রতিক্রিয়ার শক্তি আতঙ্কিত কাঁপুনি ধরেছে তাদের বুকে । এই লাল ঝাণ্ডা দেখে গোটা দুনিয়ার প্রতিক্রিয়াশীলরা কাঁপে। সমাজ বিজ্ঞানের নিয়মেই পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তনশীল। আদিম সাম্যবাদী সমাজ থেকে দাস সমাজ, তারপর সামন্ত প্রভুদের জামানা পেরিয়ে আজ পুঁজিবাদী সমাজের যেমন রুপান্তর ঘটেছে সেই নিয়মেই এই পুঁজিবাদী সমাজের গর্ভেই আছে তার মারণ শত্রু প্রলেতারিয়েত ও শ্রমিক শ্রেনী। উৎপাদনের উপকরণ গুলির মালিকানার জোরেই আজ চলছে অবাধ শোষণ।
আজকের পরিস্থিতি আগামীকাল থাকবে না। সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবেই। যতখুশি মিথ্যাচার করা হোক না কেন, যড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেই এগোবে শ্রমজিবীরা । ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক কৃষক ও মেহনতী মানুষের জয়যাত্রা রোধ করার শক্তি কারো নেই। আগেও আক্রমণ প্রতিহত করেই এগিয়েছে শ্রমজিবীরা আর আজকের লুম্পেন, তোলাবাজ জনবিরোধী সরকারের আক্রমণ প্রতিহত করেই মানুষ এগিয়ে যাবে। শ্রমজিবীরাই সমস্ত সৃস্টির কারিগর। তাদের দুটো হাত, মগজ, আর হৃদয় থাকতে, আর অজেয় মার্কসবাদের তত্ত্ব তাদের হাতিয়ার। কমিউনিজমের “ভূত” ওদের আজীবন তাড়া করবে। বর্তমান ভারতের শাসনক্ষমতায় একটি চরম সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী দল, ভারতের সংবিধান সহ ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোকে ধ্বংস করছে, এমনকি বিচার বিভাগও ভয়ঙ্কর চাপের মুখে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যাদের বিন্দুমাত্র অবদান তো দুরে থাক, যারা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তারাই আজ দেশপ্রেমের নামাবলী গায়ে নিয়ে বিশেষ করে বামপন্থীদের দেশদ্রোহী বলার অপচেষ্টা করছে। আন্দামান সেলুলার জেলে বিষেশত বাঙালী এবং কমিউনিস্টদের ৫৪৯ জনের নাম তালিকা থেকে মুছে দিয়েছে। আর এভাবেই তারা তাদের দেশদ্রোহী চরিত্রকে আড়াল করে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসটাই মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
তাই আগামীদিনে সমস্ত শ্রমজীবী অংশকে ঐক্যবদ্ধ করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলাই হবে প্রকৃত দেশপ্রেমিক কর্তব্য।এই আন্দোলন আর সাম্রজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলন বিচ্ছিন্ন কোনো আন্দোলন নয়। পূঁজিবাদ সঙ্কটের আবর্ত থেকে বেড়িয়ে আসার পথ খুঁজে না পেয়ে নয়া উদারনীতির আমদানি করেছে। শুধুমাত্র বহিরাবরন বদলে নিজেকে আরও গ্রহনীয়রূপে হাজির করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও তাদের অন্তর্নিহিত মুলগত শোষনের ধারা হয়েছে আরও তীব্র। সাম্রাজ্যবাদ তীক্ষ্ণ করছে মানুষের উপর আক্রমণ। সরাসরি দেশ দখল নয় দালাল সরকারের প্রতিষ্ঠা ও তার মাধ্যমে মানুষের চেতনার জগতে আধিপত্য বিস্তার। ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তি গুলো। সুতরাং ঐ সব সরকারগুলোর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা অথবা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জন জমায়েত আজকের দিনে কোন বিচ্ছিন্ন আন্দোলন নয়।