রাজনৈতিক রাজ্য

শিবির বদলের ঘৃণ্য রাজনীতি – র অবসান চায় বঙ্গবাসী


একটি বিশেষ প্রতিবেদন:চিন্তন নিউজ:২৬শে জানুয়ারি:- সমাজ এবং মানুষের সর্বাঙ্গীন উন্নতিবিধান রাজনীতির মূখ্য বিষয়। কিন্ত বর্তমান বঙ্গ রাজনীতি – র সাথে মানুষ বা সমাজের বিষয় কোনো ভাবেই যুক্ত না, বরং যে কোনো ভাবে ব্যক্তি স্বার্থ বা নিজ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করাই যেন মুখ্য উদ্দেশ্য।

সাম্প্রতিক বঙ্গ রাজনীতির হুজুগ হয়ে দাঁড়িয়েছে দুই ফুলের অদল বদল। মৌমাছির দল এবেলা জোড়া ফুলে তো ওবেলা জাতীয় ফুলে। বঙ্গ ভোট উৎসবের প্রস্তুতি পর্বে তৃণমূল বিজেপির এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়া, আর ঘর পাল্টে পুরোনো ঘরের কুৎসা ঘেঁটে নতুন ঘরের প্রশংসা নিছকই আখের গোছানোর শতরঞ্চে মেতেছে হেভিওয়েট নেতা নেত্রী থেকে মন্ত্রীরা। অবশ্যই বলা যায় রাজ্য বিজেপির সাপ্লাইয়ার তৃণমূল। এই মুখরোচক গল্প নিয়েই সকালের দৈনিকের পাতা ভর্তি, আবার সন্ধ্যার চ্যানেলে চ্যানেলে দলবদলুদের তরজা, আর সেই তরজায় কোনো সাহসী বক্তব্যের আঁচ লাগলেই বক্তাকে যার পর নাই হুমকি হেনস্থা , এটাই এখন ভোট রাজনীতি।

সংস্কৃতির পীঠস্থান, ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতির আঁতুরঘর পশ্চিম বাংলার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের মুখে ভোটরঙ্গ নিতান্তই বিরক্তিকর অসহনীয়। বাজারী মিডিয়া আজকের বাংলা – র রাজনীতিকে কু – রাজনীতির আখড়া বানিয়ে তুলতে যোগ্য সঙ্গত করে চলেছে। দলবদলের তরজার এই বাহারি প্রচারে রাজ্যের সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার দীর্ঘকালীন সমস্যা গুলি চাপা পড়ে যাচ্ছে। বর্তমান নেতা, মন্ত্রী এমন কি নিচুতলার দলীয় কর্মীদের আচার আচরণ অত্যন্ত লজ্জাজনক। জনগনের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগনের অর্থে রাজ্য চালান অথচ সেই জন সাধারণের কথা ভাবেন না। মাত্র ন বছরে রাজ্যের তৃণমূল সরকার রাজ্যবাসীর মাথায় উন্নয়নের নামে বিপুল পরিমাণ ধারের বোঝা চাপিয়েছে। সাধারণ ভাবে পরিকাঠামো উন্নতি বলতে রাস্তাঘাট, পানীয় জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রেশন ব্যবস্থা, কৃষি উৎপাদন, অসহায় মানুষের সহায়তা কল্পে অর্থ ব্যয় সরকারের কর্তব্য। কিন্ত বাস্তবে এর করুন চিত্র চোখে পড়ছে। বেপরোয়া সরকারী অর্থ লুঠ, ক্লাব ,পুরোহিত, ইমাম তোষণ, মাটি উৎসব, পিঠে উৎসব এইসবই হচ্ছে এই সরকারের উন্নয়ন।

এই ন’ বছরে কোনও নতুন শিল্প কারখানা তৈরি তো হয় ই নি, যা ছিল তাও তোলাবাজ দের অত্যাচারে বন্ধ, নয় প্রায় তৈরি হওয়া কারখানা গুটিয়ে রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।গ্রামের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুঠ চলছে। দরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়েছে রুজির টানে নিজের ঘর ছেড়ে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে। স্কুল সার্ভিস টেট, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লার্কশিপ পরীক্ষা ও বন্ধ, এমন কি পাবলিক সার্ভিস কমিশনকেও অকেজো করে রাখা হয়েছে। বর্তমান রাজ্যে সরকারী আধা সরকারি মিলিয়ে বেকারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষ।

বাম আমলে যে পশ্চিমবঙ্গ ছিল শীর্ষ স্থানে বর্তমানে তা পিছনের সারিতে। এ রাজ্যে শ্রমিকদের মজুরি সব থেকে কম। কৃষকের আয় বেড়েছে বলে দাবী করলেও কেন্দ্রের মোদি সরকারের ছ’ বছর আগে ২০১৪ সালেই পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার আইন করে কৃষকের জমির থেকেই ফসল বেসরকারি সংস্থা কিনে নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিয়েছে। কৃষিপণ্যের বাজার দখল করেছে বেসরকারি সংস্থা এবং কো অপারেটিভ সোসাইটির গুলি। ক্ষমতায় এসেই তৃণমূল সরকার পূর্বের কৃষি সমবায় বাতিল করে অর্থবান ক্ষমতাশালী দালালদের নিয়ন্ত্রণে বাজার হস্তান্তর করেছে। এক কথায় মাত্র ন’ বছরেই সমস্ত প্রত্যাশার ফানুস উড়ে গেছে। কি হওয়ার কথা দিয়ে কি হয়েছে সে তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ তম করে লাভ নাই। রাজ্যবাসী বিকল্প খুঁজছে। বামপন্থীদের হাত ধরে রাজ্যবাসী আবার বিকল্পের দাবিতে পথে নেমেছে। মানুষের জীবনের তাগিদে এমন এক সরকার চায়, যে সরকারের লক্ষ্য হবে, কর্মসংস্থান, কাজের বদলে উপযুক্ত ভাতা, বছরে বছরে টেট, এস, এস, সি, পি এস সি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ, ছোট মাঝারি শিল্পে সরকারের সহায়তা।

বঙ্গবাসী ২০২১ এর নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা রাখতে চায় – রেগা প্রকল্পে ১০০ নয় ২০০ দিনের কাজ, খাদ্য নিরাপত্তা ও সুষম বন্টন, নিরাপদ পানীয় জল, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত যথাযথ সার্বজনীন শিক্ষা, বিশেষ ভাবে করোনা অতিমারী অতিক্রম করে বঙ্গ বাসী চায় বিনামূল্যে সরকারের দায়িত্বে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা। সাধারণ মানুষের জন্য স্বল্প মূল্যে বিদ্যুত সরবরাহ, রুগ্ন শিল্পের পুনরুজ্জীবন, চা বাগান চট শিল্প পাট শিল্পে বিশেষ প্যাকেজ, বনাঞ্চল সংরক্ষণ, বে আইনী বলি এবং পাথর খাদান বন্ধ, বড় শহরে বিদ্যুত চালিত যানবাহন সহ জনজীবনের সুষম যাপন। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো শহর বা গ্রামের মহিলাদের সুরক্ষা, শিশু সুরক্ষা এমন কি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের ও বিশেষ সুবিধা প্রদান। কর্ম ক্ষেত্র দুর্ঘটনা জনিত সহায়তা, অসংগঠিত শ্রমিকদের বার্ধক্য কালীন সুরক্ষার। সর্বপরি পঞ্চায়েত থেকে বিধানসভা – সর্ব স্তরে অবাধ শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। নাগরিকদের ভোটাধিকারের সফল প্রয়োগ। গুন্ডারাজ তোলাবাজ মুক্ত এক সুস্থ সুন্দর সমৃদ্ধ পশ্চিমবাংলা ফিরে পেতে বঙ্গবাসী তৃণমূল বিজেপির প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির বিকল্প এক সুস্থ গনতন্ত্র কামনা করে। বর্তমান অশান্ত কদর্য দল বদলের রাজনীতির বিপরীতে বাঙলার মানুষ প্রকৃত জনসেবক, জনদরদী, জনগনের বন্ধু, মানুষের সাথে, মানুষের কাজে, মানুষের পাশে থাকবে এমন এক প্রগতিশীল সরকার পেতে চায়। এবারের নির্বাচনে এটাই বঙ্গবাসীর প্রত্যাশা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।