সূপর্ণা রায়:চিন্তন নিউজ:৭ই জানুয়ারি:–গোদলপাড়া জুটমিলের শ্রমিকের মার কান্না আগুন হয়ে ঝরবে আগামী ৮ ই জানুয়ারি_____চন্দননগরের গোদলপাড়া জুটমিলের দরজা বন্ধ আজ ১৯ মাস।। অভাবের তাড়নায় কালিঝুলি মাখা কোোয়ার্টারের সিলিঙ ফ্যান থেকে ঝুলছে একদা জুটমিলের শ্রমিক সুরজ।।যে ছেলের সাথে সন্ধ্যা বেলায় মার দেখা হয়েছে জীবন্ত অবস্থায় আর সন্ধ্যা সাতটার সময় “”নেই”” হয়ে গেল জলজ্যান্ত ছেলে।।
অভিশপ্ত ১২ই ডিসেম্বর এর কথা ভুলতে পারেননি সুরজ এর মা মাধুরী চৌধুরী।। কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন ১৯ মাস ধরে বন্ধ জুটমিল।। জানান অভাব আর সহ্য করতে পারল না ২৩ বছরের ছেলেটা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করল।।। এই মিলে কাজ করত সুরজের বাবা। তিনি ও কিছুদিন আগে চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন।। মাধুরী দেবী জানান বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সুরজ খুব মনমরা হয়ে থাকতো।।। মাধুরী দেবীর আরও দুটো ছেলে আছে, মাধুরী দেবী নিজে আর সুরজ _এতজনের খাওয়া দাওয়া কি করে চলবে এই নিয়ে সুরজের চিন্তার শেষ ছিল না।।টাকার প্রয়োজনে পূরণে কাজ খুঁজে বেড়াত। । ফুরনে অনেকসময় মেঘনা জুটমিলে বালি তোলার কাজ করত।। মাধুরী দেবী জানান গত ১২ ই ডিসেম্বর দুপুরে মার সাথে কথা বার্তা বলে দুটো ভাত খেল ডাল,ভাজি দিয়ে আর তারপর সন্ধ্যায় ছেলে কে চা দিতে গিয়ে দেখল ছেলে ঝুলছে সিলিঙ ফ্যান থেকে।।।
গত ১৯ মাস বন্ধ গোদলপাড়া জুটমিল।।।। এই কয় মাসে অভাব এর তাড়নায় ৪ জন শ্রমিক আত্মহত্যা করেছে আর বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন ১৪ জন।।দালাল মিডিয়া এদের নিয়ে কোন খবর করে না, ঘন্টা খানেক হয় না, এদের খোঁজ কেউ রাখে না।এই মিলের শ্রমিক মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে না পারায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।।। নন্দকিশোর দাস ও গগন ব্যানার্জি ও অভাব এর তাড়নায় আত্মহত্যা করেন।।।
মিল বন্ধ হয়ে থাকলে কোন শ্রমিক যদি আত্মহত্যা করেন বা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তবে সেই পরিবারের সদস্যরা কোন ক্ষতিপূরণ পাননা।।গ্রাচুইটির টাকা পাননি আত্মহত্যা করেছে বা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন পরিবার গুলো।।। আরও আছে অমানবিককতার গল্প৪২ বছরের দীনেশ তার অসহ্য পেটে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে গেছিলেন বেলুড় ইএস আই হসপিটালে।।। চিকিৎসা মেলেনি।। ডাক্তার বাবুর পায়ে ধরে বলেছেন চিকিৎসা করতে।।। কিন্তু মহান ডাক্তার বাবু জানান ৬ মাস মিল বন্ধ তাই চিকিৎসা করা যাবে না।। হতভাগ্য দীনেশ মারা যায়।।। দীনেশের স্ত্রী জানান প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দেনা করে সবরকম টেস্ট করানো হয় কিন্তু ১৪ ই ডিসেম্বর দীনেশ মারা যায়।। মিলের কোয়ার্টার এ ঘর পাননি দীনেশ এর পরিবার।। তিনটি শিশু নিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকেন আর ক্যাটারিং এর সবজি কাটার কাজ করেন। কিন্তু কিছুতেই চলে না সংসার।। ১২০০/- ঘরভাড়া ,৬০০/- ইলেকট্রিক বিল দিতে হয়।। বাচ্চা গুলোকে খেতে দিতে পারেন না।। ওরা ঘুরে ঘুরে এর ,ওর বাড়ী থেকে চেয়েচিন্তে খায়।। মিলের পাশে একটা আইসিডিএস স্কুল আছে।। বাচ্চা দের সেখানে এবিসিডি আর অঙ্ক এর গিনতি শেখে।।
ক্লাস ওয়ান এর একটি বাচ্চা মিনতিঠোট ফুলিয়ে বলল স্কুলে একদিন মোটে ডিম দেয় আর বাকি সব দিন শুধু সবজি।।১৯ মাস মিল বন্ধ হয়ে গেছে তাই কোয়ার্টার এর জল বন্ধ, বিদ্যুৎ থাকে না বেশী র ভাগ সময়েআর গ্রাচুইটির টাকা সে তো পাওয়া যায় নি।।গোদলপাড়া জুটমিলের মালিক সঞ্জয় কনোরিয়াতার আরেক টা মিল শ্রীরামপুর ইন্ডিয়া জুট মিল_সেটাও বন্ধ ১৯ মাস।। ধুঁকছে কানোরিয়া দের হেস্টিংস মিল।। লোকসভা ভোটের সময় ১০ দিনের জন্য মিল খুলেছিল আবার যে কে সেই বন্ধ।।। মালিক বোঝা হয়ে গেছে মমতা ব্যানার্জি সরকার এদের পাশে। শিল্প আনতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি র সাথে জার্মানি গিয়েছিল সঞ্জয়।। অথচ মিল বন্ধ ই রয়ে গেছে।। সিআইটিইউ হুগলি জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য রতন ব্যানার্জি জানান গলায় ফাঁস দেওয়া সুরজ এর মা, বিশ্বজিৎ এর স্ত্রী , বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন দীনেশ এর পরিবার সক্রিয় ভূমিকা নেবেন আগামী ৮ ই জানুয়ারি দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট এর সমর্থনে।