চিন্তন নিউজ: ১লা নভেম্বর:- ইতিহাস কখনো পুরনো হয়না। আর তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সত্য যথার্থ স্রষ্টার হাতে পড়লে মণিমানিক্য হয়ে ওঠে। কবি নিবারণ পন্ডিতের ৩৬ তম প্রয়াণ দিবসে এই কথাগুলিই বলতে হয়।
১৯৪৭সালে স্বাধীনতার পর কয়েক লক্ষ মানুষ পশ্চিমবঙ্গ অথবা পূর্ব পাকিস্তানের সীমানা পার হতে বাধ্য হয়েছিলেন উদ্বাস্তু হয়ে। তাদেরই একজন ছিলেন দুই বাংলার শ্রদ্ধেয় লোক কবি নিবারণ পন্ডিত। ১৯৫০ সালে তিনি পূর্ব বঙ্গ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে আসেন।
ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ করার সময় সুখের যে খোয়াব দেখানো হয়েছিল তা অল্প সময়েই কেটে যায়। সবাই দেখলেন দু’টো দেশ হ’ল কিন্তু গরীব মানুষের পেটের কোন সুরাহা হ’লনা। এবার কবি বললেন হিন্দুস্তান পাকিস্তান যখন হ’ল একটা পেটস্থান হোকনা যেখানে মানুষ খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে। অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় মার্কসবাদ তথা শ্রেণীসংগ্রামের মূল কথাই ফুটে উঠেছে তাঁর ‘পেটের কথা কেউ তো বলেনা’ গানটিতে। এক অসামান্য উচ্চতায় উত্তীর্ণ হয়েছে গানটি। এই কারনেই তিয়াত্তর বছর পরেও গানটি আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
ব্রিটিশ ভারতে ময়মনসিংহে ১৯১২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। দশ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর প্রথাগত শিক্ষার ছেদ পরে। তবে বাল্যকাল থেকেই গ্রাম্য গান ও কবিতা লেখায় পারদর্শী ছিলেন। নিবারণ পন্ডিতের আত্মকথন থেকে জানা যায় প্রথম দিকে তার লেখনি থেকে ভক্তি রসের গান তৈরি হলেও পরবর্তী কালে সমাজে ঘটে যাওয়া অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের কথাই তার লেখায় প্রকাশিত হয়। যোগাযোগ তৈরি হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে। ১৯৪৩ সালের মে মাসে মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম কংগ্রেস এবং আইপিটিএ’র প্রথম সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫০ সালে পুলিশের অমানবিক অত্যাচারের ফলে তিনি ভারতে চলে আসেন।
১৯৮৪ সালের আজকের দিনে দীর্ঘ রোগ ভোগের পর কোচবিহারে নিজগৃহে নিবারণের জীবনাবসান হয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র সাথে যুক্ত ছিলেন। তার রচিত প্রায় তিনশত গান আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।