কাকলি চ্যাটার্জি:চিন্তন নিউজ: ১৭ই এপ্রিল:-লকডাউনের তিনসপ্তাহ অতিক্রান্ত, দ্বিতীয়বারের জন্য মেয়াদ বৃদ্ধি হ’ল কিন্তু পরিযায়ী মানুষের কথা উপেক্ষিত থাকলো। ১৫ই এপ্রিল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হবে—বুকিং শুরু অনেক শ্রমিক পরিবার এবং চিকিৎসার কারণে ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, মুম্বাই এ আটকে থাকা অসংখ্য রোগীও পরিজন।
নববর্ষের ভাষণের সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কা বেড়েছে থানে, বান্দ্রা, দিল্লি মহানগরীর পথে প্রান্তরে আটকে থাকা লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের, রোগীর পরিবারের। না প্রধানমন্ত্রী না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ভাবার ফুরসত নেই কারোর। একজন আটকে থাকা শ্রমিকদের দায় সেই রাজ্যের প্রশাসনের ওপর ন্যস্ত করেই খালাস আর অন্যজন তো রাজ্যে কোভিড১৯ এ আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর তথ্য লোপাট করতেই সদাব্যস্ত।
ভিনরাজ্যে আটকে থাকা মানুষের একটাই দাবি তাঁদের নিজ নিজ রাজ্যে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক সরকার। বান্দ্রা স্টেশনে বাড়ি ফেরার দাবিতে উদ্বেলিত জনতাকে পুলিশের নির্মম লাঠিচার্জ আমরা দেখেছি, অর্ধাহারে অনাহারে থাকা মানষগুলো পাশে পাচ্ছেন না কোনো সরকারকেই। রুটিরুজি হারানোর তীব্র উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তায় প্রহর গুনছেন বাড়ি ফেরার। এদের সংখ্যা সব মিলিয়ে প্রায় দশ কোটি। পরিবার পরিজন,মাথায় বোঝা নিয়ে ক্ষুধার্ত শিশুর হাত ধরে শুরু হয়েছে আর এক অনাকাঙ্ক্ষিত লংমার্চ। কেউ ফিরতে পারছেন কেউ বা প্রাণ হারাচ্ছেন, লুটিয়ে পড়ছেন রাস্তায়। প্রশাসন তাঁদের ওপর জীবাণুনাশক স্প্রে করেছেন কিন্তু থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি।পাশবিক সরকারের অমানবিক কার্যকলাপ!
উত্তর চব্বিশ পরগনার একদল শ্রমিক বান্দ্রার স্টীল ফ্যাক্টরি তে কাজ করতেন। সেখানকার স্থানীয় সহকর্মীদের জোগাড় করে দেওয়া পঞ্চাশ টি সাইকেল নিয়ে প্রতিটি সাইকেলে দুজন করে সওয়ারি হয়ে ২০২০কিমি পথ অতিক্রম করে ঘরে ফেরার লক্ষ্যে পথচলা শুরু করেছেন।
বিত্তশালী ভি আই পি মানুষদের হাত ধরে কোভিড১৯ রোগের আবির্ভাব। গত ফেব্রুয়ারি থেকেই যদি হু এর সাবধানবাণী মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যথোচিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতেন তাহলে হয়তো আজকে এই দিন আমাদের দেখতে হতোনা। এই প্রান্তিক মানুষগুলো প্রতি পদে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার।শাসক দলগুলো তাঁদের প্রতি বিন্দুমাত্র যত্নবান কোনোদিন ও হয়নি। রাষ্ট্রের গৃহীত নীতি প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে নয়, তাঁদের শোষণের লক্ষ্যে। আগামীর লড়াই হোক এই ভুখা মানুষগুলোর অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার। ভবিষ্যতে এই ভুখা মানুষের লংমার্চ বাধ্য করবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলোকে তাদের নীতির অভিমুখ পরিবর্তন করতে। কোভিড ১৯ সূচনা করলো অন্য এক লড়াইয়ের।