কিংশুক ভট্টাচার্য: বাঁকুড়া চিন্তন নিউজ: ৩০ জুন :– বিশ্বের সাথে দেশজুড়ে নেমে এসেছে এক ভয়াবহ বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ের সময় দেশের নব্বই ভাগ মানুষ যখন নির্বাচিত সরকারের দক্ষতা ও সহমর্মী উদ্যোগের আশা করছেন। যখন দৈনন্দিন জীবন নির্বাহের জন্য দেশের সরকারের সহযোগিতার দাবী করছেন। তখন সরকার উন্মত্তের মতো একের পর এক বোঝা মানুষের উপর চাপিয়ে যাচ্ছে। তাদের গৃহীত কর্পোরেট দুনিয়ার স্বার্থবাহী নীতির বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ যাতে তীব্র ও তীক্ষ্ণ হতে না পারে তাই কখনো যুদ্ধের অজুহাত কখনো অবৈজ্ঞানিক কুসংস্কারের পৃষ্ঠপোষকতা করে জনমতকে বিপথগামী করার চেষ্টা করছে। এই সময় বাম পন্থী দলগুলি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে একত্রিত করে একাধারে, সমস্ত জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজ করে চলেছেন। একইসাথে এলাকাগত সমস্যা ও দাবী নিয়েও উপযুক্ত ভূমিকা গ্রহন করছেন। পাশাপাশি সংক্রমণ বৃদ্ধির সময় শুরু হওয়া আনলক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও নির্বিষকরনের কাজ করে চলেছেন। আবার মানুষের সাংস্কৃতিক মননশীলতার বিকাশ ও লড়াইয়ে র ঐতিহ্যর চর্চায় উৎসাহের সাথে সক্রিয়। মঙ্গলবার বাঁকুড়া জেলার মানুষ বামেদের সারাদিন ধরে এই ধরনের সব কটি ভূমিকায় দেখতে পেলো।
সিপিআইএম বাঁকুড়া শহরে পশ্চিম এরিয়া কমিটির উদ্যোগে সম্পাদক তথা জেলা কমিটির সদস্য অশোক ব্যানার্জি ও মহিলা নেত্রী তথা জেলা কমিটির সদস্যা শিউলী মিদ্যার নেতৃত্বে বাইশ ও চব্বিশ নম্বর ওয়ার্ডের গরীব পাড়াগুলিতে প্রচুর সংখ্যায় কর্মীদের উপস্থিতিতে নির্বিষকরন ও বিনামূল্যে মাস্ক বিতরন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সচেতনতার প্রচার কর্মসূচী পালন করা হয়।
একই ধরনের কর্মসূচী পালন করা হয় গঙ্গজল ঘাটির দুটি পঞ্চায়েত এলাকার রণবহাল, কেশিয়ারা, তলঝিটকা ইত্যাদি গ্রামে। এই কর্মসূচী তে সক্রিয় ভাবে নেতৃত্ব দিতে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক তথা সিপিআইএম জেলা কমিটির সদস্য সুজিত চক্রবর্তী।
পাশাপাশি বড়জোড়া থেকে পখন্না যাবার যে রাস্তা ডিভিসির একটা বড় ক্যানেলের ব্রীজ দিয়ে প্রায় আট দশটি গ্রামের সংযোগকারী রাস্তা। বাম আমলে মানুষের সুবিধার জন্য এই রাস্তা পাকা করে যোগাযোগের ব্যাবস্থাকে উন্নত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়। এই রাস্তা দিয়ে বহু মানুষ বড়জোড়ায় দোকান বাজার সহ থানা ও হাসপাতালে আসা যাওয়া করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ ঐ রাস্তা কোনো রকম সংস্কার না হওয়ায় ক্রমশ ব্যাবহারের অনুপোযুক্ত হয়ে পরেছে। ব্রীজটিও যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ার অবস্থায় পৌছে গিয়েছে বারবার ব্লক প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও ফল না হওয়ায় সিপিআইএম এরিয়া কমিটির উদ্যোগে গণস্বাক্ষরিত দাবীপত্র নিয়ে সিপিআইএম জেলা কমিটি সদস্য সুজয় চৌধুরীর নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল ব্লক আধিকারিকের সাথে দেখা করে আলোচনা করেন এবং অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের দাবী করেন। সুজয় চৌধুরী বলেছেন যদি আগামীদিনে অতি সত্বর কাজ শুরু না হয় তবে এলাকার মানুষ আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
আবার জেলাজুড়ে বাম দলগুলি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে পালন করে হুলদিবসের কর্মসূচী।
আজ ছাতনা- শুশুনিয়া মেন রাস্তায় হাউসির মোড়ে একশতছেষট্টি তম হুল দিবস পালিত হলো আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ এর পক্ষ থেকে। সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করে সিধু- কানুর মুরতিতে মালা দেওয়ার পর আজকের দিনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন সংগঠনের জেলা নেতা রামনিবাস বাস্কে এআইসিসিটি ইউ জেলা নেতা ফারহান হোসেন খান এবং এআইএআরএলএ জেলা সভাপতি বাবলু ব্যানার্জি। তারা বলেন আজ থেকে একশতপঁয়ষট্টি বছর আগে বেনিয়া ঈষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর রাজের বিরুদ্ধে এবং তাদের দোষর জমিদার দের কাছ থেকে নিজেদের জমি রক্ষা করতে সিধু- কানুর নেতৃত্বে হাজার হাজার আদিবাসী রাস্তায় নেমেছিল সাধারণ মুসলমান- দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ কে সাথে নিয়ে। তেমনি আজকে ও সাধারণ মানুষ কে ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাস্তায় নামাতে হবে দেশ বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত কারি বেনিয়া বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তবেই প্রকৃতপক্ষে সিধু- কানুর লড়াই কে মর্যাদা দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো হয় তফশীলি জাতি ও উপজাতিদের সংরক্ষণের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। বনের জমি থেকে আদিবাসী ও বনবাসীদের উৎখাত বন্ধ করে তাদের বনের জমির পাট্টা দাও। চাষের জমি বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া ও রেশন বন্ধ করার কৃষি অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে এই সব দাবি সহ শ্রম আইন সংশোধন করার বিরুদ্ধে আগামী শুক্রবার তেশরা জুলাই কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষক সংগঠন গুলির যৌথ আহ্বানে সারা দেশের সাথে ছাতনার বারবাকড়ায় সকাল নয় টায় অবস্থান কর্মসূচি তে সকলকে সামিল হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সভা থেকে।
বাঁকুড়া একনম্বর ব্লকের রাঙামেট্যা গ্রামে উৎযাপিত হলো হুল দিবস। পঃবঃআদিবাসী অধিকার মঞ্চ ও কালপাথর আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমির যৌথ উদ্যোগে কালপাথর গ্রাম পঞ্চায়তের রাঙ্গামেট্যা গ্রামে প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে আজ উৎযাপিত হলো হুল দিবস। তীর,ধনুক, টাঙ্গি,বল্লম, কাড়া,নাকড়া,মাদল,ধামসা নিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর চিরাচরিত পোশাকে নাচ গানের মাধ্যমে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতারা আজ স্মরণ করলেন সিধু, কানহু,চাঁদ ও ভৈরব সহ সাঁওতাল বিদ্রোহের সমস্ত শহীদদের।
“সাতজম গিরে” বা পল্লবীত শাল ডাল(যা ছিলো বিদ্রোহ আহ্বানের প্রতীক) উত্তোলন ও সিধু-কানহু’র প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রাঙামেট্যা গ্রামের মোড়ল গোপীনাথ সোরেন।
আদিবাসী ছাত্রী ও কিশোরীদের উদ্বোধনী সঙ্গীত ও কালপাথর আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমির শিল্পীদের বাঁশির সুরের মূর্ছনার আবহেই গোপীনাথ সোরেনের সভাপতিত্বে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। সাঁওতাল বিদ্রোহের বিভিন্ন দিক ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখেন লখিন্দর মুর্মু, অধ্যাপক প্রতীপ মুখার্জী, পঃবঃ আদিবাসী ও লোকসংস্কৃতি সংঘের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক বিনোদ বিহারী বাস্কে, পঃবঃ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের বাঁকুড়া জেলার সহ-সম্পাদক পরেশ হাঁসদা, কৃষক নেতা নকুল মাহাতো প্রমুখ। সভা থেকে সাঁওতাল বিদ্রোহের বীর শহীদদের অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার তথা শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়।
এছাড়াও গঙ্গাজলঘাটি, রাইপুর, খাতড়া, রাণীবাধ, সহ জেলার প্রায় সর্বত্র সিপিআইএম তথা বাম কর্মীদের উদ্যোগে যথাযথ শ্রদ্ধা ও উৎসাহের সাথে হুল দিবসের কর্মসূচী পালন করাহয়। কোথাও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কোথাও এই দিনটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে সভা আবার কোথাওবা আজকের দিনে এই হুল দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে সভা অনুষ্ঠিত হয়।
একইসাথে বেশ বহুবছর যাবৎ বাঁকুড়ার মানুষের ভুলে যাওয়া স্মৃতিকে সতেজ করে দিয়ে বড়জোড়ায় বাজারের উপর দিনের বেলা সকাল দশটা চল্লিশ মিনিটে ঘটে গিয়েছে আগ্নেয় অস্ত্র নিয়ে দুঃসাহসিক ডাকাতি।সবধরনের দুস্কর্মকে প্রশয় দেওয়া ও লালন কারি রাজ্যের শাসক দল তোলাবাজি কাটমানি সহ যেকোন ভাবে অর্থ সংগ্রহের নেশায় এতোটাই উন্মত্ত যে সব ধরনের সমাজবিরোধী দের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে ঐ দলটি। প্রশ্রয় পাছে লূঠেরারা। পুলিশ সমাজবিরোধী দের নিয়ন্ত্রনে অক্ষম কেননা প্রায় সব সমাজবিরোধী ই শাসক দলের কোননা কোন নেতার আশ্রিত বা ক্ষেত্র বিশেষে নিজেই নেতা। পাশাপাশি কেন্দ্র সরকারের নীতি ব্যাপক অংশের মানুষকে কর্মহীন করে যে কোনো উপায়ে বেঁচে থাকতে গিয়ে বৈধ অবৈধ যে কোনো পথে পা বাড়াতে বাধ্য করছে। আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার ও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে নিরাপত্তাহীনতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খবরে প্রকাশ মঙ্গলবার বেলা দশটা চল্লিশ নাগাদ বড়জোড়া বাজার লাগোয়া মালিয়াড়া রোডে রাস্তার পাশে সবিতা প্রামানিকের (বয়স আনুমানিক ষাট বৎসর) বাড়িতে দুজন ইলেকট্রিক রিডিং নিতে আসার নাম করে বাড়িতে ঢুকে পিস্তল দেখিয়ে বেঁধে চার/পাঁচ ভরি সোনার গয়না ও দশ হাজার টাকা নিয়ে চম্পট দেয়। পরে পাশের দোকানদার এসে দরজা খুলে বাঁধন খুলে দেয় ও পুলিশ আসে। প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে এই কাজ চলে। পূর্ণিমা দেবীর ছেলের একটি ছোটো দর্জির দোকান আছে। তিনি সেখানে ছিলেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। আইসি বিশ্বজিৎ মুখার্জী ঘটনাস্থলে সরেজমিনে উপস্থিত ছিলেন।