কিংশুক ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:বাঁকুড়া ২৯জুন:- একদিকে যখন সারা দেশ জুড়ে কেন্দ্র সরকারের চূড়ান্ত জনবিরোধী দেশবিরোধী কর্পোরেট তোষণের বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদকে সংগঠিত করার কাজের অংশ হিসেবে জেলাব্যাপী লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচী সংগঠিত করে চলেছে সিপিআইএম এর নেতৃত্বে জেলার বাম দলগুলি। সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছে গণতান্ত্রিক শক্তি জাতীয় কংগ্রেস। ঠিক সেই সময়েই পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে বাম রাজনৈতিক দলগুলি ও তাদের গণসংগঠনগুলি লাগাতারভাবে মানবিক কর্মসূচী গ্রহন করে চলেছে। লকডাউন পর্যায়ের একদম প্রথম থেকেই বিপর্যস্ত গরীব মানুষের হাতে জীবন যাপনের নূন্যতম সামগ্রী সাধ্যমত পৌছে দেবার নিরলস প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছে। তেমনি আনলক পর্যায়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ জনজীবনে র স্বার্থে সামর্থানুযায়ি চলছে বিনামূল্যে মাস্ক বিলি, এলাকা নির্বিষকরন, সহ সচেতনতার প্রচার মূলক কর্মসূচী। নাগরিক সমাজের চোখে পরছে সরকারের যে দায়িত্ব নেওয়ার কথা তারা সেই দায়িত্ব পালনতো করছেই না উপরন্তু মানুষের চূড়ান্ত বিপর্যস্ত জনগণের উপর উন্মত্তের মতো জনস্বার্থ বিরোধী নীতির বোঝা চাপিয়ে চলেছে। উল্টোদিকে সিপিআইএম সহ বাম দল ও সংগঠনগুলি গণতান্ত্রিক শক্তি কংগ্রেসকে সাথে নিয়ে লাগাতার প্রতিবাদের তীব্রতা বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে ঐ আক্রমণ প্রতিরোধের পর্যায়ে পৌছানর প্রচেষ্টা করছেন। পাশাপাশি মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ও সচেতন করে তোলার কাজও করছে সমান গুরুত্ব সহকারে নিজেদের সংক্রামিত হবার সম্ভাবনার ভয়কে তুচ্ছ্য করে।
একই দৃশ্যপট আজও লক্ষ্য করা গিয়েছে জেলা জুড়ে। দেশের বারোটি বামদল ও কংগ্রেসের যৌথ সভা থেকে আহ্বান মতো আজ রাজ্য তথা সারা দেশজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচী র অংশ হিসেবে বাঁকুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র মাচানতলায় সোমবার সকাল নটায় বাম দলগুলি ও কংগ্রেস সংগঠন করে বিক্ষোভ সভা।
দাবীগুলি ইতিপূর্বেই ঘোষিত তেশরা জুলাই শুক্রবারের প্রতিবাদ কর্মসূচির বারো দফা দাবী সহ রাজ্যে বিদ্যুতের অস্বভাবিক বর্ধিত মূল্য হ্রাস সহ আগামী ছয়মাস সব গ্রাহককে দুইশত ইউনিট বিদ্যুৎ প্রতি মাসে বিনামূল্যে সরবরাহ করা।দুই পেট্রোল ও ডিজেলের উপর থেকে সমস্ত ট্যাক্স প্রত্যাহার করতে হবে। পেট্রোপণ্যকে জিএসটি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
শহরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের যুবকরা যুব ফেডারেশনের লাল তারা খচিত সাদা পতাকা কাঁধে দুটি আলাদা মিছিল করে এই সভায় অংশ গ্রহন করে।
সভা পরিচালনা করেন সিপিআইএম এর রাজ কমিটির সদস্য অভয় মুখার্জি। বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিআইটিইউ রাজ নেতা কিঙ্কর পোষাক, সিপিআই জেলা নেতা ভাস্কর সিন্হা, আরএসপির জেলা সম্পাদক গঙ্গা গোস্বামী, জাতীয় কংগ্রেসের জেলা নেতা অভিষেক বিশ্বাস সারা ভারত ফরওয়ার্ডব্লকের জেলা সম্পাদক অনাথ মল্ল, সিপিআইএমএল লিবারেশন এর জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জি।এবং শেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয়পাত্র।
বক্তারা ব্যাখ্যা করে দেখান যখন মোদী সরকার পেট্রোলিয়ম বিশ্ব বাজারে থেকে কিনছে তাতে প্রক্রিয়াকরণের পরে চূড়ান্ত খরচ পরছ অনধিক ত্রিশটাকা প্রতি লিটার, সেই পেট্রোল ডিজেল দেশের বাজারে কেন্দ্র, রাজ্যের কর সহ আশি টাকার উর্ধে বিক্রি হচ্ছে। অথচ সর্বোচ্চ আঠাশ শতাংশ জিএসটি নিয়ে বাজারে এলে চল্লিশ টাকা প্রতি লিটারের বেশী দামে মানুষকে কিনতে হবে না।
একইভাবে বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্যের প্রশ্নেও তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন সারা দেশের সর্বোচ্চ মূল্যের তিনগুন বেশী দামে এই রাজ্য মানুষকে বিদ্যুৎ কিনতে হয়। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবী করে শ্রী পাত্র বলেন “রাজ্য সরকারকে আগামী ছয়মাস গ্রাহক পিছু মাসে দুইশত ইউনিট বিনামূল্যে সরবরাহের দাবী ন্যায্য দাবী। এই আদায়ের স্বার্থে আগামী শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ দিবসের দিন আমরা শহরে প্রধান যোগযোগের পথ সকাল থেকে অবরোধ করবো। দেখা যাক পুলিশ প্রশাসন আমাদের সাথে কি ধরনের আচরন করেন”।
পাশাপাশি সিমলাপাল ব্লকেও ব্যাপক অংশের মহিলা জমায়েতের মধ্যদিয়ে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি বিডিও র নিকট দশ দফা দাবী সনদ জমা করেন।
*প্রত্যেককে আগামী ছয় মাস দশ কেজি করে খাদ্যশস্য দিতে হবে।
*আয়করের আওতার বাইরে প্রত্যেক পরিবারকে মাসে নগদ সাত হাজার পাঁচশত টাকা দিতে হবে।
*এমএনআরইজিএ তে নূন্যতম দুইশত দিন কাজ দিতে হবে ও মজুরি বাড়াতে হবে।শহরে গরিবদের জন্য কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্পের সুবিধা বাড়াতে হবে।
*দেশের সম্পদ লুট বন্ধ কর। – রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ক্ষেত্রের বেসরকারীকরণ চলবে না।
- মহিলাদের প্রতি হিংসা বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
- করোনা সংক্রমণ রোধের প্রশ্নে সরকারকে উপযুক্ত ভূমিকা নিতে হবে।
- তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থা করতে হবে।
- কোয়ারন্টাইন কেন্দ্র গুলির অব্যবস্থা দূর করতে হবে ও সরকারকে কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র বাড়াতে হবে।
- প্রসূতি মায়ের স্বাস্থ্য ও টীকাকরণে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- আমফান কে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করতে হবে।
এই দাবীপত্র জমা দেবার আগে একটি মহিলা জমায়েত ও মিছিল হয়। জমায়েতে বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদিকা মণ্ডলীর সদস্য ও বাঁকুড়া জেলার সভানেত্রী সুদীপা ব্যানার্জি ,জেলা সম্পাদিকা শিউলি মিদ্দা, সিমলাপাল ব্লকের নেতৃত্ব পুতুল মুর্মু।
অপরদিকে বামসংগঠনগুলি শুধু দাবী আদায়ের আন্দোলন নয় এই সময়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন কাজ নির্বিষকরণ যা সরকারের দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালনেও অগ্রণী ভূমিকা গ্রহন করছে। সোমবারআজ সকালে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই ওএবিপিটিএর বড়জোড়া আঞ্চলিক কমিটির উদ্যোগে মালিয়াড়া গ্রামে নির্বিষকরন করা হলো। পরে এবিপিটিএ র উদ্যোগে ছাত্র যুবদের সহায়তায় এক শত সত্তর জন কে কিছু খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হলো। এই কর্মসূচী চলাকালীন বড়জোড়ার সিপিআইএম এরিয়া সম্পাদক তথা জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী ও বিধায়ক তথা সিপিআইএম জেলা কমিটির সদস্য পুরা সময় সক্রিয় সহযোগিতা করেন ও ছাত্র যুব ও শিক্ষক সংগঠনকে অভিনন্দিত করেন।