দেবু রায়, চিন্তন নিউজ, ২১ ফেব্রুয়ারি: বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতে বিভিন্ন কল-কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং শ্রমিক শ্রেনীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। আর্থিক দুরবস্থা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার কারনে শ্রমিক শ্রেনীর জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। ঔপনিবেশিক শাসনে এই শ্রমিকশ্রেনী জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে সামিল হয়। কিন্তু কিছু কাল পরে ভারতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ঘটলে, বামপন্থীরা শ্রমিকদের সংগঠিত করে, তাঁদের নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে সাধারন মানুষের সাথে শ্রমিকরাও সামিল হন। সেই সময় প্রেমতোষ বসু , অপূর্ব কুমার ঘোষ, অশ্বিনী কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখরা, শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন কল কারখানায় ধর্মঘট ও হরতাল পালন করেন। সেই সময় ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ তীব্র দমন পীড়ন নামিয়ে আনে। এরপর গন আন্দোলন কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে শ্রমিক আন্দোলনও ক্রমে তার গতি হারিয়ে ফেলে।

১৯১৭ সালে রাশিয়াতে মহান বলশেভিক বিপ্লবের প্রভাব ভারতে শ্রমিকদের জাগরনে বিশেষ সাহায্য করে। ভারতের শ্রমিকরা বুঝতে পারে যে, যত দিন ভারতে বিদেশী শাসন থাকবে ততদিন তাঁদের পূর্ণ মুক্তি সম্ভব হবে না। ইতিমধ্যে ১৯১৮ সালে বি. পি. ওয়াদিয়ার নেতৃত্বে চেন্নাইতে (পূর্বতন মাদ্রাজ) প্রথম স্থাপিত হয় মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন নামে এক শ্রমিক ইউনিয়ন। এরপর ১৯২০ সালে গান্ধীজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে ভারতের শ্রমিক সমাজ ব্যাপকভাবে সেই আন্দোলনে সাড়া দেয়। তারাও ধর্মঘট করে। ১৯২০-২১ সালে শুধু বাংলাতেই মোট ১৩৭ টা শ্রমিক ধর্মঘট হয়।
১৯২০সালে শ্রমিক ধর্মঘটের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। এই সময় কোনো কোনো নেতা মার্কসবাদী মতের প্রভাবে শ্রমিক আন্দোলনকে শ্রেণী সংগ্রামের পথে চালিত করার কথা ভাবতে শুরু করেন। এই সকল উদীয়মান নেতাদের মধ্যে এস. এ. দাঙ্গে, সিঙ্গার ভাল্লু চেঙ্গিয়ার প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য।
১৯২০ সালে বামপন্থী নেতৃত্বের উদ্যোগে তৈরি হয় অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, যার প্রথম সভাপতি ছিলেন লালা লাজপত রায়। অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস তার প্রথম ইস্তেহারে জাতীয় রাজনীতিতে অংশ গ্রহণের জন্য শ্রমিকদের আবেদন জানায়। এই সময় শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের অর্থনৈতিক দাবির পাশাপাশি রাজনৈতিক দাবিও যুক্ত করা হয়।
