দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি:চিন্তন নিউজ:২১শে অক্টোবর:– – কালিম্পং পাহাড়ে মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টিতে একসাথে বিরাট পরিমান জল তিস্তা নদী দিয়ে বয়ে যাওয়ার কারণে হঠাৎই বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও সেই বৃষ্টি যে এই পরিমান হতে পারে ধারণা ছিল না কারোও। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৬৮ সালের লক্ষ্মী পূজার আগের রাতে সর্বনাশা বন্যা জলপাইগুড়ি শহরকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সে সময় গজলডোবার তিস্তা ব্যারেজ ছিলনা। রঙধামালি এলাকার বাঁধ ভেঙে শিকারপুর ফরেস্ট ভাসিয়ে বড় বড় কাঠের গুড়ি ভেসে এসেছিল তিস্তা দিয়ে। এরপর বড় বন্যা দেখেছিল তিস্তাপারের মানুষেরা আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে হাজার ১৯৯৫ সালে সেবার এর বন্যায় বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন তিস্তার চর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষরা। এবারের লক্ষ্মী পূজার দিনে ২০ তারিখের বন্যায় পাহাড় থেকে নেমে আসা নদীর জল এই পরিমাণ ছিল যে গজলডোবার লকগেটে এর ওপর দিয়ে তিস্তা নদীর জলের স্রোত প্রবাহিত হতে দেখা যায়। বাধ্য হয়ে ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ সমস্ত লকগেট খুলে দেন।
সাধারণত এই সময় এই পরিমাণ বৃষ্টি হয়না যদিও বা নিম্নচাপের কারণে বৃষ্টি হয় তবে তা বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করে না। বর্ষা পরবর্তী সময়ে নদীগর্ভের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও নদী গর্ভের মধ্যে থাকা মূল নদী খাতের পার্শ্ববর্তী চর এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমিতে স্বর্ণ ধান, আলু, পেঁয়াজ জলদি সবজি করোলা, শসা, বেগুন মটরশুঁটির,লঙ্কা, পালং শাক মুলা,কপি চাষ করেন তিস্তাপারের চাষিরা। এবারের বন্যা তাদের কয়েক লক্ষ টাকার ফসল ধুয়ে নিয়ে চলে যাওয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে মাঠ থেকে করোলা সহ দু-একটি সবজি তুলে আনার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন জলপাইগুড়ি সুকান্তনগর কলোনি এলাকার ঠাকুর চন্দ্র দাস, বনবাসী মন্ডল, নিখিল বিশ্বাস, নিত্তেন রায়ের মতন চাষিরা। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল শুধুমাত্র সুকান্ত পল্লী এলাকায় তিস্তাপারের যে চাষিরা রয়েছেন তিস্তা নদীর চরে তাদের উৎপাদিত ফসল যা তারা গত কয়েক মাস ধরে আবাদ করেছিলেন একদিনের বন্যায় তা সবটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে যার বাজার দর প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ লক্ষ টাকা। সমগ্র সদর ব্লকের ২২,৩২৫ হেক্টর ফসলী জমি ৫,০৩৩ হেক্টর জলমগ্ন কৃষি জমির ফসল মাঠেই নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে।
সদর ব্লকের মন্ডল ঘাট এলাকার তিস্তা চরের সবজি রাসায়নিক সার বিহীন সব্জি হওয়ার কারণে গোটা পশ্চিমবঙ্গে সরবরাহ হয়। উত্তরবঙ্গের অন্যান্য এলাকার সব্জির তুলনায় মন্ডল ঘাট হলদিবাড়ি এলাকার সব্জি স্বাদের দিক থেকে এক নম্বর। সমগ্র মন্ডলঘাট, নন্দনপুর বোয়ালমারী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তাতিপাড়া, বাহের চর এলাকা মিলিয়ে তাদের প্রায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকার ফসল তিস্তা গর্ভে তলিয়ে গেছে বলে জানালেন তাতিপাড়া এলাকার চাষী শিবু সরকার, ধনঞ্জয় সরকার, রমেন সরকার, সুনীল সরকার, মনোরঞ্জন রায় সহ অন্যান্য চাষিরা।
