রঘুনাথ ভট্টাচার্য: চিন্তন নিউজ:৭ই ফেব্রুয়ারি:–ব্যাঙ্কের সুদের হার স্থীর করতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দেশের অর্থনীতির সমীক্ষা করে নিয়মিত, দুমাস অন্তর। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে যে আর্থিক কমিটি আছে, তাঁরা গত ডিসেম্বরের শেষে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত মুলতুবি রেখেছিলেন কারন দেশের বাজারে অস্বাভাবিক চড়া মূল্যবৃদ্ধি।
ইতিমধ্যে দু’মাস কেটে গেছে। সংসদে নতুন বাজেট পেশ হয়েছে। কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি তো হয়ই নি বরং অবনতির লক্ষণগুলো যে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে, সেকথা দৃঢ় করেছে উক্ত কমিটির সমীক্ষা রিপোর্ট।
তাঁরা বলেছেন, নিকট ভবিষ্যতে দেশে মূল্যবৃদ্ধি তীব্রতর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। ফলত তাঁরা এই কিস্তিতেও সুদের হার পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।অর্থাৎ তা ৫.১৫% -তেই বহাল রেখেছেন। উৎসাহী পাঠকের মনে থাকতে পারে, গত বছর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক মোট পাঁচটি দফায় রেপো রেট কমিয়েছিল।
খবরে প্রকাশ, ৬ই ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর শ্রীশক্তিকান্ত দাস এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অধোগত অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল।উৎপাদন বৃদ্ধি পায়নি মূল্যবৃদ্ধিহ্রাসের সম্ভাবনা ক্ষীণ। খাদ্যপণ্যের দাম প্রবলভাবে ঊর্ধ্বমুখী।গত বছর পেঁয়াজের দাম প্রায় ২০০টা /কেজিতে ওঠে। বাড়ে পাল্লা দিয়ে সবজির দামও।এমনকি আমদানির পসরা বাজারে নামলেও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। নতুন ফসল উঠলেও দাম কমবে না বলে রিপোর্টে অনুমান।
এই অবস্থায় অকৃষি পণ্যের বাজারও চড়া। দুধ, ওষুধ, ভোজ্য তেলের , ডাল ইত্যাদির দামও তেজী। বলা হয়েছে, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনে হ্রাস এই চড়া বাজারের মূল কারন।পেট্রোপণ্যের দামের অস্থিরতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে বলে মত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের । মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এই পরিস্থিতিতে আরও ইন্ধন জোগাবে বলে অনুমান। অপরিশোধিত তেলের দামবৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ ও সংশ্লিষ্ট পরিষেবার খরচ বাড়াবে বলে আশঙ্কা। দেশে, এমনকি সারা বিশ্বে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থান স্থিতিশীলতা হারাবার সম্ভাবনা প্রকট।এটাও মূল্যবৃদ্ধির একটা কারন বলা যায়।
এই সব অর্থনৈতিক অবস্থার দায়ে বাজারে চাহিদা হ্রাস পাওয়া অনিবার্য। ফলে কমেছে শিল্প উৎপাদন। মোটরসাইকেল বিক্রি নিম্নমুখী।চাষের কাজে সহায়ক ট্রাক্টর বিক্রির হার মাত্র ২.৪%। যাত্রীবাহী গাড়ী বিক্রির হ্রাস উল্লেখযোগ্য। এই সবই স্পষ্ট লক্ষণ সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ার।শ্রী দাসের মতে শিল্পোৎপাদনের বৃদ্ধির হার দ্রুততর হওয়ার আশু সম্ভাবনা দেখা যায় না। ফলে
জিডিপি বৃদ্ধির হার ৬%তেই থাকব আগামী বৎসর বলে পূর্বাভাস। শ্রী দাসের মতে, একদিকে দেশের আভ্যন্তরীন বাজারে চাহিদার পতন ,অন্যদিকে নভেম্বর-ডিসেম্বরে রপ্তানির ঘাটতি , পেট্রোপণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানিও
কমের দিকে।সব মিলিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বলতর।