চিন্তন নিউজ:২৩শে জুন:– নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংবিধানের ৩৭০এবং ৩৫এর এ ধারা অবলুপ্ত করা হয়। কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয় লাদাখকে। দুটি অংশেরই গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর গঙ্গাযাত্রা ঘটিয়ে কেন্দ্রের বকলমে সেখানে বিজেপি রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কাশ্মীর এবং লাদাখ , দুটি অংশেরই মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ, যাঁরা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, কার্যত তাঁদের যাবতীয় নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়ে রাষ্ট্র তাঁদের বাধ্য করে মনুষত্বের জীবনযাপনে। দীর্ঘদিন সেখানকার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।অবিজেপি জনপ্রতিনিধিদের সংসদের অধিবেশনে অংশ পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয় না।অপরপক্ষে জম্মুর হিন্দু পন্ডিতদের প্রতি বিশেষ রকমের পক্ষপাতিত্ব করে গোটা দেশেই হিন্দু- মুসলমান, উভয়কে উভয়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলা হয়।
গোটা কাশ্মীর উপত্যকা যখন কেন্দ্রীয় সরকারের আবরণের ভিতর দিয়ে আর এস এস এবং তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপির প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রধীনে, তখন লাদাখে ভারতীয় ভূখন্ডের ভিতরে ঢুকে পড়ে চিন কিভাবে আমাদের বীর সেনানীদের হত্যা করে?দেশপ্রেমের নামে উগ্রতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে গরমাগরম কথার মাধ্যমে দেশের মানুষকে মুসলমানেদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলা রাজনৈতিক হিন্দুদের রাজনৈতিক কর্মসূচী।
এই কর্মসূচি রূপায়ণে পাকিস্থান আর এস এস – বিজেপির কাছে যতোটা সফ্ট টার্গেট, চিন কিন্তু তা নয়।তাহলে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের আস্তরণে গোটা কাশ্মীর উপত্যকার উপর নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম করবার পর কেন আমাদের দেশের মূল ভূখন্ডের ভিতর ঢুকে পড়ে চিন আমাদের দেশের বীর সেনানীদের হত্যা করছে? দেশরক্ষায় এবং অবশ্য ই বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির চরম ব্যর্থতায় আজ পর্যন্ত দেশের যে কুড়ি টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে গেল , তার সার্বিক দায় কেন প্রধানমন্ত্রী মোদির হবে না?
ম্যাকমহোন লাইন ঘিরে ব্রিটিশ যে ভূমিকা নিয়েছিল, তেমন কোনো উদ্যোগ কখনো লাদাখ ঘিরে হয় নি। বিজেপি আজ ছয় বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায়।অতীতে তাঁদের নেতা অটলবিহারি বাজপেয়ী সাড়ে ছয় বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।এই দীর্ঘ বারো বছর সময়ে লাদাখ ঘিরে চিন যাতে কখনো কোনো আক্রমণাত্মক ভূমিকা না নিতে পারে, সিনকিয়াং ঘিরে চিনের কর্মকান্ড যাতে কখনোই ভারতের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ক্ষতিকারক না হতে পারে– সে বিষয়ে কেন বিজেপি একটি শব্দ ও উচ্চারণ করে নি?
আজ ছয় বছর ক্ষমতায় থাকে দেশপ্রেমের নামে মুসলমান বিদ্বেষ ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক সীমারেখার প্রশ্নে মোদির সরকার এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, লাদাখ ভেদ করে চিনের সিনকিয়াং যাওয়ার রাস্তাটি আবার নোতুন মাত্রায় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে চলে এসেছে।আজ মোদি সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার ফলে সিনকিয়াংয়ের সঙ্গে লাদাখের ভিতর দিয়ে দখল করা জমিতে চিনের তৈরি রাস্তা র মাধ্যমে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ভিতর দিয়ে ভারতে নাশকতা চালাবার সুবর্ণ সুযোগ পাকিস্তানের এসে গেছে।
চিনকে কেন্দ্র করে পাকিস্থান যাতে লাদাখকে ব্যবহার করতে পারে।লাদাখের ওই রাস্তার মাধ্যমে ভারতে হামলা চালাতে পারে।আর সেই হামলাকে ব্যবহার করে পাকিস্থান বিরোধিতার নাম করে বিজেপি করবে।এ ভাবে খুব সহজেই ভারতের মুসলমানদের উপর সব ধরণের অত্যাচার চালাতে পারবে সঙ্ঘ – বিজেপি। এই জঘন্য ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য নিয়েই লাদাখে সব ধরণের ফেডারাল স্ট্রাকচারকে ধ্বংস করে নি তো বিজেপি? এই উদ্দেশ্যেই লাদাখকে কেন্দ্রের বকলমে বিজেপি নিজেদের হাতের মুঠোয় ভরে নি তো?
চিন কি ফরমোজার উপরে কোনো আক্রমণের আশঙ্কা করছে? তাই ‘৬২ সালে ব্রিটিশের তৈরি ম্যাকমহোন লাইন ঘিরে যে সীমান্ত সংঘর্ষ , সেখানেও লাদাখের ভিতর দিয়ে রাস্তা তৈরি ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।আন্তর্জাতিক স্তরে আমেরিকার সঙ্গে চিনেযর সম্পর্কের ক্ষিপ্রতায় ফরমোজাকে টোপ হিশেবে দেখিয়ে আমেরিকার যুদ্ধস্পৃহা, ট্রাম্পের আসন্ন ভোট বৈতরণী পেরোতে সেই দেশে দেশপ্রেমের নামে উগ্রতা সৃষ্টিতে লাদাখকে চিনের কর্মকান্ড ঘিরে নিশ্চুপ মোদি? একটি ও কথা বলছে না, দেশপ্রেমের তুবড়ি ছড়ানো মোহন ভাগবত? আসল লক্ষ্য কি আমেরিকার চিনের বিরুদ্ধে সমরাভিষানকে ত্বরান্বিত করে বন্ধু ট্রাম্পকে আবার হোয়াটস হাউজে ফিরিয়ে আনা?
বিজেপি যতোই নেহরু বিরোধী বলে নিজেদের জাহির করুক না কেন, কমিউনিষ্ট চিন কে জব্দ করতে নেহরু চিনের আভ্যন্তরীণ সমস্যার সাথে নিজেকে জড়িয়েছিলেন।কাশ্মীর যেমন ভারতের একান্ত আভ্যন্তরীণ বিষয়, বাইরের কারো নাক গলানো এই প্রশ্নে যেমন আমরা বরদাস্ত করি না, তেমনি ই তিব্বত ও চিনের একান্ত আভ্যন্তরীণ বিষয়।মুখে সমাজতন্ত্রী, আবার জোট নিরপেক্ষ , ব্রিটিশ কমনওয়েলথের অন্তর্গত থেকে ও নেহরু আমেরিকা কে খুশি করতে দলাই লামার মতো বৌদ্ধ মৌলবাদীকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছিলেন।এই দলাই লামার প্রশ্নে কিন্তু চরম নেহরু বিরোধী আর এস এস – বিজেপি আজ পর্যন্ত একটা শব্দ ও উচ্চারণ করে নি।