পাপিয়া দাস মজুমদার: চিন্তন নিউজ:২৪শে জুন:– ২০১৫ সালে তামিলনাড়ুর, সামাজিক প্রভাবশালী (থেভার) সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত কৌশল্যা, তিরপুর জেলার উদমলপেটের এক দলিত যুবক শঙ্করকে বিয়ে করেছিলেন। উঁচু জাতের মেয়ে নীচু জাতের ছেলেকে বিয়ে করায়,মেয়ের বাড়ির লোকেরা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি দলিত যুবক শংকরকে। তাই দলিত শংকরকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করে আসছিল।
২০১৬ সালের ১৩ ই মার্চ এই দম্পতিকে তিনজন দ্বারা নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছিল উডুমালপেট টাউন বাসস্ট্যান্ডের কাছে মেম্বার গ্যাং দ্বারা। ঐ সময়ে মাত্র ২২ বছর বয়সী শঙ্কর মারা যান এবং ১৯ বছর বয়সী কৌশল্যা গুরুতর আহত হলেও বেঁচে গিয়েছিলেন।
দিবালোকে এই ধরনের নির্লজ্জ অপরাধ পুরো দেশকে হতবাক করেছে। ২০১৭ সালের ১২ ই ডিসেম্বর, ১১জন আসামীর মধ্যে তিরপুর জেলা দায়রা আদালত শঙ্করকে হত্যার দায়ে কৌশল্যার পিতা চিন্নাস্বামী সহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত করেছিলেন। অন্য তিনজন (তাঁর মা অন্নলক্ষ্মী, মামা পান্ডি থুরাই এবং আত্মীয় একটি ১৬ বছরের কিশোর), সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিলেন। অপর দুই আসামির সাজা কমে গিয়েছিল ।
অভিযুক্তরা এই শাস্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টে একটি আপিল করেছিলেন এবং রাজ্য কৌশল্যার মা ও চাচা সহ তিনজনকে খালাস দেওয়ার বিরুদ্ধে আপিল করেছিল।
হাইকোর্ট এখন দায়রা আদালতের ৩ জনের মুক্তি বহাল রেখেছে। এ ছাড়া কৌশল্যার পিতা চিন্নাস্বামীকেও মুক্ত করে দিয়েছে, যিনি এই কেসের অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন। এবং তিনি এই সিদ্ধান্তে অহম প্রকাশ করে বলেন, ফৌজদারি ষড়যন্ত্র বা হত্যার অভিযোগই তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়নি। হত্যাকারীদের মধ্যে যাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাদের সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। অন্যদের মধ্যে একজনের ২৫ বছর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়েছিল।
এই রায় থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, আদালত এটিকে সম্মানজনক অপরাধ বা বর্ণ ভিত্তিক অপরাধ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়নি। আদালত প্রধান আসামি চিন্নাস্বামীকে খালাস দিয়ে এবং কৌশল্যার মা ও মামার খালাস বহাল রেখে চুক্তিবদ্ধ খুনি ও পরিবারের মধ্যে আশ্চর্যরকম সম্পর্ক বহাল রাখে। তারপরে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ওঠে যে চুক্তি খুনিরা কেন শংকর এবং কৌশল্যাকে আক্রমণ করেছিল এবং এর উদ্দেশ্য কী হতে পারে।
প্রধান আসামি এবং চুক্তিবদ্ধ হত্যাকারীদের মধ্যে দায়বদ্ধতার শক্ত প্রমাণকে দায়রা আদালত গ্রহণ করলেও হাইকোর্ট সেই প্রমাণকে উপেক্ষা করে গেছে এবং আরও প্রমাণ চেয়েছে।
ভারতের বর্ণবাদী সমাজে এই মামলার ঘটনাগুলির সংশ্লেষিত প্রভাব নেওয়ার পরিবর্তে আদালত ঘটনাগুলিকে পৃথক পৃথক ও বিচ্ছিন্ন সংযোগ হিসাবে দেখেছে।
অথচ২০১৪ সালে, ঐ ন্যায়ালয়ই তামিলনাড়ুর দিলিপকুমার মামলায় রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে এ ধরনের অপরাধের ব্যাপকতাকে রোধ করার দিশা নির্দেশ দেখিয়েছিলো। ২০১৮ সালে, অন্য একটি মামলায় মাদ্রাজ হাইকোর্ট নির্দেশিকা কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিল। তখন এই রায়ের মাধ্যমে সম্মানজনক অপরাধের প্রসারকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং একই আদালত তাদের মোকাবেলা করার দিকনির্দেশনা উভয়ই মেনে নিয়েছিল ।
কিন্তু এই রায়ের দ্বারা ইজ্জতের জন্য অপরাধ গুলো ব্যাপকতা লাভ করে ও করবে।
সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (AIDWA) সমাজে এই রায়টির প্রভাব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। এ হেন রায় নিজের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকারের উপর আক্রমণ। এটি যুবক যুবতীদের পক্ষে হুমকি, যারা বর্ণ বর্ণক্রমকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস করে। সম্মানজনক অপরাধগুলি একটি শক্তিশালী বর্ণের উগ্র এবং পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকেই আসে। এক যুবতী কে নিজের পছন্দের জীবন সাথী বেছে নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা,এটি গণতন্ত্রের উপর আঘাত করার সামিল। এই মামলাটি কেবল একটি হত্যার ঘটনা নয় এবং এই রায়টি ভবিষ্যতে সম্মানজনক অপরাধের পুরোপুরি প্রভাব ফেলবে।
সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি (AIDWA ) তামিলনাড়ু সরকারের কাছে এক লিখিত বিবৃতি দিয়ে আবেদন করেছেন যে,সরকার যেন এই কেস কে দ্রুত সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে এবং এই রায়ের তীব্র বিরোধিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। শংকরের হত্যার বিচার চেয়ে কৌশল্যা তার নিজের পরিবারকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো সাহসী ভূমিকা দেখিয়েছে। AIDWA, TNUEF এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক সংগঠন গুলি ও কৌশল্যা ও শংকরকে ন্যায় পাইয়ে দিতে সমর্থন করে যাবে ও যাচ্ছে।এই রায়ের তীব্র নিন্দা করেছেন মালিনী ভট্টাচার্য(PRESIDENT OF AIDWA). ইউ নির্মলা( LOWER, AIDWA,TAMILNARU) মরিয়ম ধাওয়ালে (GENERAL SECRETARY OF AIDWA)।এই মর্মে ২৩শে জুন একটি প্রস বিবৃতিও প্রকাশ করেন সারাভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি।