রঘুনাথ ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ:১১ই এপ্রিল:- পুরুলিয়ার রমইগড়া- শবরটোলায় মানুষেরা সরকারি সাহায্য পায় নি , এমনই খবর। যদিও লকডাউনের পর ১৫ দিন কেটে গেছে। ওদের কিন্তু সবার রেশনকার্ড আছে।ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড আছে;আঁধার কার্ড, ভোটার কার্ড সবই আছে। কিন্তু, ব্যাপার হচ্ছে, দেখতে চাইলে কিছুই তাঁরা দেখাতে পারেননি। ওরা কিন্তু ‘ গেরামের ইস্কুলে ‘ ভোট দিতে যায় নিয়মিত। অবশ্য,কারনটা খুব নতুন নয়।
কারনটা হল , সে সবই ধরা আছে পাড়ার এক দাদার কাছে। রেশনদোকানে সাধারণতঃ কোনো অসুবিধা হয় না, দোকানদার নাম শুনেই মাল দিয়ে দেয়। অবশ্য, কী কী পাওনা ,আর কতটা পাওনা তা তাঁরা জানেন না। এইভাবেই চলে আসছে, এখন এটাই নিয়ম। সরকারি লোক গিয়ে নাম লিখে নিয়ে এসেছে যথারীতি।বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারের
সাহায্য পৌঁছায় নি।
অসহায় অবস্থা। এই এলাকার দুর্গমতা এমন কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য নয় ।পুরুলিয়া শহর থেকে মোটামুটি ৪০ কিমির মধ্যে কেন্দা থানার চিপিদা ভান্ডারপুয়ারা গ্রাম-পঞ্চায়তের অধীন এই রমইগড়া- শবরটোলায় প্রায় ৪০টি পরিবারের বাস। সুগম রাস্তায় যুক্ত। জনসংখ্যা আনুমানিক ২০০জন। আদিম জনজাতি। কম বেশি সকলেই অপুষ্টিতে ভোগেন। তাদের জীবিকা শুধু নামেই। তাঁরা জঙ্গলের কাঠ কেটে এনে ,আর, বাঁশ-তালপাতার টুকটাক জিনিষ তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে যা সামান্য পান, তাই দিয়েই পেট-পোষণ। আরো আছে । সকাল হলেই সমর্থ পুরুষকে বাড়ী থেকে বেড়িয়ে যেতে হয় শিকার ধরতে । হ্যা, ইঁদুর শিকার। তাই দিয়ে শিশু-বৃদ্ধ সহ পরিবারের ক্ষুন্নিবৃত্তি। রেশনের গম পেলেও কিছুটা ডিলারের কাছে বিক্রি করে কিনতে হয় কেরোসিন, আর, যা না হলে ‘ পরাণ যায় জ্বলিয়া’ , সেই তরল বিষ। যে দিন রেশন চাল দেয়, সেদিন ডিলার কিছু বেশী পয়সা দেয়। পাওনার হিসাব বুঝতে গেলে সেটাও পাওয়া যাবে না, কাজেই সে ঝামেলায় পড়তে চায় না কেউই। অভিজ্ঞ বৃদ্ধ জনেরা বলেন, ‘ মার্জারের (১৯৫৬) সময় থিক্কা অমনটাই দেইখ্যা আইসেছি আজ্ঞ্যা।’
লকডাউনের পরে কয়েকদিন চলেছিল ইস্কুল থেকে পাওয়া চাল-আলুতে।পুরুলিয়ার দু’একটি সংস্থা কিছু কিছু সাহায্য এনেছেন।এলাকার একজন শিক্ষক ওদের কষ্টের কথা জেনে সাধ্যমত সাহায্য করেছেন।ভলান্টিয়ার এসে নাম লিখে নিয়ে গেছেন। হয়ত, কিছু সরকারি সাহায্য এসে পৌঁছবে। কিন্তু, একটা প্রশ্ন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে,এই অবহেলার দহন হঠাৎ একদিন দাবানল হয়ে জ্বলে উঠবে না তো ??