কলমের খোঁচা

জন্মদিনে সুচিত্রা মিত্র।


কলমে কৃষ্ণা সাবুই: চিন্তন নিউজ:১৯/০৯/২০২২- সুচিত্রা মিত্র এক আবেগ, হৃদয় উৎসারিত ভালোবাসা শ্রদ্ধার ব‍্যক্তিত্ব। ১৯২৪সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর ঝাড়খন্ডের ডিহীরিতে জন্মগ্রহন করেন।বাবা ছিলেন সৌরিন্দ্র মোহন মুখোপাধ‍্যায়, মা সুবর্নলতা দেবী।

পড়াশোনা করার সময় তিনি কোলকাতায় হাতিবাগানে আদি বাড়ীতে চলে আসেন। ভর্তি হন বেথুন স্কুলে।কিন্তু ম‍্যাট্রিক পরীক্ষার আগে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৯৪৩সালে প্রাইভেটে ম‍্যাট্রিক পাশ করেন এবং একই বছরে শান্তিনিকেতন থেকে রবীন্দ্র সংগীতে ডিপ্লোমা পান।১৯৪৫সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের প্রাইভেট ছাত্রী হিসেবে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন।স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স সহ বি এ পাশ করেন।

এই সময় ধ্রুব মিত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়।তাঁদের একমাত্র পুত্র কুনালের জন্মের পর তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কলেজ জীবনেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে প্রত‍্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন।চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের অভিযোগে যে সমস্ত বিপ্লবীদের কারারুদ্ধ করা হয়েছিলো তাদের মুক্তির দাবীতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন।লাঠি, কাঁদানে গ‍্যাস, এমন কি মার খেয়েছেন ব্রিটিশ পুলিশের হাতে।পরবর্তীকালে প্রত‍্যক্ষ রাজনীতিতে না থাকলেও তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর থেমে থাকেনি।
ভারতীয় গননাট‍্য সঙ্ঘ পিপিলস্ থিয়েটারে যুক্ত ছিলেন।জওহারলাল নেহেরুকে কটাক্ষ করে ‘ বাল্মিকী প্রতিভা’ য় গান করার জন‍্য আকাশবানী তে ৬ বছর অবাঞ্ছিত ছিলেন। গান গাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন।

এরপর তিনি রবীন্দ্রভারতীতে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন, সাথে সাথে বাংলায় এম এ পাশ করেন।তিনি রীডার, অধ‍্যাপক, সবশেষে রবীন্দ্রসংগীতের বিভাগীয় প্রধানের পদ অলংকৃত করেন।১৯৪৮সালে রবীন্দ্রভারতী থেকে অবসর নেন।

তাঁর সংগীত জীবন বড়ো গৌরবের।তিনি রবীন্দ্রসংগীতের, প্রথিতযশা অগ্রগন‍্যা গায়িকা ছিলেন।তাঁর উদাত্ত দৃপ্তকন্ঠ, স্পষ্ট উচ্চারন অসাধারন ছন্দজ্ঞান কণ্ঠের সাবলীলতা বাঙালি মননে চির জাগরুক থাকবে। আশৈশব সংগীতের প্রতি তীব্র টান ও ভালোবাসায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।জীবনে তিনি বহু পুরস্কার পেয়েছেন ।১৯৪৫ সালে লন্ডন টেগোর হিম সোসাইটি থেকে ‘টেগোর হিম’ পুরস্কার পান।১৯৭০সালে ভারত সরকার প্রদত্ত ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান পান।১৯৮৫সালে এশিয়ান পেন্টস থেকে ‘শিরোমনি’ পুরস্কার পান।এইচ এম ভি থেকে পান ‘গোল্ডেন ডিস্ক’ এ‍্যওয়ার্ড।১৯৮৬তে সঙ্গীত নাটক এ‍্যকাডেমী পুরস্কার।পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ‘আলাউদ্দিন’ পুরস্কার সহ নানা সম্মান পেয়েছিলেন। সাম্মানিক ডি লিট পেয়েছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ‍্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ‍্যালয় থেকে।

এই সংস্কৃতিমনা মহতী প্রানের দীর্ঘরোগ ভোগ করার পর ২০১১সালের ৩রা জানুয়ারি জীবনাবসান হয়।অসংখ‍্য রবীন্দ্র সংগীত অনুরাগীর হৃদয়ে তাঁর গান চিরকালীন হয়ে রইলো।জন্মদিনে হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে জানাই প্রণাম ও শ্রদ্ধা ।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।