সূপর্ণা রায়: চিন্তন নিউজ:১৭ই আগস্ট:- আলিমুদ্দিন স্ট্রীট কেন , কিভাবে তার নামকরন হয়েছিল আমরা তা অনেকেই জানিনা। এই আলিমুদ্দিন স্ট্রীটের কথা জানতে হ’লে পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় ১৩০ বছর আগে। বর্তমানে আলিমুদ্দিন স্ট্রীট মধ্য কলকাতার একটি ব্যস্ততম রাস্তা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই রাস্তাকে চেনে অন্যপরিচয়ে। ৩১ নং আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে অবস্থিত রাজ্য বামফ্রন্ট দপ্তরের সদর কার্যালয়। এখানে বসেই বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ দীর্ঘ ৩৪ বছর তো বটেই তার আগেও এবং এখনও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনৈতিক আলোচনা , কর্মসূচি,করে থাকেন। কিন্তু এই ব্যস্ততম রাস্তাটির নাম “আলিমুদ্দিন স্ট্রীট” কেন?
প্রায় ১৩০ বছর আগে ঢাকার জমাদার লেন। সরু স্যাঁতস্যাঁতে একটা গলি যেখানে সূর্যের আলো ঢোকে না বললেই চলে। সেখানে বাস করতেন আমিরুদ্দিন যার সম্বল বলতে একটা ছোট জামা বানাবার দোকান। এই গরীব ঘরে ১৮৮৪ সালে এক বর্ষার দিনে জন্ম নিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্নিপুরুষ সৈয়দ আলিমুদ্দিন আহম্মদ। আলিমুদ্দিন সাহেবের অনুপ্রেরণা ছিলেন তাঁর বাবা।। আলিমুদ্দিন সাহেবের জন্মের সময় থেকেই বদলে যাচ্ছিল মানুষের জীবনযাপন।। স্বাধীনতা পাওয়া জন্য যুদ্ধ চলছে, বাতাসে বারুদের টাটকা গন্ধ।।আর তার সাথে বদলে যাচ্ছে মানুষের রাজনৈতিক ভাবনা,বিশ্ব অর্থনীতি, মানুষ এর সাধারণ জীবন জীবিকা নির্বাহ করা।।
কিছুদিন পরেই আত্মপ্রকাশ করল জাতীয় কংগ্রেস।। শুরু বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন।ফলে রোজ নতুন নতুন করে বদলে যেতে লাগল জাতীয় রাজনীতি।এই পরিস্থিতি যে কিশোর আলিমুদ্দিন নিজেকে গড়েপিটে নিতে লাগলেন উত্তপ্ত রাজনীতির সঙ্গে। কিন্তু এর মাঝখানে তাঁর জীবনে ঘটে গেছে এক মারাত্মক বিপর্যয়। বাবাকে হারিয়েছেন আলিমুদ্দিন। বেঁচে থাকতে গেলে প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র বাসস্থান। আর তার জন্য প্রয়োজন টাকা। সেই টাকার প্রয়োজনে তিনি গৃহশিক্ষক এর জীবিকা গ্রহন করেছিলেন। জীবনের সমস্ত ভাঙাগড়াকে পাথেয় করে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিলেন। হেমচন্দ্র ঘোষ ছিলেন আলিমুদ্দিন এর বন্ধু।। তিনিই তাঁকে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিতে উৎসাহ দেন।। ১৯০৫ সাল, উত্তপ্ত দেশ, পুরোদমে চলছে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন আর তার সাথে প্রতিদিন বেড়ে চলেছে ইংরেজ শাসনের অত্যাচার।এই সময় বিপ্লবী হেমচন্দ্র প্রতিষ্ঠা করলেন “গুপ্তসমিতি’ যার অন্যতম সদস্য ছিলেন আলিমুদ্দিন বা মাষ্টারসাব।। মাষ্টারসাবের উদ্যোগে তৈরী হলো বেশ কয়েকটি শারীরিক কসরত প্রতিষ্ঠান। সাধারণত এই প্রতিষ্ঠান গুলোর থেকেই ছেলেদের উদ্বুদ্ধ করা কেন স্বাধীনতা পাওয়া দরকার।। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হত এই প্রতিষ্ঠান গুলোর থেকেই। একের পর এক বিপ্লবীকে থাকতে দেওয়া হত। অস্ত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করা হতো।নিজে মুসলিম হলেও কোনদিন কোন সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেন নি। বিভিন্ন ছদ্মবেশে চালিয়ে গেছেন বৈপ্লবিক কান্ডকারখানায়। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁর টিকিও ধরতে পারেনি। ১৯২০ সালে মাষ্টারসাবকে ধরলো ভার্ন রোগ টিবিতে। বেশ কিছুদিন যক্ষা রোগে ভোগেন তিনি এবং এই রোগেই তাঁর জীবনাবসান হয়।।
পরবর্তী কালে মাষ্টার সাব এর সম্মানার্থে মধ্যকলকাতার একটি রাস্তার নামকরণ হয় “আলিমুদ্দিন স্ট্রীট”।এমন কত বিপ্লবী মানুষের চোখের আড়ালে কত কাজ করে গেছেন আজকেও অনেকেই জানতে পারেন না।।