কলমের খোঁচা

স্মার্ট মিটার আদতে জনগণকে শোষণের নতুন যন্ত্র


দেবু রায়,নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ০৯/১০/২০২৩:– স্মার্ট মিটার অর্থাৎ প্রিপেইড ডাইনামিক মিটার কি ?. সংক্ষেপে বললে, বলতে হয়, স্মার্ট মিটার হলো এমন একটা ব্যবস্থা RDSS অর্থাৎ বিদ্যুৎ বিতরণ ক্ষেত্রে, পুনরুজ্জীবন এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের একটা প্রকল্প যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের ১৫%অনুদান পেতে গেলে রাজ্য বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বর্তমান মিটার এর মধ্যে একটা চিপ ঢুকিয়ে দেয়া হবে এবং সেই মিটার টা হবে প্রিপেইড স্মার্ট মিটার। অর্থাৎ মোবাইল ফোন এর মতন আপনাকে আগাম টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কিনে ব্যবহার করতে হবে। যার অর্থ বর্তমান যে মিটার ব্যবস্থা আছে সেগুলো বদলে মিটারের মধ্যে একটা চিপ ঢুকিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে সচল রাখা।
বর্তমান মিটার ব্যবস্থায় আমরা কি কি সুবিধা পাই?.
১)আগে আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করি তারপরে বিদ্যুতের বিল পেমেন্ট করি। এবং প্রতি মাসে কত ইউনিট বিদ্যুৎ আমরা ব্যবহার করেছি তার বিবরণ টাও পাই।

২)আমরা যদি দেখি কোনো মাসে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল এসেছে আমরা তার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ সংস্থাকে অভিযোগ জানাই তাঁরা পরের বিল এর সাথে অতিরিক্ত টাকা এডজাস্ট করে দেয়।

৩)বর্তমান ব্যবস্থায় আমাদের বিদ্যুৎ মাশুলের কোনো পরিবর্তন হয় না।রেট বা দর একই থাকে।

৪)প্রতিমাসে আমাদের বাড়িতে মিটার রিডিং এর কর্মীরা আসেন মিটার দেখতে।

স্মার্ট মিটার ব্যবস্থায় কি কি হবে?

১)এই ব্যবস্থায় আপনাকে কোনো বিল পাঠানো হবে না। শুধু মোবাইল রিচার্জ এর মতন আপনাকে পয়সা দিয়ে যেতে হবে, তাও ২৮দিনের জন্য। অর্থাৎ আপনাকে বারো মাস বিদ্যুৎ ব্যাবহারের জন্য পয়সা দিতে হবে ১৩ মাস, মানে একটা মাসের পয়সা কোম্পানি গুলো ফোকটে কামাবে। এখন যেমন মোবাইল, বা কেবল কোম্পানি আপনাকে লুটছে এখানেও সেটাই হবে।

২)স্মার্ট মিটার ব্যবস্থায় মোট ২৪ঘন্টার মধ্যে যখন বিদ্যুতের চাহিদা কম হবে তখন একটা rate, এবার চাহিদা বাড়লে বিদ্যুতের rate বাড়বে। মানে সকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত একটা rate থাকবে , আরসন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত এগারোটা (যখন বিদ্যুতের ব্যবহার বেশী হয় )তখন বর্ধিত মূল্যে আপনাকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে।
সরকার যুক্তি দেখাবে যখন দাম বাড়বে তখন ব্যবহার কম করুন, এটা কি বাস্তবে সম্ভব?. আপনি পারবেন গরমের সময় লাইট -পাখা বন্ধ করে ঘরে থাকতে? বাচ্ছা দের পড়াশুনা বন্ধ করে বসে থাকতে বলতে পারবেন?। আসলে দাম তখন এতটাই বাড়বে যে বিদ্যুৎ কেনা আপনার পক্ষে আসম্বভ হয়ে যাবে।

৩)রিচার্জ ব্যবস্থা চালু হলে, আপনি দেখলেন হটাৎ বিদ্যুৎ হীন হয়েগেছে আপনার বাড়ী, আপনাকে বলা হবে আপনার রিচার্জ শেষ হয় পুনরায় টাকা দিয়ে রিচার্জ করুন নচেৎ বিদ্যুৎ হীন থাকুন। সকলের কাছে কি সব সময় টাকা মজুত থাকে?.এখন যেমন কোনো মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করতে পারলে পরবর্তী দুটো মাস আপনাকে সময় দেয়া হয়। কিন্তু স্মার্ট মিটার ব্যবস্থায় এর কোনো সুযোগ নেই। অর্থাত ফেলো কড়ি মাখো তেল। তাহলে ভাবুন আমাদের কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?

৪)যেহেতু মিটার রিডিং হবে না, সুতরং মিটার রিডিং করার লোকেরও কোনো প্রয়োজনও ও থাকবে না। একে তো রাজ্য তথা দেশে চলছে তীব্র বেকারত্ব। তার ওপরে আরও নতুন করে কাজ হারাবেন অসংখ্য মানুষ। এছাড়াও বিদ্যুৎ কোম্পানি গুলোর অফিসের ও গুরুত্ব থাকবে না, ফলে অনেক অফিস বন্ধ করে দেয়া হবে, ফলে কাজ হারাবেন অসংখ্য মানুষ। শুধু আমাদের লুটবে আম্বানি /আদানিরা।

৫)সব থেকে খারাপ প্রভাব পড়বে কৃষি ক্ষেত্রে। কারণ কৃষকদের চাষের জন্য বিদ্যুৎ কিনতে হবে বাজারের দর অনুযায়ী, ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ বাড়বে বহু গুন। এখন বাজারে গেলে মোটামুটি খাবার উপযুক্ত চাল পঞ্চাশ টাকার নিচে পাওয়া যায় না, তখন সেই চাল হবে কমকরে একশোর অনেক ওপরে, পারবেন তো সংসারের সকল সদস্য কে পেট ভরে ভাত খোয়াতে?. শুধু চাল কেন আটা, তেল সহ প্রতিটা সবজি হবে আকাশ ছোঁয়া, কি করবেন তখন?

সরকার যদি বলে কৃষক দের বিদ্যুৎ তের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া হবে,কিন্তু আগে কৃষকরা বাজারে থেকে চলতি দামে কিনুক পরে তাঁদের A/C এ টাকা দেয়া হবে। অর্থাত গ্যাসের ভর্তুকীর মতোন, যখন এই ব্যবস্থা শুরু হয় , তখন বামেরাই বলেছিলো এই পদ্ধতি আসলে মানুষ কে বোকা বানিয়ে, আসতে -আসতে গ্যাসের ভর্তুকি তুলে দেয়া হবে। Cpim দলের এই ভবিষ্যত বাণী আজ কিন্তু গ্যাসের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। তখন অনেক মিডিয়া বামেদের এই কথা নিয়ে ব্যাঙ্গ, বিদ্রুপ করেছিলো, কিন্তু আজ তাঁরা গ্যাস নিয়ে কোনো কথা বলে?. না বলে না। কারণ তাঁরা টাকা পেয়েছে, গল্প শেষ। মরেছি আমি আপনি

৬)এখন যেমন বিল নিয়ে অভিযোগ জানাতে হলে আমরা সরাসরি কোম্পানির কাছে দরখাস্ত দিতে পারি। কিন্তু স্মার্ট ফোন হলে , আপনার যদি কোনো অভিযোগ থাকে সেক্ষত্রে আপনাকে অভিযোগ পত্র বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা কে জানাতে হবে, ওরা সেই অভিযোগ পাঠাবে স্মার্ট ফোন কোম্পানির কাছে, তাঁরা ঐ অভিযোগের ভিত্তিতে প্রথমে দেখবে আপনার অভিযোগ জাস্টিফাই কিনা যদি দেখে অভিযোগ জাস্টিফাই তবেই তাঁরা ব্যবস্থা নেবে। তাহলেই বুঝুন গল্প কোথায় দাঁড়াবে। অর্থাত চোর বিচার করবে চুরির। মানে আর একটা পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা র মতোন।
আপনার নিরাপত্তা কি সুনিশ্চিত?.
না আপনার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত নয়। কারণ আপনার সমস্ত তথ্য চলে যাবে বেসরকারি স্মার্ট ফোন কোম্পানি গুলো হাতে। আপনাকে যে কোনো মুহূর্তে সাইবার আক্রমণের মুখে পড়তে হতে পারে।এই নেট ওয়ার্ক ব্যবহার করে কোটি -কোটি গ্রাহকের ডেটা চলে যেতে পারে কোনো বিপদজ্জনক সংস্থার হাতে। এমন কি গ্রাহকের ঘরেও হানা দিতে পারে এই ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক রা, এই রকম ঘটনা যে ঘটবে না তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?.
পরিশেষে বলবো, আজ থেকে দশ বছর আগে আচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখিয়ে একশো চল্লিশ কোটি মানুষ কে টুপি দিয়ে মসনদ এ বসে মাত্র ২%লোকের আচ্ছে দিন হলো আর বাকী দের হলো বুড়া দিন। এটাও সেই আচ্ছে দিনের একটা প্রোডাক্ট। যদিও কিছু কিছু জায়গায় যাদের স্মার্ট মিটার নিতে হয়েছে তারাও আজ এর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। যেমন বিহার, পন্ডিচেরি ইত্যাদি। আমাদের রাজেও কিন্তু এই ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। এতিমধ্যে রাজারহাট -নিউটউন এলাকার কিছু অঞ্চলে। ভাঙর অঞ্চলে করতে গিয়েছিলো পাবলিক তাঁরা করেছে। একদিকে মোদী এর দিদির মধ্যেই খুবই মিল আছে, দুজনেই আম্বানি /আদানি দের মতোন লুটেরা দের পৃষ্টপোষক, কারণ আমদানি আছে তাই।স্মার্ট মিটার বাড়িতে বসাতে দেবেন না, সংবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ করুন, তবেই বাঁচবেন, কৃষক আন্দোলন থেকে শিক্ষা নিন, সংঘবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ করলে এটাকে ঠেকানো সম্ভব। কৃষকরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।