উত্তম দে,নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ১৭/০২/২০২৪:– যখন সন্দেশখালির অত্যাচারিত, নির্যাতিতা মহিলারা সংঘবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিরোধের পথে নামলো,এবং শাসকদলের নেতা শাহজাহান,শিবু হাজরা,উত্তম সর্দার সহ তাদের বাহিনীর বিরুদ্ধে মুখ খুলে অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা প্রকাশ্যে আনলো, তখন থেকেই শাসকদলের তরফ থেকে বার বার প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, ধর্ষণ বিষয়ক কোন ঘটনাই ঘটেনি। এই প্রতিরোধ সিপিআই(এম) এর চক্রান্ত, তত্ত্বও প্রতিষ্টিত করা হয়েছে বারংবার।
স্বয়ং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় দাঁড়িয়ে দুষ্কৃতিতের পক্ষ নিয়ে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানী কথা অস্বীকার করে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আউড়েছেন। গ্রামবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের পর থেকেই শাহজাহানের পথ অনুসরণ করে শিবু ও উত্তম পলাতক হয়। এলাকাজুড়ে প্রশাসনের তরফ থেকে ১৪৪ ধারা প্রয়োগ করা হয়, আজও সন্দেশখালি প্রবেশের ১৯টি এলাকায় যা লাগু রয়েছে। দীর্ঘদিন ইন্টারনেটও বন্ধ করা হয়।একের পর এক নিরাপরাধ গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয়। এমনকি এলাকায় প্রাক্তণ সিপিআই(এম) বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে বাঁশদ্রোণী থেকে গ্রেফতার করা হয়।তিনি আজও কারাবন্দী। নির্যাতিতা মহিলাদের সাথে দেখা করতে গেলে ডি ওয়াই এফ আই রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখার্জী, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা কণীনিকা ঘোষ সহ বাম প্রতিনিধি দলকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। অথচ,এই অতিসক্রিয় পুলিশই উত্তম সর্দারকে ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে সাহস বা তৎপরতা দেখাতে পারেনি, যতক্ষণ পর্যন্ত শাসকদল তাকে সাসপেন্ড করে। উত্তমকে ধরলেও, কোন অজ্ঞাত কারণে শাহজাহান ও শিবু অধরাই থেকে যায়। যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী দুষ্কৃতিদের পাশে দাঁড়ান, সেখানে প্রশাসনই বা ধরবে কোন সাহসে?ফলতঃ যা হবার,তাই হতে থাকে।
১৪৪ ধারার নামে সন্দেশখালিকে কার্যত বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করা হয়।এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে দিন কাটাতে থাকেন। সরস্বতী পুজোয় বেশীরভাগ স্কুল তালাবন্দী থাকে। ভয়কে সাথে নিয়েই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা জীবনের মূল্যবান পরীক্ষায় বসে।
রাজ্যের শিশু ও মহিলা কমিশন এমনকি রাজ্য প্রশাসনও ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরই মধ্যে অভিযোগ ওঠে মধ্যরাতে শাসকদলের দুষ্কৃতি,স্থানীয় পুলিশের উপস্থিতিতেই এক বাড়িতে হামলা করে এমনকি কোলের শিশুকেও ছুড়ে ফেলে। যথারীতি এই শিশু ছুড়ে ফেলার অভিযোগও অস্বীকার করে কমিশন।
রাজ্যজুড়ে যখন, সন্দেশখালির বর্বরতার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে। বামেরা যখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে গিয়ে একের পর এক গ্রেফতার হচ্ছেন, ঠিক তখনই শাসকদল নজর ঘোরাতে ড্যামেজ কন্ট্রোলে অবতীর্ণ হয়। সেচমন্ত্রী সেখানে গিয়ে শাসকদলের নেতাদের দ্বারা প্রতারিতদের অর্থ ফেরত দেবার কথা ঘোষণা করে,কার্যত অত্যাচারের কথাকেই মানতে বাধ্য হন।আদালতে এক নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দির ফলে,আজ প্রশাসন বাধ্য হলো, শিবু ও উত্তমের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের ধারা রজু করতে বাধ্য হলো।
অন্যদিকে শাসকদলের সন্দেশখালি সভার পুর্বে পুলিশ সন্দেশখালির ন্যাজোট এলাকা থেকে শিবু হাজরাকে গ্রেফতার করে।প্রশ্ন উঠেছে এতদিন পুলিশ কি করছিলো?যখন শিবু সন্দেশখালিতেই ছিলো। তবে কি আদালতের চাপেই এই গ্রেফতার? নাকি শাসকদলের সভার পুর্বে ড্যামেজ কন্ট্রোলের স্বার্থে?যাতে সভায় সরকার ও দলের মানবিক মুখের প্রচার করা যায়। শাহজাহান কেন আজো অধরা?অভিযোগ তো তার বিরুদ্ধেও এলাকাবাসীর বিস্তর।
দীর্ঘদিন ধরে সন্দেশখালিতে যে জবরদখল, শারীরিক নির্যাতন এমনকি একশো দিনের কাজের অর্থ হজমের অভিযোগ রয়েছে শাসকদলের বিরুদ্ধে, তা কি শাসকদল ও প্রশাসনের মদতে আড়াল করা হবে। এভাবেই কি ত্রাসে আতঙ্কিত করে প্রতিরোধকে পদদলিত করা হবে? প্রতিবাদী কন্ঠ রোধ করা হবে?আর তারপর সবার নজর সন্দেশখালি থেকে সরে গেলে,আবার ভয়ঙ্কর বর্বরতার রাত নামিয়ে সন্দেশখালিকে সেই অত্যাচার,নির্যাতনের সন্দেশখালিতেই রেখে দেওয়া হবে। নাকি মা বোনেরা অতীতকে স্মরণে রেখে লড়াই জারী রাখবে,এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।