কৃষ্ণা সাবুই: বিশেষ প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ০১/০৯/২০২৩:- পুরো নাম ছিলো আইলাথ কুট্টেরী গোপালন নাম্বিয়ার। সবাই এ কে জি বলেই চিনতেন।তিনি ছিলেন ভারতের কম্যুনিষ্ট পার্টী(মার্কসবাদী) র প্রতিষ্ঠাতা নবরত্নের একজন সদস্য।ছিলেন দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামী।
জন্মগ্রহন করেন ১৯০৪সালের ১লা অক্টোবর কেরলের উত্তর মালাবারের মাকেরী গ্রামে।
বাবা ছিলেন ভেলুভা কান্নোথ রাইরু নাম্বিয়ার,
মা ছিলেন আইলিয়াথ কুট্টিয়ারী মাধবী আম্মা।
বাবা কেরলে সমাজসংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই কারনেই ছোটবেলা থেকেই গোপালন সমাজ সংস্কারে আগ্রহী হোয়ে ওঠেন।তাঁর বাবা রাজনীতি করতেন একবার স্থানীয় বোর্ডের নির্বাচনে অংশ গ্রহন করলে গোপালন বাবার সঙ্গে বিভিন্ন সভায় যেতেন রাজনীতিতেও আগ্রহ তৈরী হল। বাবার সব কাজে সাহায্য করতেন গোপালন।
পড়াশোনা শুরু করেন বাসেল জার্মানি মিশন পার্সি স্কুলে।তেলিচেরিতে ব্রেনেন কলেজে পড়াশোনা করেছেন। এই সময় তেলিচেরিতে কয়েকজন কংগ্রেস নেতা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আসেন,তাঁদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয় কংগ্রেস পার্টী থেকে। এই সভায় বন্ধুদের সঙ্গে গোপালন যান এবং শাস্তিও পান কিন্তু থেমে থাকেন নি,ধীরে ধীরে গান্ধীবাদী কংগ্রেসী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন,এবং শিক্ষকতা শুরু করেন।৭বছর শিক্ষকতা করেছিলেন।
এই সময়কালে তিনি অনুভব করেছিলেন দেশের মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাই।১৯৩০ সালে স্বদেশী প্রচার, চরকা প্রচলন, খাদির প্রচার, স্বদেশী দ্রব্যের প্রসারের ওপর জোর দিয়ে প্রচার চালালেন যাতে মানুষ অর্থনৈতিক উন্নতি করে ভালোভাবে বাঁচতে পারে। তিনি এই সালেই গান্ধীজীর সঙ্গে লবন সত্যাগ্রহে যোগ দেন। এরপর শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।পুরোপুরি রাজনীতিতে নিজেকে নিয়োজিত করলেন।গান্ধীজির ডান্ডি যাত্রাকে অনুসরণ করে কেরালার কংগ্রেস নেতা কে. কেলাপ্পনের নেতৃত্বে কালিকট থেকে প্যায়ানুর পযর্ন্ত একটি জ্যাঠা সংগঠিত হয়।গোপালন ছিলেন সমুখভাগে।এই সময় গ্রেফতার হন।
মুক্তি পেয়ে ওয়েনাড়ে কংগ্রেসের সংগঠনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা চালান।
১৯৩২সালে গান্ধীজি অস্পৃশ্য হরিজনদের অধিকারের জন্য নতুন করে আন্দোলনের ডাক দেন।গোপালন সেই আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে গ্রামে গ্রামে হরিজনদের নিয়ে বুঝিয়ে আন্দলোন এগিয়ে নিয়ে যান তৎকালীন কেরালায় সামাজিক পরিস্থিতিতে কাজটি সহজ ছিলনা। কন্ডোথ থেকে প্যায়ানুর পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন,কিন্তু বর্নবাদীরা এই মিছিলে নির্মম অত্যাচার করে,গোপালন গুরুতর আহত হন।পরে সুস্থ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন।
গোপালনের প্রচেষ্টায় কেরালা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে গুরুভাইয়ুর মন্দিরে অস্পৃশ্য হরিজনদের প্রবেশের দাবীতে সত্যাগ্রহকে সমর্থন করার প্রস্তাব গ্রহন করে।এই আন্দোলন করার জন্য গোপালন গ্রেফতার হন এবং কারাগারে অকথ্য নির্যাতন সহ্য করেন।
কারাগারে পরিচয় হয় পি কৃষ্ণ পিল্লাই এর সঙ্গে।পিল্লাই ছিলেন গান্ধীবাদী।কিন্তু কংগ্রেসের প্রতি ছিলেন বীতশ্রদ্ধ। তখন তিনি সাম্যবাদী সমাজতন্ত্রী ভাবধারায় আকৃষ্ট।
গোপালন তাঁর প্রতি অনুরক্ত হয়ে যান।এরপর তিনি মুক্তি পেয়ে আবার আন্দোলন করার জন্য গ্রেফতার এবং বেল্লারী কারাগারে যেতে হয়।কিছুদিন পর মুক্তি পান।১৯৩৪সালে পাটনায় কংগ্রেস সোসালিষ্ট পার্টী প্রতিষ্ঠিত হয়।কংগ্রেসের দক্ষিনপন্থীদের আচার আচরন ভালো লাগেনি কারন শ্রমিক কৃষক দের অর্থনৈতিক সংগ্রামকে জাতীয় সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করার বিপক্ষে অবস্থান করায় গোপালন ক্ষুব্ধ হন এবং সোসালিষ্ট পার্টীতে যোগ দেন।এবং কেরালা প্রদেশ কংগ্রেসের সম্পাদক হন।এই সময়কালে গোপালন শ্রমিক কৃষকের ওপর শোষন তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি কিভাবে হবে এই ভেবে গভীর পড়াশোনা শুরু করেন।
এই সময়ে কেরালায় দুর্ভিক্ষ হয়।দুর্ভিক্ষ পিড়ীত মানুষদের নিয়ে মিছিল করেছেন তেলিচেরি থেকে মাদ্রাজ পর্যন্ত। কত মানুষ তাঁর কথা শুনতে আসতো।এই সময় গোপালন কে সাহায্য করেছেন সোসালিষ্ট নেতা পরবর্তীতে তাঁর কম্যুনিষ্ট পার্টীতে সহকর্মী পি রামমুর্তী। এই জ্যাঠার জন্য আবার গ্রেফতার হলেন।৯মাস পর মুক্তি পান। বোম্বেতে কম্যুনিষ্ট পার্টীর ট্রেড ইউনিয়নের কার্যকলাপ দেখে শুধু গোপালন নন্ সোসালিষ্ট পার্টীর সবাই কম্যুনিষ্টদের সঙ্গে কাজ করবেন সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৪০ সালে গোপালন সরাসরি কম্যুনিষ্ট পার্টীতে যোগ দেন। যোগ দেবার পর ত্রিচি তাঞ্জাভুর মাদুরাইতে রেল শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠনের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
এই সময় পুলিশ আবার গ্রেপ্তার করার জন্য তৈরী ছিলো গোপালন ১৯৪৬সাল পর্যন্ত অন্তরীন ছিলেন পার্টীর নির্দেশে।
১৯৪৬সালে কালিকট বিধানসভা নির্বাচনে প্রকাশ্যে আসায় গ্রেফতার হন। ১৯৪৭এ জেলের ভিতরে থেকেও অভিনব কায়দায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন। ১৯৫২সালে তিনি লোকসভার সদস্য হন এবং ৫বছর ছিলেন। সংসদের ভিতরে বাইরে সবসময় শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের জন্য লড়াই করেছেন।তাঁর রাজনৈতিক জীবনের যে ইতিহাস সে শুধু মানুষের জন্য লড়াই।তিনি মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন।এই স্বদেশপ্রেমী সাম্যবাদী ব্যক্তিত্ব ২২শে মার্চ ১৯৭৭সালে প্রয়াত হয়েছেন।জন্মদিনে চিন্তন জানায় শ্রদ্ধা রক্তিম অভিনন্দন