দেশ রাজনৈতিক

প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবোলো এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সংকীর্ণ রাজনীতি


বিশেষ প্রতিবেদন: মল্লিকা গাঙ্গুলি: চিন্তন নিউজ:২১শে জানুয়ারি:–  ২৬শে জানুয়ারী সমগ্র ভারত বাসীর কাছে একটি বিশেষ নস্টালজিক দিন। আসলে ২৬ জানুয়ারি দিনটিই প্রকৃত পক্ষে আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত কে স্বাধীনতা দান করলে ও দীর্ঘ তিন বছর পর ১৯৫০ সালের এই ২৬ জানুয়ারি থেকেই ভারতবাসী নিজস্ব শাসনতন্ত্র দ্বারা নিজেদের প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তাই ১৯৫০এর ২৬শে জানুয়ারি থেকেই সমগ্র দেশব্যাপী  যথেষ্ট ভাব গম্ভীর পরিবেশে “প্রজাতন্ত্র দিবস” পালিত হয়।

এই বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম দিবস। এই পঁচাত্তর তম স্বাধীনতার প্রাক্কালে প্রজাতন্ত্র দিবসকে বিশ্ববাসীর সামনে তথা সারা দেশের কাছে বিশেষ মর্যাদায় পালন করার জন্য নানান পরিকল্পনা কেন্দ্র সরকার এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার গুলি গ্রহণ করেছে।
কেন্দ্র সরকার এই বিশেষ দিনে রাজধানী দিল্লীর রাজপথে এক বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। যে শোভাযাত্রায় দেশের প্রায় সমস্ত রাজ্য থেকে বিশেষ বিশেষ ট্যাবোলো প্রদর্শনের কথা। সেই অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ থেকেও যথাযথ নিয়ম মেনেই সমগ্র দেশবাসীর আবেগ বাঙালির গর্ব নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি ট্যাবোলো প্রস্তুত করে তা প্রদর্শন করার প্রস্তাব রাখে। আসন্ন ২৬ শে জানুয়ারির মাত্র কয়েকদিন আগে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবোলো টি বাতিল করা হয়েছে! এটি ঐ দিন দিল্লীর রাজপথে নামবে না! শুধু পশ্চিমবঙ্গ না, কেরল, তামিলনাড়ু সহ আরো কয়েকটি অ- বিজেপি শাসিত রাজ্যের ট্যাবলো কেও বাতিল করা হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সমস্ত রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে আপামর বাঙালী তীব্র বিরোধিতায় সামিল হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এর তীব্র প্রতিবাদ করে কেন্দ্র সরকারকে চিঠি লেখেন। কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী আগেই এই কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এমন কি বাংলার বিশিষ্ট বিজেপি নেতা তথাগত রায় ও কেন্দ্রকে এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে অনুরোধ করেন।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ  তৃণমূল- বিজেপির সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেও বাংলার বাম দল গুলি কেন্দ্রের এই কাজের চরম বিরোধিতা করেছে। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর স্বাক্ষরিত বিবৃতি পত্রের মাধ্যমে কেন্দ্র সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে বলা হয়, ২৬ শে জানুয়ারির প্যারেডে মহান নেতাজীর জীবনচিত্র ও কর্ম নিয়ে বাংলা থেকে যে বিশেষ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল তা বাতিল করে দিয়ে বিজেপি সরকার ঔপনিবেশিকতা বিরোধী সংগ্রামের ঐতিহ্যকে অপমান করতে চাইছে। এর দ্বারা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধ্বংস করার যে প্রচেষ্টা কেন্দ্র করছে বামফ্রন্ট সম্পূর্ণ তার বিরোধী। এই অনৈতিকতা বামফ্রন্ট কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারেনা। বিজেপি সরকার প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা আন্দোলনের পীঠস্থান বাংলা এবং বাঙালির গর্ব প্রিয় নেতাজীর প্রতি অবমাননা করছেন। এর আগেও বামফ্রন্ট থেকে ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজীর জন্মদিন টি “দেশপ্রেম দিবস” হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব জানানো হয়। কিন্ত কেন্দ্র সরকার সেই প্রস্তাবে কোনো সাড়া না দিয়ে নেতাজীর মতো মহান নেতা কে অসম্মান করতেও দ্বিধা করেনি।

এ প্রসঙ্গে আরও জানা যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও কেরালা, তামিলনাড়ু, ঝাড়খণ্ড এমন কি দিল্লীর ট্যাবোলো ও কেন্দ্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বাতিল করেছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন এবং ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন বার বার কেন্দ্র কে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্ত মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে যে, প্রজাতন্ত্র দিবস পালন সংক্রান্ত একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার নাম “সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি” এবং এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড সাজানো হয়েছে।  আরও বলা হয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে পাঠানো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সারা দেশ থেকে মোট ৫৬ টি ট্যাবোলো আসে যার মধ্যে ২১ টি ট্যাবোলো বিশেষ দিনে প্রদর্শনীর জন্য এই কমিটির অনুমোদন পেয়েছে। কাজেই কেন্দ্র সরকারের এই  বিষয়ে কোনও হাত নেই বলে রাজনাথ সিংহ সাফাই দিয়েছেন। যদিও মন্ত্রকের দেওয়া এই অযৌক্তিক যুক্তির মর্মার্থ বুঝতে রাজনৈতিক মহলের অসুবিধা হয় নি। একথা স্পষ্ট যে, যে কয়টি রাজ্যের প্যারেড ট্যাবোলো বাতিল করা হয়েছে তার সব গুলোই অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য।

বুদ্ধিজীবী মহলের মতে কেন্দ্র দেশের স্বাধীনতার মত আবেগ কে নিয়েও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এক ঘৃণ্য রাজনীতি করছে, যা দেশবাসী ভালো চোখে দেখবে না। স্বাধীনতার মত আবেগ ঘন বিষয়কে নিয়ে এই বিভাজনের রাজনীতি সমগ্র দেশের কাছে দুর্ভাগ্যজনক।



মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।