শান্তনু বোস: চিন্তন নিউজ:২৮/০৮/২০২৪:- সব কিছুই সিস্টেমে বাঁধা। নিখুঁত সিস্টেম। শাসক, প্রশাসন, আদালত, বিরোধী দল, সংবাদ মাধ্যম,এই সবটা নিয়েই সিস্টেম। এর বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। শাসন চলছে, শোষণ চলছে, অপরাধ চলছে, দুর্নীতি চলছে সবটা চলছে এই সিস্টেমের মধ্যে। রাস্তায় নেমে মিটিং মিছিল করে, আদালতে গিয়ে আইনের পথে, সব দিক থেকে লড়াই চলছে তো চলছেই। সংবাদমাধ্যম সংবাদ পরিবেশ করছে, মানুষ শুনছে, গিলছে। সিস্টেম প্রবাহমান থাকছে। সিস্টেমের নেশায় বুঁদ হয়ে মানুষ থাকছে। নিজেকে দুমড়ে মুচড়ে সঙ্কুচিত করে শুধুমাত্র বেঁচেবর্তে থাকছে।
কামদুনিতে মেয়েটাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল পৈশাচিক ভাবে। শরীর থাকলে যেমন একটুআধটু জ্বরজালা হয়, তেমনই একটুআধটু রেপও হয়। পার্কস্ট্রিটের ধর্ষণ কান্ডে মেয়েটার চরিত্রের দোষ ছিল। তদন্তকারি অফিসার দময়ন্তী সেন বদলি হয়ে গেলেন। সিউড়ি ধর্ষণ কান্ড ছোটছোট ছেলেদের একটু আধটু দুষ্টুমি। ধর্ষিতাদের দর বেঁধে দেওয়া। শাসক, আদালত, বিরোধী দল, সংবাদমাধ্যম সবটাই সিস্টেমে চলছে।
আর জি কর মেডিকেল কলেজ। রাজ্যের রাজধানীর বুকে অবস্থিত। একজন মহিলা ডাক্তারের শুধুমাত্র ধর্ষণ আর খুনের ঘটনা নয়। বিভৎস পৈশাচিক অত্যাচার। বিকৃত মস্তিষ্কের নরপশু ছাড়া এ ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়। সর্বংসহা, দুমড়ে মুচড়ে সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়া মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। একটাই দাবি, বিচার চাই। এই দাবি শাসকের কাছে নয়, দাবি সিস্টেমের কাছে। শাসক, প্রশাসন, আদলত, সংবাদমাধ্যম, বিরোধী দল নিয়ে যে গতানুগতিক সিস্টেম, সেই সিস্টেমের রাজনীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের রাজনীতির দাবি। এ লড়াই কখনোই অরাজনৈতিক লড়াই নয়। এটাই প্রকৃত রাজনৈতিক লড়াই। রাজনৈতিক দল মুক্ত সাধারণ মানুষের স্বতস্ফুর্ত গণবিক্ষোভ। আগস্ট মাসের নয় তারিখ থেকে আজ সাতাশ তারিখ। এমন স্বতস্ফুর্ত গণবিক্ষোভ পশ্চিমবঙ্গ আগে কখনো দেখেনি। হাতে মোমবাতি নিয়ে শুরু হওয়া মিছিল, ক্রমশ মশাল মিছিল হয়ে উঠলো। রাতের অন্ধকারের নরপশুদের বিরুদ্ধে রাতের দখল নেওয়া বিদ্রোহ। মিছিলের স্লোগানে বদল আসতে শুরু করলো। দিন যতো যাচ্ছে মিছিলের শরীরি ভাষাও চরমপন্থী হচ্ছে।
সিস্টেম তো আর হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না। সিস্টেম তার কৌশলেই নতুন রাস্তা নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলের ডিভিডেন্ড তোলার রাস্তা। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততাকে দলীয় রাজনীতিকরনের রাস্তা। মানুষ যখন নবান্নকে রাস্তায় নামাতে চাইছে, তখন সাম্প্রদায়িক দলীয় রাজনীতির কারবারিরা গণবিক্ষোভের রাস্তাটাকেই নবান্ন মুখি করে গণবিক্ষোভটাকেই বিভ্রান্ত করতে চাইছে। সংবাদমাধ্যম তো সিস্টেমেরই অংশ। আগুনের উত্তাপে রুটি সেঁকে নেওয়া।
মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিগড়ে যাওয়া সিস্টেমটাকে শুধরে দেওয়ার। কোনো টালবাহানা চলবে না। সাধারণ মানুষের গণবিক্ষোভ বিচার আদায় করে আনবেই।
“প্রত্যহ যারা ঘৃণিত ও পদানত,
দেখ আজ তারা সবেগে সমুদ্যত;
তাদেরই দলের পিছনে আমিও আছি,
তাদেরই মধ্যে আমিও যে মরি-বাঁচি।
তাইতো চলেছি দিন-পঞ্জিকা লিখে—
বিদ্রোহ আজ! বিপ্লব চারিদিকে॥”