দেশ

উত্তরপ্রদেশে বন্ধুত্বের শাস্তি – মাথা মুড়িয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে যুগলকে গ্রামে ঘোরানো হলো


রত্না দাস: চিন্তন নিউজ:২৯শে আগস্ট:- ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের কনৌজ জেলায়। যোগী আদিত্যনাথ এর রাজ্যে আবার এক অমানবিক ঘটনা ঘটলো। বছর ৩৭এর এক মহিলা ও বিশেষভাবে সক্ষম এক যুবকের বন্ধুত্ব। এটাই তাদের অপরাধ। তাদের এই বন্ধুত্ব গ্রামবাসীরা মেনে নিতে পারেনি। কিছুদিন আগে ওই মহিলার স্বামী মারা গিয়েছেন আর একজন বিশেষভাবে সক্ষম এক যুবক রোজকার জীবনের কঠিন লড়াইয়ে একে অপরের সাথে পরিচয়ের পর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দুজনে দুজনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু বিধবার সাথে পরপুরুষের এই বন্ধুত্ব মেনে নিতে পারেনি গ্রামবাসীরা। তাদের চোখে এটা বিশাল বড় এক অপরাধ। এটাই তাদের অভিযোগ।

সেই অভিযোগ অপরাধেই গ্রামবাসীরা দু’জনকে বেধড়ক মারধর করে তারপর তাদের মাথা মুড়িয়ে, মুখে চুনকালি মাখিয়ে, গলায় জুতার মালা পড়িয়ে পুরো গ্রাম ঘোরায়। এ খবরের সূত্রে বৃহস্পতিবার ফের শিরোনামে যোগী আদিত্যনাথ এর উত্তর প্রদেশ। এই ঘটনাটির একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায় মুখে কালি মাখিয়ে, মাথা ন্যাড়া করে, জুতোর মালা পরিয়ে দুজনকে গোটা গ্রাম ঘোরানো হচ্ছে। পিছনে ঘুরছে একদল পুরুষ ও মহিলা সেই ‘শাস্তির’ সাক্ষী।এহেন দাওয়াইয়ের ভাবনা ওই বিধবার শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের। আত্মীয়রা এই বন্ধুত্ব ভালো চোখে দেখেনি। সম্প্রতি দুজনকে একসাথে দেখতে পেয়েই এই বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটায়। ৮ জনের নামে এফআইআর থাকলেও পুলিশ এ পর্যন্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করছে।

গত কয়েকদিনের মধ্যে একাধিক ধর্ষণ-খুনের জেরে ইতিমধ্যেই যোগী রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিরোধী পক্ষ। লখিমপুর খেরি জেলায় মাত্র দশ দিনে দুটি ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার আরেক দলিত কন্যার খোবলানো মৃতদেহ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার রাতে সেই সন্দেহে পুলিশ ধর্ষণ বলে সিলমোহর দেয়় । খবর সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় দ্বাদশ শ্রেণীর ওই দলিত কন্যা স্কলারশিপের ফর্ম পূরণ করতে গ্রাম থেকে বেরিয়েছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও সে বাড়ি না ফেরায় বাড়ির লোক তার খোঁজ করতে শুরু করে ও পুলিশে খবর দেয়়। পরে গ্রাম থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে এক শুকনো জলাশয় থেকে তার খোলানো দেহ পাওয়া যায়। তরুনীর দেহে ঘাড়ে ও অন্যান্য অংশে আঘাতের চিহ্ন মেলে। পড়ে সেখানকার এসপি জানান ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণ প্রমাণিত হয়েছে। পুলিশ তদন্তে নেমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পেয়েছেন যার জেরে অপরাধী গ্রেপ্তার হবে বলে প্রশাসন জানায়।

গত ১৫ই আগস্টও ঐ খেরি জেলায় ১৩ বছরের দলিত কন্যাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয় । তারপর তার চোখ খুবলে নিয়ে জিভ কেটে আখক্ষেতে ফেলে দেওয়া হয় তার দেহ। এই ঘটনার এক সপ্তাহ আগেই উত্তরপ্রদেশের হাপুুড়ে ছয় বছরের এক বালিকা কে ধর্ষণ করা হয়। সে এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে।

এইসব ঘটনায় বিরোধীপক্ষ সুর চড়িয়েছে। তাদের বক্তব্য বিজেপি শাসিত রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা বলে কিছুই নেই। রামের নামে মন্দির তৈরি হচ্ছে অথচ রাজ্যের নেই কোনো আইন-কানুন। চন্দ্রশেখর আজাদ বলেন, ‘যোগীর রাজ্যে বেটিদের জন্য কোন সুরক্ষা নেই ।এখানে মেয়েরা কোন সময়ই নিরাপদ নয় ।সর্বত্র এক ভয়ের পরিবেশ ।যোগী আদিত্যনাথ এর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে বিচার হবে এই সব অপরাধের। কিন্তু জনগনের মনে প্রশ্ন আইন-শৃঙ্খলা যদি এতই কঠিন তবে কেন বারবার ঘটছে এত অপরাধ? এবং কথাটা যে ভুল নয় তা প্রমাণ করে দিল কনৌজের ঘটনা।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।