দেশ

সিপিআই(এম )কেন্দ্রীয় কমিটির দেশব‍্যাপী দাবীসপ্তাহ কর্মসূচিতে উত্তাল ত্রিপুরা।


কিংশুক ভট্টাচার্য:চিন্তন নিউজ:- ২৭শে আগস্ট:-সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটি গত ২০শে আগস্ট থেকে ২৬শে আগস্ট পর্যন্ত ষোল দফা দাবীর ভিত্তিতে দাবী সপ্তাহ পালনের ডাক দিয়েছিল। মানুষের কাছে ঐ ষোলদফা দাবী পৌছে দেওয়া এবং দাবীগুলির পক্ষে দেশব‍্যাপী মানুষকে সংগঠিত করার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ থেকে বিরত করতে দেশবাসীকে উদ‍্যোগী করাই ছিল পার্টির লক্ষ্য। ১৬ দফা দাবিগুলো হ’ল :-
ক) আয়করের আওতার বাইরের ব‍্যাক্তিদের মাথাপিছু মাসিক ৭৫০০ টাকা করে দিতে হবে। খ) প্রত‍্যেককে বিনামূল‍্য আগামী ছয়মাস মাথাপিছু দশকেজি খাদ‍্য শস‍্য দিতে হবে। অবিলম্বে বেকারভাতা চালু করতে হবে।
গ)মনরেগায় বছরে নূন‍্যতম ২০০দিনের কাজ এবং বর্ধিত মজুরি দিতে হবে ,এছাড়া এই প্রকল্প শহরাঞ্চলেও বিস্তৃত করতে হবে।ঘ)বর্তমান শ্রম আইন বাতিল/সংশোধন/স্থগিত করে শ্রমকোড চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে ও কাজের সময়বৃদ্ধির পরিকল্পনা রদ করতে হবে।ঙ) আন্তরাজ‍্য পরিযায়ী শ্রমিক আইন প্রত‍্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করা চলবে না বরঞ্চ তা শক্তিশালী করতে হবে।চ)স্বাস্থ‍্য খাতে জিডিপি’র তিন শতাংশ বরাদ্দ ও স্বাস্থ‍্য ব‍্যবস্থার তিনটি স্তরকেই ঊন্নত করতে হবে।ছ)ব‍্যাঙ্ক/বীমা, রেল, পেট্রোলিয়ম, কয়লা খনি, বিদ‍্যুত, প্রতিরক্ষা উৎপাদন সহ রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা বেসরকারি- করন বন্ধ করো।জ) অত‍্যাবশ‍্যকীয় পণ‍্য আইন প্রত‍্যাহারের অধ‍্যাদেশ রদ করো এবং এপিএমসি আইনের উন্নয়ন করে রাজ‍্যগুলির মধ‍্যে পণ‍্য পরিষেবার অবাধ চলাচলকে নিশ্চিত করতে হবে।ঝ) স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাত্র-ছাত্রীদের পূর্বের ফলাফলের ভিত্তিতে ডিগ্রী দিতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির নামে শিক্ষার বাণিজ্যকীকরণ ও গৈরিকীকরণ বন্ধ কর।ঞ)এসসি/এসটি/ওবিসি সংরক্ষণ কঠোরভাবে মানতে হবে। সরকারি দপ্তরগুলিতে অবিলম্বে শূন‍্যস্থানে নিয়োগ করতে হবে ট) যেহেতু ডিজাষ্টার ম‍্যানেজমেন্ট আইনে লকডাউন ঘোষণা হয়েছে তাই আইনানুসারে অতিমারিতে ক্ষতিগ্রস্থ সব পরিবারকে এককালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে ও ডিজাস্টার ম‍্যানেজমেন্ট’র যথাযথ ব‍্যহারের ব‍্যবস্থা করতে হবে। ঠ) পিএম কেয়ার নামে তৈরী বেসরকারি ফান্ড সংগৃহীত সমস্ত অর্থের হিসেবসহ যথাযথভাবে ব‍্যাবহারের ব‍্যবস্থা করতে হবে ড) জম্মু ও কাশ্মীরে যাঁদের দুহাজার ঊনিশের আগষ্ট থেকে বন্দী করে রাখা আছে তাঁদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে ও নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব‍্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ঢ) ইউএপিএ, এনএসএ ও দেশদ্রোহী প্রতিরোধ আইনে যাঁদের বন্দী করা হয়েছে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তি দিতে হবে এবং এই দানবীয় আইনসমূহ বাতিল করতে হবে ণ) এনভায়রনমেন্ট এসেসমেন্ট এ্যক্ট দুহাজার কুড়ি অবিলম্বে প্রত‍্যাহার করতে হবে।প) দলিত ও সংখ‍্যালঘুদের উপর সহিংস্র আক্রমণ, মহিলা নির্যাতন, ধর্ষণ, গার্হস্থ‍্য ও যৌন নির্যাতনে যুক্ত ও আদিবাসীদের উপর অত‍্যাচারে যুক্তদের নিয়ন্ত্রনে কঠোর আইন প্রণয়োন করতে হবে।

উক্ত ষোল দফা দাবির সমর্থনে সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ‍্য কমিটির নির্দেশে রাজ‍্যের সর্বত্র পার্টির সদস‍্য ও গণসংগঠনের সদস‍্যরা সক্রিয় ভাবে লাগাতার বিগত সাতদিন রাজ‍্যজুড়ে প্রায় প্রতিটি মানুষের সাথে সংযোগ রক্ষা করে নিবিড় প্রচারের মধ‍্যে দিয়ে ব‍্যাপক সমর্থন আদায়ে সমর্থ হন। বুধবার ছিল এই কর্মসূচির শেষ দিন। সিদ্ধান্ত মতো প্রচারের আওতায় আসা মানুষদের সাথে নিয়ে রাজ‍্যজুড়ে মিছিল, সভা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহন করেছিল সিপিআইএম ত্রিপুরা রাজ‍্য কমিটি। ত্রিপুরার সব কটি জেলা ও মহকুমার সব জনপদ ও পথ আজ সকাল থেকে সারাদিন চলে যায় লালঝান্ডার দখলে।

গত সোমবার রাত্রি থেকে মঙ্গলবার রাত্রি পর্যন্ত বিজেপির বাইক বাহিনী আইপিএফটির গুন্ডাদের সাথে নিয়ে সাব্রুম সহ বিভিন্ন মহকুমায় বাড়ি বাড়ি লাগাতার মানুষকে হুমকি দিয়ে বুধবারের কর্মসূচিতে জমায়েত কমানোর চেষ্টা করেছে। আর বুধবার সকালে ঐ বাইক বাহিনী ও বিজেপির নেতৃবৃন্দকে হতচকিত করে ত্রিপুরার সব রাস্তায় লালঝান্ডা হাতে হাজার হাজার মানুষ জমায়েতগুলিতে সামিল হয়েছে। মরিয়া হয়ে বাইক বাহিনী হিংস্র আক্রমণ নামিয়ে আনে জমায়েতে অংশগ্রহণকারিদের উপর। গোটা দেশ পুনরায় দেখলো সাব্রুম, উদয়পুর আগরতলা সহ একরোখা নির্ভীক ফ‍্যাসিস্ত বিরোধী ত্রিপুরাকে। আইপিএফটি ও বিজেপির সন্ত্রাসী দুস্কৃতিরা গোটা ত্রিপুরাকে রক্তে ভাসিয়েও কর্মসূচিকে ব‍্যর্থ করতে পারে নি। প্রতিটি জায়গাতেই জনগণের দৃঢ় প্রতিরোধের সামনে পিছু হটে পালাতে বাধ‍্য হয়েছে।

প্রাথমিক খবরে জানা গেছে এই ঘটনায় ৩৫ জনের বেশী কর্মী আহত হয়েছে। এঁদের মধ‍্যে পাঁচ জনের আঘাত গুরুতর । উদয়পুরের পার্টির সম্পাদক মন্ডলীর এক জন সদস‍্য এবং একজন খুবই অল্প বয়সী ছাত্র কমরেডকে জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরের ব‍্যাবস্থা করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার তদারকির কাজে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ জিতেন চৌধুরী।

আগরতলার জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম এর পলিটব্যুরো সদস‍্য ও ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী মানিক সরকার, রাজ‍্য সম্পাদক গৌতম দাস ও রাজ‍্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য তপন চক্রবর্তী, মানিক দে, বিজন ধর, নারায়ন কর, রমা দাস, বাদল চৌধুরী। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পবিত্র কর, শংকর প্রসাদ দত্ত, কৃষ্ণা পান্চালী ভট্টাচার্য্য প্রভৃতি নেতৃবৃন্দ। সব মহকুমা ও অন‍্যান‍্য এলাকায় বসবাসকারি সব নেতৃত্ব সামনে উপস্থিত থেকে নেতৃত্বদান করেন।

সিপিআইএম নেতৃবৃন্দের দাবী বুধবার তাদের কর্মীদের অদম‍্য জেদ ও দৃঢ়তার কাছে রাজ‍্যে আইপিএফটি র ও বিজেপির রাজনৈতিক শক্তি যেমন সম্পূর্নভাবে পরাস্ত হয়ে পিছু হঠতে বাধ‍্য হয় তেমনই রাজ‍্যের পুলিশ প্রশাসন সিপিআইএম এর কাছে আত্মসমর্পন করে। আগরতলায় শান্তিপূর্ণ ভাবে সভা চলাকালীন রাজ‍্য পুলিশ প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী মানিক সরকার সহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বাসে তুললেও গ্রেপ্তারের স্থল থেকে এক ইঞ্চিও এগোতে ব‍্যার্থ হয়। জমায়েতে উপস্থিত কর্মীরা পুলিশবাস ঘিরে দাবী করেন হয় মানিক সরকার সহ নেতৃবৃন্দকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে নতুবা উপস্থিত হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করতে হবে। শৃঙ্খলাবদ্ধ এই জনসমুদ্রের উচ্ছাসের সামনে ভেঙ্গে পরে পুলিশের মনোবল ।তারা বাধ‍্য হয় নিঃশর্তে মানিক সরকার সহ নেতৃবৃন্দকে ঐ স্থানেই মুক্তি দিতে।

সন্ধ‍্যেতে রাজ‍্য সম্পাদক গৌতম দাস সাংবাদিক সম্মেলন করে কর্মসূচির এই অভূতপূর্ব সাফল‍্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি দাবী করেছেন, “আইপিএফটি ও বিজেপির দুস্কৃতিদের ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও আক্রমণ সংগঠনকারিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব‍্যাবস্থা করতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “রাজ‍্য জুড়ে কর্মীরা যে অনমণীয় দৃঢ়তার সাথে সমস্ত বাধা- বিপত্তি ও আক্রমণের মোকাবিলা করে কর্মসূচি সফলভাবে পালন করেছেন। তাঁদের এই উদ‍্যোগ আমাদের আগামীর সাফল‍্যের প্রশ্নে আশাবাদী করে তুলেছে। সিপিআইএম রাজ‍্য কমিটি তাঁর কর্মীদের রক্তিম সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছে।”


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।