চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:৩০/১১/২০২০- সিপিআই(এম) এর জন্মলগ্ন থেকেই প্রমোদ দাশগুপ্ত ছিলেন দুরন্ত সংগঠক।। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি এবং সিপিআইএম এর জন্মলগ্ন থেকে আমৃত্যু সেই দলের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্ত। এই প্রবাদপ্রতিম নেতার অবদান এখনকার প্রজন্মের কমরেডদের অজানা। তাঁর মৃত্যদিনে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি তাঁর আত্মত্যাগ, কমিউনিস্ট আদর্শের প্রতি একনিষ্ঠ থাকার বজ্রকঠিন মনোভাব। দীর্ঘ ১৮ বছর দলের একচ্ছত্র সম্পাদক থাকাকালীন দুবার যুক্তফ্রন্ট ও দুটি বামফ্রন্ট সরকারেরই চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। সেসময় বাম রাজনীতিতে একই সঙ্গে উচ্চারিত হোত দুটি নাম, কমঃজ্যোতি বসু ও প্রমোদ দাশগুপ্ত।
কমঃ প্রমোদ দাশগপ্তের অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা ও রণকৌশল গ্রহণের ক্ষুরধার ক্ষমতা ছিল, যা আজকের দিনের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রামে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ১৯৬৪ সালে নতুন পার্টি গঠনের সময় থেকে ক্রমশ সারা দেশে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বাম শক্তি হিসেবে নিজেদের বিকশিত করার সময়কালে আরও কয়েকজনের সঙ্গে প্রমোদ দাশগপ্তের অবদানও ছিল অপরিসীম। ভারতীয় জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের রণনীতি ও রণকৌশলের ধারাবাহিক অনুশীলন ও উপযুক্ত পরিস্থিতিতে মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে যে কাজ করা সম্ভব হয়েছে, তাতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে বুর্জোয়া-জমিদারী ব্যবস্থার বিপরীতে বাস্তবসম্মত বিকল্প গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাম – গনতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়ে তোলাই যাঁর লক্ষ্য ছিল। অবিভক্ত পার্টিকে ভেঙে নতুন পার্টি গড়ে তুলেছেন, যা প্রকৃতপক্ষে একটি ফর্ম ভেঙে আর একটি ফর্ম গড়ে তোলার সমতুল্য। অনেক বাঁক, মোড় পেরিয়ে রক্তাক্ত পথ অতিক্রম করে বিশাল জনসমর্থন নিয়ে এই যে সিপিআইএম পার্টির গড়ে ওঠা তাতে তিনি ছিলেন এক অক্লান্ত সৈনিক।
পলিটব্যুরোর সদস্য হিসেবে একসময় ত্রিপুরা, আসাম, বিহার, উড়িষ্যার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তরুণ নেতাদের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে তুলে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ছিল তাঁর জুড়ি মেলা ভার। জেলায় জেলায় তৈরী করেছেন নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্ব। সেসময় একসঙ্গে তিনটি লড়াই তাঁকে একসঙ্গে লড়তে হয়েছিল। একদিকে সোভিয়েত-পুষ্ট সংশোধনবাদ, চীনের পার্টির মদতে নকশালপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই আবার কংগ্রেস সরকারের আধা ফ্যাসিবাদী আক্রমনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ঘর ছেড়ে আজীবন কাটিয়েছেন পার্টি কমিউনে, ওটাই ছিল তাঁর পরিবার। ব্যক্তিগত কোন উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁর ছিল না। কোনোদিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যখন দেখি হিসাব বহির্ভূত অর্থ ও উন্নত প্রযুক্তিকে ব্যাবহার করে সাম্প্রদায়িকতা এবং জাতীয়তাবাদের মুখোশে যুদ্ধের জিগির তুলছে বিজেপি, বারে বারে লঙ্ঘিত হচ্ছে সংবিধান স্বীকৃত অধিকার, ঠিক এই সময়ে প্রমোদ দাশগুপ্ত, হরেকৃষ্ণ কোঙার, মুজফ্ফর আহমেদের থেকেই শিক্ষা নিতে হবে বর্তমান প্রজন্মকে। কমিউনিজমের শিক্ষাই তৈরি করবে ভবিষ্যৎ চলার পথ।