জেলা

মুক্ত হৃদয়ের মানুষ


অভিজিৎ দাসগুপ্ত, নিজস্ব প্রতিবেদন:চিন্তন নিউজ:২৮শে অক্টোবর:- ‘যত্ত সব বুক চেরা — বুড়ো হাবড়ার দল!’ আড়ালে আবডালে শুনতে হ’ত এসব কথা। তরুণদের নাকি এসব নিয়ে ক্ষোভ আছে। সংবাদমাধ্যমে বিষয়টিকে আরও জাগিয়ে দেওয়া হয়েছে – ‘পক্ককেশ পার্টি’ বলে। বুক চেরা বলতে ওপেন হার্ট সার্জারি – মুক্ত হৃদয়ের মানুষ। সেই মুক্ত হৃদয়ের মানুষগুলির অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে উঠেছে সরলদীঘি বোড়ালের ‘ঋষি রাজনারায়ণ শ্রমজীবী ক্যান্টিন – সোনারপুর পশ্চিম’।

“কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না. তা হবে না, …. গত ১১ অক্টোবর’২০ পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৩০ জন শ্রমজীবী মানুষ ২০ টাকা দিয়ে খাবারের প্যাকেট সংগ্রহ করেন। আমরা বিনামূল্যে এই খাবার দিচ্ছি না। তাতে দাতা গ্রহীতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আমরা তা চাই না। তারা আত্মমর্যাদাবোধ থেকেই মাথা উঁচু করে এই খাবার সংগ্রহ করেন। লকডাউন ও অতিমারীর কারণে শ্রমজীবী মানুষের জীবিকা নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। আয় কমে গেছে। প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট থেকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কী ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন দেশের সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে যত সম্ভব মানুষকে রিলিফ দেওয়া যায় সেই প্রচেষ্টায় এই শ্রমজীবী ক্যান্টিন।

যে কাজ দেশের রাজ্যের সরকারের করার কথা তারা তা করছে না বলেই আমাদের করতে হচ্ছে। আমরা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নই। এটা আমাদের কাজও নয়। আমরা মানুষের দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলি যতক্ষণ না দাবি আদায় হচ্ছে ততক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে হয়। যদিও এই দুই সরকারই অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী। মানুষের দাবিকে কর্ণপাত করে না। তাদের নীতির কারণেই সাধারণ মানুষের এই দৈন্যদশা। আর আম্বানি-আদানিদের সম্পদ বাড়ছে।

আমরা মানুষের ক্ষোভকে আরও ঘৃতাহুতি দিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারি না। তাই লড়াই আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি যতটা সম্ভব শ্রমজীবী মানুষের ক্ষুধা মেটানোর প্রচেষ্টা। কারণ খালি পেটে তো বিপ্লব হয় না। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি অর্থের টোপ দিয়ে কিছু মানুষকে বিপথগামী করতে পারে সহজেই।

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের কথায়:

‘….ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন,

বেলা বয়ে যায়, খায়নি ক’ বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।…’

  কিন্তু এই ২০ টাকার খাবার তৈরি করতে আরও ৩০ টাকা ভর্তুকি দিতে হয়। এই টাকা জোগাড় করা খুব কঠিন কাজ। শুরুর আগে নেতৃত্ব অনেকের কাছে শুনতাম চালাতে পারবি তো? নিয়মিত ফান্ডিং দরকার। এই উদ্বেগের কথা যখন গিয়ে বলতাম মুক্ত হৃদয়ের বিশ্বনাথদার কাছে। শুনে তিনি অভয় দিতেন ঘাবড়াচ্ছো কেন? মাথার ওপর একজন আছে। তাকে মানো তো? আমি অবাক! কী বলছে! মাথার ওপর মানে? না আমার ভুল ভাঙিয়ে বললেন কার্ল মার্কস। মার্কসবাদে বিশ্বাস কর যখন, যে বিপ্লবী পার্টি আমরা করি তার আদর্শে অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে। যেখান থেকেই আসবে আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসে ভর করে লক্ষে অবিচল থেকে মানুষের জন্য কাজে এগিয়ে যেতে। মানুষের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। ভালো কাজ দেখলে মানুষ এগিয়ে আসবে। মনে পড়ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সেই কবিতা:

    ‘.....আমার ভাণ্ডার আছে ভ’রে

           তোমা সবাকার ঘরে ঘরে
তোমরা চাহিলে সবে     এ পাত্র অক্ষয় হবে,

       ভিক্ষা-অন্নে বাঁচাব বসুধা
        মিটাইব দুর্ভিক্ষের ক্ষুধা।’

আমাদের শ্রমজীবী ক্যান্টিনের আন্দোলন চলছে। আজ সাতদিন হল।

‘যারা খেতে পাচ্ছেন না তারা খান – ‌আর যারা খেতে পান তারা খাওয়ান।’
এই স্লোগানে ভর করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মানুষ আসছেন খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। মানুষ আসছেন অর্থ সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন অল্প অল্প করে হলেও। অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিদিন প্যাকিং করে যাচ্ছে যুব কমরেডরা। মুক্ত হৃদয়ের মানুষগুলি হাসছেন। দেখলে ভালো কাজে আগে নেমে পড়ো। তাহলে সবাই এগিয়ে আসবে একজন একজন করে হলেও।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।