রত্না দাস: চিন্তন নিউজ:১৯শে জুলাই:-করোনা থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন সকলেকে গৃহবন্দি থাকতে। কিন্তু সেই করোনা আতঙ্ককে উপেক্ষা করে ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অন্ডালের হরিশপুরের বাসিন্দারা।
শুক্রবার সকাল থেকেই হরিশপুর এর মাটি কেঁপে ওঠে ও গ্রামে ধসের আতঙ্ক দেখা যায়।তাতেই আতঙ্কে ঘরের সব জিনিসপত্র ফেলে রেখে প্রাণভয়ে ঘর ছেড়ে দৌড়ে পালিয়েছেন গ্রামবাসীরা। মাটির নিচে খনি গর্ভে জ্বলছে আগুন। তাতেই সেখানকার বাড়িগুলোর ভীত কেঁপে ওঠে। তার ফলে কারোর বাড়ির দেয়ালে ফাটল, আবার কারোর বাড়ী ইতিমধ্যে হেলে একদিক বসে গেছে। সেই আতংকেই তারা মালপত্র ফেলে রেখে পালায়। মৃত্যুভয়কে সঙ্গে নিয়েই পরদিন শনিবার সকালে থেকেই যে যার মালপত্র বাড়ি থেকে সরাতে শুরু করেন। সেখানকার বাসিন্দাদের বক্তব্য , ‘১৯৯৮ সাল থেকেই পুনর্বাসনের গল্প শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমরা। সেই ব্যবস্থা আগেই হলে এমন মহামারীর সময় আমাদের ঘর ছাড়া হতে হতো না।’
দুর্ঘটনার পর শুক্রবার সেখানে গ্রামবাসীরা বিডিও অফিসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তার জেরে এদিন দুপুরে পুনর্বাসন নিয়ে মহাকুমা প্রশাসনের বোর্ডরুমে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইসিএল, এডিডিএ,মহাকুমা প্রশাসন, পুলিশ ও গ্রামবাসীদের প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে ইসিএলের তরফে রানীগঞ্জ অঞ্চলের পুনর্বাসনের জন্য নিযুক্ত নোডাল অফিসার জানান,’ পুনর্বাসনের জন্য এখনো পর্যন্ত তিন পর্যায়ে ৫৮১ কোটির বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে এডিডিএকে।আবাসন তৈরির কাজ চলছে ।আপাতত বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের ইসিএল আবাসনে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ তবে পুনর্বাসন প্রকল্প দেরি হওয়ার জন্য ইসিএল ও এডিডিএ-র সমন্বয়ের অভাবকেও দায়ী করেছেন মহকুমাশাসক অনির্বাণ কোলে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।এছাড়াও হরিশপুরের বাসিন্দাদের অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
হরিশপুরের অদূরে ইসিএলের খোলামুখ খনির বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি ফুঁড়ে ধোঁয়া বেরোয়। ফলে মাটির নিচে কয়লা আগুনে পুড়ে ফোঁপরা হয়ে গিয়েছে। গ্রামবাসীদের আতঙ্ক গোটা গ্রামতা যেকোনো সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। দিন কয়েক আগে জামবাদ খোলামুখ খনিতে ধ্বস নেমে একটি বাড়িসহ একজন মহিলা ঘুমের মধ্যেই তলিয়ে যান। এই দেখে গ্রামবাসীরা আর ঝুঁকি নিতে পারেননি ।তাই ধস নামাতে তারা তাদের জিনিসপত্র ছেড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেন।আর তারপরদিন শনিবারেই তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের মালপত্র সরাতে থাকেন।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? ইসিএলের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী জানান, ‘গ্রামের পাশেই ইসিএলের খোলামুখ খনির কয়লা উত্তোলনের জন্য হামেশাই বিস্ফোরণ হয় সেখানে।পাম্প করে মাটির নিচের জলস্তর থেকে সমস্ত জল বার করে নেওয়া হচ্ছে ফলে মাটি কিছুটা বসে গিয়েছে । এখন মাটির নিচে আগুন লেগে গিয়েছে। কয়লা পুড়ে যাওয়াতে মাটি আরো বসে যাচ্ছে। আর ফাঁকা জায়গাগুলি ঠিকভাবে ভরাট করা হচ্ছে না। ফলে গোটা এলাকাটা ধসপ্রবন হয়ে গিয়েছে।’