মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:৫ই জুন:- গত ২রা জুন মঙ্গলবার সি পি আই এম পলিটব্যুরোর বৈঠক হয়ে গেল। এই বৈঠকের আলোচনায় স্থান পেয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনাহীন লক ডাউন, পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা, সরকারের আর্থিক প্যাকেজের নামে জনগণকে ধোঁকা, লক ডাউনের সুযোগ নিয়ে শ্রম আইন এবং বিদ্যুৎ আইন পরিবর্তন, এসেছে কেরালার বিজয়ন সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে দলীয় রিপোর্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি পি আই এম পলিটব্যুরোর বৈঠক অবশ্যই খবরের শিরোনাম, কিন্তু এবারের বৈঠক বা বৈঠকের আলোচ্য বিষয় চর্চার বিষয় নয়। সারা দেশ ব্যাপী সমস্ত রাজনৈতিক শিবিরের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সি পি আই এম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের মাধ্যম বা পদ্ধতি।
একটু পরিস্কার করে বললে বিষয়টি হলো, এই প্রথম সি পি আই এম কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের পলিটব্যুরোর মিটিং সম্পন্ন করেছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে। আগরতলার মানিক সরকার, কেরালার তিরুবানন্দপুরমে পিনারাই বিজয়ন ও কোডিয়ারি বালকৃষ্ণন, হায়দ্রাবাদে বি ভি রামুবালু, কানপুরে সুভাষিনী আলী, কলকাতায় সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, এবং দিল্লিতে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাট সকলেই যে যার বাড়ীতে বসেই মিলিত হলেন, একে অপরের সঙ্গে মত বিনিময় করলেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। সি পি আই এম কেন্দ্রীয় কমিটির এই আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার নিঃসন্দেহে কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাসে এক প্রযুক্তি গত বিপ্লব। সমগ্র মানব জাতির কাছে কোভিড উনিশ অতিমারি মোকাবিলায় একমাত্র উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আর এই কারণেই ভারতের মতো দেশে ও একটানা চলছে লক ডাউন। এই লক ডাউনে বিশ্বের কর্পোরেট সংস্থা গুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েই থাকে । কিন্তু , সিপিআইএম এর মত কমিউনিস্ট পার্টি কিভাবে নিজেদের প্রতিদিনের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখে বা আদৌ রাখতে পারে কিনা এই ব্যাপারে একটা কৌতূহল ছিলই বিভিন্ন মহলে ।
সমস্যা যেমন আসে, তেমনি সমস্যা সমাধানের পথ ও বেরিয়ে আসে। করোনা ভাইরাস জনজীবনে যে জটিলতা তৈরি করেছে তাতে সমস্ত প্রগতি স্তব্ধ প্রায়, কিন্তু জীবন থেমে থাকে না, থেমে থাকলে চলেও না। আন্দোলন সংগ্রাম ও থেমে থাকতে পারে না। সমস্যা যেমন আসে, তেমনি সমস্যা সমাধানের পথ ও খুঁজে নিতে হয় । ভারতের মানুষও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামাজিক বা দৈহিক দূরত্ব বজায় রেখেই সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সমস্ত কিছু পরিচালনার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে আধুনিক কম্পিউটার পরিচালিত হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ট্যুইটার ইত্যাদি মাধ্যম কে।
এই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সি পি আই এম পলিটব্যুরোকেও গ্রহণ করতে হলো অত্যাধুনিক সোস্যাল মিডিয়া। শুধু পলিটব্যুরো বৈঠকই নয় আলিমুদ্দিনের রাজ্য সভাপতি মণ্ডলীর সাপ্তাহিক সভা, বাংলা দলের সূর্যকান্ত মিশ্রর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “মার্কসবাদী পথ” এই পত্রিকার বিশেষ “প্যান্ডামিক” সংখ্যাটি ও সোমবার অনলাইন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। সোনিয়া গান্ধীর ডাকে বিরোধী দলের বৈঠক ও সারতে হয়েছে অনলাইনে। অর্থাৎ বিভিন্ন রাজ্য স্তরে কম্পিউটার ধাপে ধাপে প্রবেশ করেছে এবং সূর্য বাবু বা ইয়েচুরির মতো উচ্চ নেতৃত্ব ও ব্যক্তিগত ভাবে নতুন তথ্য প্রযুক্তির সঙ্গে যথেষ্ট সড়গড়। বলা যায় সর্ব ভারতীয় ভাবে পলিটব্যুরোর অনলাইন বৈঠক সি পি আই এম এর অন্দরে কম্পিউটার ব্যবহারে সিলমোহর লাগালো। এই প্রসঙ্গে অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলতে চান তাঁরা আসলে কম্পিউটার নামক নতুন প্রযুক্তির বিরোধী নন, তাদের আশঙ্কা ছিল এই যন্ত্র দানব দরিদ্র ভারতবাসীর রোজগার কেড়ে নেবে, মেশিন দিয়ে কাজ হলে বহু মানুষ কাজ হারাবে । তাই যন্ত্র ব্যবহারের পূর্বে তাদের কিছু শর্ত ছিল। তাদের সম্মতি ছিল না, এটাও পুরো সত্যি না। মানিক সরকারের মতে দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু নতুন অভিজ্ঞতা থেকেই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে। তবে তিনি মনে করিয়ে দেন , ভারতের মতো দরিদ্র দেশে অসংখ্য মানুষের কাছে অনলাইন সংযোগ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই ডিজিট্যাল ডিভাইডের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই জারি আছে এবং থাকবে।
নেতৃত্ব যাই বলুন যুগের তালে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে বিরত থাকলে বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে দেশ সমাজ তথা দল কে পিছিয়ে পড়তে হবে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সি পি আই এম এর নতুন প্রজন্ম বা আগামী প্রজন্ম কম্পিউটার বিজ্ঞানের সঙ্গে ভীষণ ভাবে সংপৃক্ত। ছাত্র, যুবদের ব্যক্তি জীবন এবং রাজনৈতিক জীবন অনলাইনে জুড়ে আছে। আগামী দিনে উচ্চ নেতৃত্ব আধুনিক কম্পিউটার প্রযুক্তির কুফল গুলি পরিহার করে তার সুফল গুলিকে গ্রহণ করতে পারলে বিশ্ব বাজারে নিজেদের আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারবে। কোভিড উনিশ অতিমারি সমস্ত খারাপের মাঝে অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক দেশ জুড়ে কম্পিউটার চালিত অনলাইন পরিষেবা মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ধরে রেখেছে। সি পি আই এম কেন্দ্রীয় কমিটির অত্যাধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ জনমানসে এবং দলের অন্দরে যথেষ্ট ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসাবেই প্রশংসিত হলো।