চিন্তন প্রতিনিধি শান্তনু বোস এর একটি নিজস্ব পর্যালোচনা।চিন্তন নিউজ:১২ই মে:– নেপালে এসে একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকলাম। নোপাল রাষ্ট্রের সর্বনিম্ন স্তরের নির্বাচন। এই নির্বাচনকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে গ্রাম পালিকা, শহরাঞ্চলে নগর পালিকা
এক দিনেই গোটা নেপাল জুড়ে ভোট হবে।
প্রধানত তিনটি দল
১) এমালে ( সর্বোচ্চ নেতা কে পি ওলি ) নির্বাচনী প্রতীক সূর্য স্বস্তিকা।
২) নেপাল কংগ্রেস ( সর্বোচ্চ নেতা শের বাহাদুর দেওবা) নির্বাচনী প্রতীক বৃক্ষ
৩) কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদী ( সর্বোচ্চ নেতা পুষ্প কমল দহল ওরফে প্রচন্ড )
ইদানিং রাজতন্ত্র পুনরায় প্রতিষ্ঠার জন্য আরও একটা পার্টি তৈরি হয়েছে। নাম রা প্র পা ( রাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক পার্টি )
এছাড়াও দেশীয় পহাড়িয়াদের অনেক আঞ্চলিক দল আছে।
আমি কর্মসূত্রে নেপালে আছি। তাই ভ্রমনার্থীর চোখে নেপালকে দেখছি না। শ্রমজীবী মানুষ, মধ্যবিত্ত মানুষ এবং উচ্চবিত্ত, এই তিন শ্রেনীর মানুষেরই খুব কাছাকাছি থাকতে পারছি। তাই অভিজ্ঞতার ভান্ডারটাও বেশ পরিপূর্ণ হচ্ছে। রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নেপাল রাষ্ট্রে যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হল, সেই সময়ে রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে বেশ টানাপোড়েন শুরু হয়। অবশেষে এদেশের দুই কমিউনিস্ট পার্টি মিলিত হয়ে একটি ছাতার তলায় আসে এবং বিপুল জনমত নিয়ে সরকার গঠন করে। নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কে পি ওলি এবং নেপাল কমিউনিস্ট পার্টি মাওবাদী নেতা পুষ্প কমল দহল মিলিত হয়ে সরকার গঠন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবেই এই ঐক্য স্থায়ী হয়নি। পুষ্প কমল দহল সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করায় কে পি ওলি সরকার সংখ্যা গরিষ্ঠতা হারায়। এই পরিস্থিতিতে পুষ্প কমল দহলের সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন নেপাল কংগ্রেস নেতা শের বাহাদুর দেওবা।
হিমালয় পাদদেশ থেকে পার্বত্য নেপাল হয়ে তরাই অঞ্চলের নেপাল রাষ্ট্রের ক্ষুদ্রাতী ক্ষুদ্র অঞ্চলে আমার অবস্থান। তাই সামগ্রিক নেপালের রাজনৈতিক মূল্যায়ন বা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করার ধৃষ্টতা আমি করবো না। তবে আমার নির্দিষ্ট বলয়ের মধ্যে থাকা তিন শ্রেনীর মানুষের মনোভাব আঁচ করার কিছুটা চেষ্টা করেছি। সদ্য গণতন্ত্রের স্বাদ পাওয়া নিম্নবিত্তের মধ্যে কে পি ওলি’র এমালে অর্থাৎ নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির গ্রহনযোগ্যতা অনেক বেশি বলেই মনে হল। মধ্যবিত্তের একটা অংশ সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের ওপর যথেষ্ট বিতশ্রদ্ধ। যার মূল কারণ দুর্নীতি। তুলনামূলক ভাবে তারা রাজতন্ত্রের দিকে অনেকটাই ঝুঁকে আছে। এবং এই প্রত্যাশায় রাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রীক পার্টি কিছুটা বুক বাঁধলেও, আপামর জনসাধারণের মধ্যে তেমন ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই দলটি নেপাল রাষ্ট্রকে পুনরায় হিন্দু রাষ্ট্র করার কথা জনসাধারণ মেনে নিচ্ছে বলে মনে হয় না। একবার প্রগতিশীলতার স্বাদ পেলে পুনরায় সেই কনজার্ভেটিভ ভাবনায় ফিরে যাওয়া নেপালী জণগণ মেনে নিচ্ছে না। মাওবাদী এবং নেপাল কংগ্রেসের জোট এই সর্বনিম্ন স্তরের নির্বাচনে সার্বিক সাফল্য পায়নি। এমন বহু জায়গা আছে যেখানে ত্রিমুখী লড়াই হচ্ছে। এমালে, নেপাল কংগ্রেস এবং মাওবাদী। সংসদীয় গণতন্ত্র মানেই ভোটের অঙ্ক। সেই অঙ্ক যদি বিশ্লেষণের মাপকাঠি হয় তাহলে কে পি ওলি নেতৃতাধিন এমালে বেশ কিছুটা এগিয়ে। তার পরেই আছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেওবা নেতৃতাধিন নেপাল কংগ্রেস। নির্দিষ্ট জুতসই কারণ ছাড়া সমর্থন প্রত্যাহার করায় পুষ্প কমল দহল নেতৃতাধিন মাওবাদীরা জণমানসে অনেকটাই বিশ্বাস যোগ্যতা হারিয়েছে বলে মনে হল। তার ওপর সিস্টেমকে ভাঙার পন করা চরমপন্থী প্রচন্ড কি-না নেপাল কংগ্রেসের সাথে জোট করলো!
যদিও এই নির্বাচন রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের নির্বাচন নয়। অনেকটাই পাড়া ঘরের নির্বাচনের পরিবেশ। তাই ব্যক্তি গ্রহনযোগ্যতাই প্রাধান্য পাচ্ছে, দল নয়। আমি দূর থেকেই নির্বাচনের উত্তাপ উপভোগ করছি। নেপালে জনসাধারণ তাদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটাবেন ১৩ই মে নেপালী ক্যালেন্ডারে বৈশাখের ৩০ গতে।