চৈতালি নন্দী: চিন্তন নিউজ:১১মে;– এক নজিরবিহীন পরিস্থিতিতে ঘরে বাইরে চাপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপক্ষ। বছর দুয়েক ধরে ঘটতে থাকা অর্থনৈতিক সঙ্কট বর্তমানে সেখানে চরমে পৌছেছে। অভূতপূর্ব মূদ্রাস্ফীতি, শূণ্য কোষাগার, ঔষুধপত্র চিকিৎসা সরঞ্জাম ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের অগ্নিমূল্য, জ্বালানীর সঙ্কট সাধারণ মানুষকে সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ আন্দোলনে সামিল করেছে।
শ্রীলঙ্কায় এই অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে বেড়েছে বৈদেশিক ঋনের বোঝা, বিদেশী মূদ্রার ঘাটতি আজ শ্রীলঙ্কা কে এনে দাঁড় করিয়েছে খাদের কিনারায়। এরজন্যে শুধুমাত্র বর্তমান সরকার নয়, পূর্বতন সরকার কেও দায়ী করছে অর্থনীতিবিদরা। এর তিন বছর আগেই শ্রীলঙ্কা দ্বৈত অর্থনৈতিক ঘাটতির মুখে পড়েছিল। একদিকে বাজেট ও অন্যদিকে বর্তমান হিসেবে ঘাটতি।এই ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছিল এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক। কোনো দেশে আয়ের তুলনায় ব্যায় বেশি হলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বিগত নির্বাচনের প্রাক্কালে বিপুল করছাড়ের প্রতিশ্রুতি ও তার বাস্তবায়ন, অন্যদিকে কোভিড মহামারীর ফলে শ্রীলঙ্কার পর্যটন শিল্প ব্যাপক ধাক্কা খায়, যা ছিল সেখানকার অর্থনীতির মূল ভিত্তি। এর উপর বৈদেশিক মূদ্রার ভান্ডারে বিপুল ধ্বস শ্রীলঙ্কার জিডিপি কে নামিয়ে দিয়েছিল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নীচে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী রাজাপক্ষর একের পর এক পরিকল্পনাহীন, বাস্তবর্জিত এবং হঠকারী সিদ্ধান্ত, যা কৃষিতে তৈরী করেছিল ব্যাপক ঘাটতি।
এই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রথমে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে অস্বীকার করলেও পরে সিদ্ধান্ত বদল করে ঋন নিতে বাধ্য হন রাজাপক্ষ। এই মূহুর্তে শ্রীলঙ্কার আর্থিক দূরবস্থা কাটার কোনো ইঙ্গিত নেই। ইতিমধ্যে দেশকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বৈদেশিক ঋন পরিশোধ করা এই মূহুর্তে কোনো ভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সে দেশের সরকার।
দেশপ্রধানের বা সরকারের হঠকারী ও পরিকল্পনাহীন সিদ্ধান্ত, দূর্নীতি একটা দেশকে কি চরম সঙ্কটের মুখে দাঁড় করাতে পারে তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ঋণের বোঝা ভারী হতে হতে একসময় কোনো দেশকে তা দেউলিয়া করে ছাড়ে।