গোপা মুখার্জী : চিন্তন নিউজ :২০শে মে:- ১৯২১সালের ২০শে মে , আজকের দিনে শত শত চা শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল অবিভক্ত ভারতের অধুনা বাংলাদেশের চাঁদপুর। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে সিলেটে চা চাষ শুরু করে। ইংরেজ বাগান মালিকরা অতি সামান্য মজুরিতে চা উৎপাদন ও চা সংগ্রহে শ্রমিকদের বাধ্য করত । প্রতিবাদ করলে জুটত অকথ্য নির্যাতন ও নিপীড়ন । চা বাগান মালিকদের এই অমানুষিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চা শ্রমিকরা কর্মস্থল পরিত্যাগ করে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুসারে তারা প্রায় ত্রিশ হাজার কর্মী স্টিমারে করে চাঁদপুরে এসে জড়ো হয় এবং ‘মুলুক মে চল’ আওয়াজ তোলে ।সেখানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পোষা গোর্খা বাহিনী তাদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি চালায় । গুলিতে নিহত হন শত শত শ্রমিক । এই নির্মম অমানবিক ঘটনাকে স্মরণ করে প্রতিবছর এই দিনটি ‘চা শ্রমিক দিবস ‘ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে ।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসান ঘটেছে । ১৯৭১ সালের মুক্তি যুদ্ধে বহু শহীদের রক্তের বিনিময়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। কিন্তু আজও সেখানে চা শ্রমিকদের অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই পড়ে আছে। সেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আমল থেকে শুরু করে আজও চা শিল্প নিয়ন্ত্রন করছে বিদেশী মালিক শ্রেণি । বিদেশী ফিনলে , ইস্পাহানী , ডানকান সহ বহুজাতিক কোম্পানি গুলি চা শিল্পের মালিকানায় । ফলে চা শিল্পে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবার আজও অবহেলিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত ।চা শ্রমিকদের অমানুষিক পরিশ্রমে অর্জিত চা বিক্রি করে প্রচুর বিদেশী মুদ্রার সিংহভাগই বহুজাতিক কোম্পানি গুলি আত্মসাৎ করছে আর শ্রমিক ও তাদের পরিবার গুলি অভাব-অনটন , রোগে শোকে, অশিক্ষায় দিন কাটাচ্ছে ।তাদের দৈনিক মজুরি প্রয়োজনীয় ক্রয়সীমার অনেক নীচে ।
তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটুক এই আশা রেখে ১৯২১ সালের আজকের দিনে যে সমস্ত চা শ্রমিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পোষা গোর্খা বাহিনীর গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সেলাম জানাই ।