দেশ

জাতীয় শিক্ষক দিবস পালন,ও ডঃসর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ।


নিউজ ডেস্ক:চিন্তন নিউজ:৫ই সেপ্টেম্বর:–একজন সফল মানুষ ও নাগরিক গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা অগ্রগণ্য। শিক্ষক শুধুমাত্র ছাত্রদের পড়াশোনায় সাহায্য করে না, তথাপি তাদের চরিত্র গঠনে এবং ভবিষ্যতে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। ৫ই সেপ্টেম্বর জাতীয় শিক্ষক দিবস ও ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জন্মদিন হিসেবে উদযাপন করা হয়
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ তৎকালীন মাদ্রাস প্রেসিডেন্সির পুলিয়ানগুড়ি নামক স্থানের একটি তেলুগু ভাষি নিয়োগী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৮সালের ৫ই সেপ্টেম্বর।পিতার নাম সর্বপল্লী বীরাস্বামী ,মাতা সর্বপল্লী সীতা( সীতাম্মা )।

তাঁর প্রাথমিক জীবন কাটে তিরুুুুত্থানি ও তিরুপতিতে। তাঁর পিতা ছিলেন স্থানীয় জমিদারের খাজাঞ্চি ।

প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু তিরুতান্নির কেভি বিদ্যালয়ে।তারপর তিরুপতির হার্ম্যান্সবাগ ইভানজেলিক্যাল লুথার্ণ মিশন স্কুল, পরে ওয়ালাজাপেট গভর্ণমেন্ট হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল ।

রাধাকৃষ্ণন খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি শিক্ষা জীবনে অনেক বৃত্তি লাভ করেছিলেন এবং সেই বৃত্তের সাহায্যেই তিনি তার পড়াশোনা চালিয়ে যান।

তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা সচ্ছল ছিল না। দূর সম্পর্কের এক দাদার কাছ থেকে দর্শনের বই পান এবং তখনই ঠিক করেন তিনি দর্শন নিয়ে পড়বেন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার জন্য তিনি “বেদান্ত দর্শনের বিমুর্ত পূর্বকল্পনা ” (The Ethics of the Vedanta and its metaphysical Presuppositions) বিষয়ে একটি গবেষণা মূলক প্রবন্ধ লেখেন। তিনি ভেবেছিলেন তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধ দর্শনের অধ্যাপক বাতিল করে দেবেন। কিন্তু অধ্যাপক অ্যালফ্রেড জর্জ হগ তার প্রবন্ধ পড়ে খুবই খুশি হন। এই প্রবন্ধ যখন ছাপানো হয় তখন রাধাকৃষ্ণাণ এর বয়স ২০ বছর।

১৯০৯ সালে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি ইউনিভার্সিটি অফ মাইসোর, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালকাটা, ইউনিভার্সিটি অফ চিকাগো,ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ করেন। সেই সময় তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড এ অধ্যাপনা করেছিলেন।

ইউনিভার্সিটি অফ মাইসোরে অধ্যাপনা কালীন তিনি বেশকিছু পত্রিকা লিখেন -দ্য কোয়েস্ট জার্নাল অফ ফিলোসফি এবং ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ এথিক্স।

রাধাকৃষ্ণন তার সফল কর্মজীবনের পরে রাজনীতি শুরু করেছিলেন ইউনেস্কোতে তিনি স্বাধীন ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি সময়কাল : ১৯৫২ – ১৯৬২ সাল, এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি সময়কাল : ১৯৬২ – ১০৬৭ সাল।

তিনি যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন তখন তার কিছু ছাত্র এবং বন্ধু ৫ই সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন। তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, “৫ই সেপ্টেম্বর আমার জন্ম দিবস পালন না করে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করলে আমি আরও অধিক সম্মানিত বোধ করব।”

সেই থেকে শুরু হয় শিক্ষক দিবস পালন করা যা এখনো সকল ভারতবাসী তাকে সম্মান জানানোর জন্য পালন করে থাকে।

তাঁর জীবনে তিনি বহু পুরস্কার এবং সম্মানে ভূষিত হন।
১৯৩১সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত হন,
১৯৩৩-৩৭সাল পর্যন্ত পাঁচবার সাহিত্য বিভাগে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।
১৯৩৮সালে ব্রিটিশ একাডেমীর ফেলো হিসেবে মনোনীত হন
১৯৫৪সালে ভারত রত্ন সম্মানে ভূষিত হন।
১৯৫৪সালে জার্মানির কলা ও বিজ্ঞান বিভাগের সাম্মানিক পুরস্কার।
১৯৬১সালে জার্মান বুক ট্রেড প্রদত্ত শান্তি পুরস্কার।
১৯৬২সালে রাধাকৃষ্ণানকে সম্মান জানানোর জন্য ভারতবাসী ১৯৬২ সাল থেকে শিক্ষক দিবস পালন করা শুরু করে।
১৯৬৩সালে ব্রিটেনের অর্ডার অফ মেরিট,১৯৬৮সালে সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার,
১৯৭৫সালে মৃত্যুর কিছুদিন আগে টেমপ্লেটন প্রাইজ।

রাধাকৃষ্ণন এর ১০ টি বাণী ও উক্তি :
৫ ই সেপ্টেম্বর আমার জন্মদিন করার পরিবর্তে শিক্ষক দিবস পালন করলে আমি অধিক সম্মানিত বোধ করব।

ধর্ম হল একটি আচরণ, কোনো বিশ্বাস নয়।
জ্ঞান ও বিজ্ঞান হল একমাত্র পথ যার জীবন আনন্দ ও খুশি তে ভরে উঠবে।

ঈশ্বর হল সমস্ত আত্মার আত্মা – সর্বোচ্চ চেতনা।
যখন আমরা ভাবি, আমরা জানতে পারি, আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ করি।

শিক্ষার সর্বোচ্চ ফল হওয়া উচিত একজন সৃজনশীল মানুষ, যিনি বিপরীত পরিস্থিতি এবং প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারবেন।

বই হল একমাত্র পন্থা যার মাধ্যমে বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির মেইল ঘটানো সম্ভব।

ঈশ্বর আমাদের সকলের মধ্যে বাঁচে, অনুভব করে ও কষ্ট ভোগ করে এবং সময়ের সাথে তিনি আমাদের মধ্যে গুণ, জ্ঞান, সৌন্দর্য ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দেন।

আপনার প্রতিবেশীকে ভালোবাসেন, কারণ আপনি নিজেই আপনার প্রতিবেশী। আপনার প্রতিবেশী অন্য কেউ এটা একটা ভ্রম।

মানুষ হচ্ছে যৌক্তিকতা সত্তা – দুনিয়ার গৌরব ও কলঙ্ক।

ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ছিলেন একজন দার্শনিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং লেখক। বিংশ শতাব্দীতে তিনি দর্শন তত্ত্বের একজন মস্ত বড় পন্ডিত ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ মারা যান।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।