জয়দেব চন্দ্র:চিন্তন নিউজ:২০ শেষ আগস্ট:-
‘প্রশ্ন করো, যুক্তিবাদী হও, বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসার ঘটাও, বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার উপর আক্রমন বন্ধ কর, ডা. নরেন্দ্র দাভেলকরের জীবনদানে গঠিত মহারাষ্ট্রের মতো সারা দেশ জুড়ে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস বিরোধী আইন প্রণয়ন কর।’ বর্তমান কোভিড -১৯ প্রতিরোধে প্রচারিত গোমুত্র পান , ভাবিজি পাঁপড় , যাগযজ্ঞ , মাথামুন্ডনের বিধানের বিরোধীতা করে স্বাস্থ্যবিধি মানা , সকলের জন্য স্বাস্থ্য , সকলের জন্য পেটভরা খাবার , কোভিড নির্ণায়ক বেশী সংখ্যক পরীক্ষা এবং আক্রান্ত ও তার পরিবারের এবং তাদের পরিষেবা প্রদানকারী ও সহযোগীদের পাশে থাকা, নিজের এলাকায় মানুষের পাশে থাকতে পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন — এমনই আহ্বান জেলার বিজ্ঞানকর্মীদের।
কুড়ি আগষ্ট ‘ জাতীয় বিজ্ঞানমনস্কতা দিবস’ ( ন্যাশনাল সাইন্টিফিক টেম্পার ডে-২০২০ ) উপলক্ষে গতকাল ঊনিশে আগষ্ট দুইহাজার কুড়ি পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’র বাঁকুড়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের কর্মীরা পথসভা, কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান , শ্রুতিনাটক, টোটোতে ট্যাবলো প্রচারের মাধ্যমে বার্তা দিল শহর জুড়েই ( কলেজ মোড়, কাটজুড়িডাঙ্গা, ভৈরবস্থান , চকবাজার হয়ে শাঁখারী পাড়া ) ।
পশ্চিম বঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ বাঁকুড়া জেলা শাখা সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে, এই ধরনের কর্মসূচী আগামী বাইশ আগষ্ট দুইহাজার কুড়ি থেকে লাগাতার জেলা জুড়ে চলবে।
প্রসংগত সাত’বছর আগে, দুইহাজার তেরো সালের এই দিনেই বিশে আগষ্ট তারিখে পুনেতে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে আততায়ী’দের গুলিতে খুন হয়েছিলেন যুক্তিবাদী, সমাজের কু-সংস্কার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী সৈনিক বিজ্ঞানমনস্কতা প্রসারের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ডঃ নরেন্দ্র দাভোলকর। তাঁর মৃত্যুদিনটিকেই জাতীয় বিজ্ঞানমনস্কতা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি বহু আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আদায় করা সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু অবিজ্ঞান, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের প্রচারকরা তাতে ক্ষান্ত না হয়ে সমাজের উপর আরো সর্বগ্রাসী আক্রমণ তীব্র করার চেষ্টা জারি রেখেছে। এর মধ্যেই খুন হলেন এম এস কালবুর্গি, গোবিন্দ পানসারে এবং গৌরী লংকেশ । ধর্মীয় আবেগের দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজ স্বার্থলোভীরা মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। আক্রান্ত হচ্ছেন এক সম্প্রদায়ের হাতে আর এক সম্প্রদায় বা বর্ণের মানুষ। বিজ্ঞান মঞ্চ মনে করে এ শুধু মনুষ্যত্বের অপমান নয়। যুগ যুগ যাবৎ যে বিজ্ঞান চর্চা মানব সভ্যতার ঊন্নয়নকে এই জায়গায় পৌছে দিয়েছে তাকেই অর্থাৎ নিজের মানবিক চেতনাকেই অস্বীকার করা। বিজ্ঞান চর্চা বন্ধ করার জন্য সবরকম আক্রমণ নেমে আসছে বর্তমানেও । বিভিন্ন রাজ্য শিক্ষা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ডগুলি সিলেবাস ছোট করার নামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপটারগুলি বাদ দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপটারগুলো রেখে দিচ্ছে।
এই বিশেষ পরিস্থিতির জন্য প্রশ্ন করার অভ্যাস তৈরি করতেই হবে সমাজকে বিশেষত আগামী প্রজন্মকে । সাত ‘বছর আগে দাভেলকরের হত্যা আমাদের শিখিয়েছে আজও মানুষের সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগ বিজ্ঞান মনস্কতাকে চাপা দিতে সক্ষম। তাই আমাদের আরও সচেচনতার সাথে আরও বড় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।