কলমের খোঁচা

জাতীয় বিজ্ঞান দিবস


মল্লিকা গাঙ্গুলী:বিশেষ প্রতিবেদন:– চিন্তন নিউজ:২৮/০২/২০২২– রত্নগর্ভা ভারত মায়ের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র সন্তান চন্দ্র শেখর ভেঙ্কট রামন। (৯.১১.১৮৮৮- ২১.১১.১৯৭০) চেন্নাই এর শিক্ষক পিতার কৃতী সন্তান রামন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতকোত্তর পাশ করে কলকাতাতেই তাঁর কর্মজীবনের সূচনা করেন। গণিতে স্নাতকোত্তর হলেও রসায়ন ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়, আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, রসায়ন নয় পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্যই তিনি বিশ্বখ্যাত হন।

শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও কিছু দিনের মধ্যেই তিনি তাঁর নিজস্ব সাধনক্ষেত্র ব্যাঙ্গালুরুর “ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অব সায়েন্স” প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন। এখানেই ১৯০৭ থেকে ১৯৩৩ পর্যন্ত গবেষণার সাধনা করেন। ১৯২১ সালে রামন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে “ওয়ার্ল্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি কংগ্রেসে” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। এটিই ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর এখানে তিনি বহু বিশিষ্ট বিশ্ব বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানীদের সান্নিধ্য লাভ করেন। লন্ডন থেকে সমুদ্র পথে দেশে ফেরার সময় আদিগন্ত নীল জলরাশির সৌন্দর্য রামন কে যেমন অভিভূত করে তেমনই সমুদ্র জলের নীল রঙ তার মনে গভীর জিজ্ঞাসার জন্ম নেয়।

এর আগে বিজ্ঞানী লর্ড রেলে আকাশের নীল রঙের তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। রেলে বলেন, বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন অনুর সঙ্গে আলোক কণার বিক্ষেপনে নীল রঙের তরঙ্গ বেশি বলেই আকাশের রঙ নীল দেখায়। রেলের মতে আকাশের এই নীল রঙের প্রতিফলনের জন্য ই স্বচ্ছ সমুদ্র জলের রঙ নীল দেখায়। এতদিন এই তত্ত্ব ই প্রচলিত ছিল কিন্ত রামন এই তত্ত্ব মানতে পারেন নি তাই এই সমুদ্র পথ তাঁকে নীলজলের রহস্য উদ্ঘাটনে আকুল করে তোলে। তিনি বোতলে ভরে সমুদ্র জল নিয়ে দেশে ফিরে নিজের গবেষণায় মেতে ওঠেন। পোলোরাইজিং প্রিজমে ঐ জল নিয়ে তিনি আকাশের নীল রঙ আড়াল করেও দেখেন জলে নীলের বিচ্ছুরণ। এর থেকেই তিনি নির্নয় করেন সমুদ্রের জল নিজেই আলোক বিচ্ছুরণ করে বলেই তার রঙ নীল। এই তত্ত্ব থেকেই এসেছে একবর্ণা আলোক ধর্ম, লেসার রশ্মি ইত্যাদি।

সি ভি রামনের এই নীল রঙের তত্ত্ব বিশ্বের পদার্থ বিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। রামন তাঁর শিষ্য কে এস কৃষ্ণান কে সাথে নিয়ে এই তত্ত্ব আবিষ্কার করলেও রামনের নামানুসারে এই আবিষ্কার রামন এফেক্ট বা রামন প্রভাব নামে পরিচিত হয়। ১৯২৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রামন এই আবিষ্কার করে ১৯৩০ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮৬ সালে “ন্যাশনাল কমিশন ফর সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কমিউনিকেশন” (NCSTC) তৎকালীন ভারত সরকারের কাছে রামন এফেক্ট আবিষ্কারের দিন অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি জাতীয় বিজ্ঞান দিবস হিসেবে ঘোষনা করার আবেদন করলে সরকার তা স্বীকৃতি দেন। ঐ ১৯৮৬ সাল থেকেই ২৮ ফেব্রুয়ারি দিনটি বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ক্ষেত্র,ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট গুরুত্ব সহ পালন করা হয়।
২০০৯ সাল থেকে দিনটি বিশেষ বিষয় ভিত্তিক দিবস ঘোষণা করে এবং বিজ্ঞান প্রসারে বিশেষ ভুমিকা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কে পুরস্কার ও দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এ বছর ২০২২ সালের জাতীয় বিজ্ঞান দিবসের থিম বা বিষয় বস্তু হলো, স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বিত প্রয়োগ।(Integreted approach in science and technology for sustainable future)

বিজ্ঞান মানব জীবনের আশীর্বাদ, মানব সভ্যতার ধারক ও বাহক। আধুনিক পৃথিবীর স্যাটেলাইট থেকে যুদ্ধ বিমান সর্বত্র বিজ্ঞানের অবদান। তাই স্থিতিশীল আগামী পৃথিবীর জন্য আগামী প্রজন্মের জন্য এক সুরক্ষিত সুস্থ পৃথিবী রেখে যেতে হলে যেমন সরকারের উচিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ তেমনি প্রত্যেক টি সচেতন নাগরিকের কর্তব্য বিজ্ঞানের অপব্যবহার, অপবিজ্ঞানের প্রয়োগ রোধ করে বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে বৃহত্তর জনজীবনে পৌঁছে দেওয়া। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ বিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করলেও তা যথেষ্ট অপ্রতুল। বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গে সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কে এবং সরকার কে এ বিষয়ে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।