চিন্তন নিউজ, কল্পনা গুপ্ত, ১৯ শে নভেম্বর – মীর তিতুমীরের আজ শহীদ দিবস। বাঁশের কেল্লা থেকে যুদ্ধে বৃটিশ সেনা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান সহযোদ্ধাদের সাথে। আজ থেকে অনেক বছর আগে ১৮২৭ সালে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিলো এই বাংলাতে। ১৮২২ সালে তিতুমীর মক্কায় হজব্রত পালনের জন্য যান এবং সেখানে সৈয়দ আহমেদ সঈদের শিষ্য হন। বাংলায় ফিরে ১৮২৭ তিতুমীর গ্রামের গরীব কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন করেন।
তাঁর প্রকৃত নাম সৈয়দ মীর নিসার আলি। তিনি ওয়াহাবি আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। সেই সময়ে চব্বিশ পরগণা, নদীয়া এবং ফরিদপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এবং নীলকর সাহেবদের নীল চাষিরদের ওপরে অকথ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ করেন। হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায়ের মুসলমানদের ওপর বৈষম্যমূলকভাবে বসানো দাঁড়ি খাজনা এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধীতাও তিনি করেছিলেন সংগঠিতভাবে।
তিতুমীরের প্রায় ৫০০০ অনুগামী ১৮৩১ সালের ২৩ শে অক্টোবর বারাসতের কাছে বাদুরিয়ার ১০ কিমি দূরে নারিকেলবেড়িয়া গ্রামে বাঁশের কেল্লা তৈরি করেন। বাঁশ ও কাদায় তৈরি দ্বিস্তরীয় এই কেল্লা। এই বিদ্রোহে প্রায় ৮৩ হাজার কৃষক সেনা তিতুমীরের পক্ষে যুদ্ধ করেন। ১৩ ই নভেম্বর বৃটিশ সেনা তাদের চারিদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে। এই যুদ্ধ শেষ হয় ১৯ শে নভেম্বর, তিতুমীরের পতন ঘটে, শহীদ হন। বিদ্রোহের আগে তিনি সহযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন – ” দেশের জন্য মৃত্যু বরণ করে শহীদ হলে তা অনেক মর্যাদার। এই লড়াই আমাদের শেষ লড়াই নয়। আমাদের কাছ থেকে প্রেরণা পেয়েই এ দেশের মানুষ একদিন দেশকে উদ্ধার করবে। আমরা যে লড়াই শুরু করলাম, এই পথ ধরেই একদিন দেশ স্বাধীন হবে।”
তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে মুহম্মদ জিন্নাহ কলেজের নাম পাল্টে রাখা হয় সরকারি তিতুমীর কলেজ।
ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার ৭৬ বছর পার হয়ে গেলেও কিন্তু কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেশের সর্বত্র আসেনি। পশ্চিমবাংলায় এক সময় ভূমি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কৃষকরা যে মর্যাদার সুখ লাভ করেছিলেন আজ দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী কৃষি আইন তা কেড়ে নিলো। নিজ জমিতে কৃষক আবার পরবাসী। তাই আবার সেই অধিকারকে ছিনিয়ে নেবার জন্য ২৬ শে নভেম্বর সারাদেশের কৃষক সমাজ আন্দোলনে সামিল হবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। এই ক্রান্তিকালে তিতুমীরের সাহস ও দেখানো পথ খুবই প্রাসঙ্গিক। চিন্তন তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।