কলমের খোঁচা

শিক্ষাব্যবস্থায় মেধা নয়,অর্থ‌ই মূল! প্রসঙ্গ নীট দুর্নীতি -২০২৪


দেবু রায়, নিজস্ব প্রতিবেদন: চিন্তন নিউজ: ২২/০৬/২০২৪:- মেধার দাম থাকে না শুধু অর্থের দাম থাকে। নির্বাচন হয়ে গেছে কেন্দ্রে নতুন সরকার হয়েছে। কিন্তু পরে ডাক্তারির মতো একটা সামাজিক পেশাকে নিয়ে এতো বড়ো কেলেঙ্কারি স্বাধীনতার পরে সারা দেশে হয় নি যার নেতৃত্বে নতুন সরকার। সেটা হলো নীট কেলেঙ্কারি।কিছু তথ্য যা আমি পেয়েছি বিভিন্ন সূত্র থেকে সেটাই আমি সংক্ষেপে বাখ্যা দেবার চেষ্টা করছি।
এটা নিয়ে জানতে হলে, আমাদের জানতে হবে নীট কি?. এদের কাজ কি? —
NEET যার পুরো কথাটা হলো NATIONAl Eligibility Cum Entrance Test এরাই সারা দেশে ডাক্তারি পড়ার প্রবেশিকা পরীক্ষা পরিচালনা করে। নীট এর সূচনা হয় ২০১৩এবং সেটা কেন্দ্রীয় শিক্ষা বোর্ড CBSE।
এবার আসা যাক এই নীট পরীক্ষা করে কোন সংস্থা, তাঁদের ইতিহাস কি।
নীট পরীক্ষা পরিচালনা করে NTA, যার পুরো নাম National testing agency। এটা ভারত সরকারের অধীনস্ত একটা বেসরকারি সংস্থা, আর NTA কে অ্যাপ্রুভ করে ইউনিয়ন কাউন্সিল অফ মিনিস্টার। যদিও NTA একটা autonomous বডি। এরা ভারত সরকারের উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধীনস্ত।এটা প্রতিষ্ঠিত হয় নভেম্বর 2017.
NTA এর চেয়ারপার্শন হ’লেন প্রদীপ কুমার জোশি , উনি আবার PSC র চেয়ারম্যান দুটি রাজ্যের একটা ছত্রিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশ। আবার উনি একজন আরএসএস এর নেতা।

এবার আলোচনা করা যাক নীট এর দুর্নীতি যার পিছনে কোটি কোটি টাকার খেলা কি ভাবে হয়েছে আর এর পিছনে কি —
পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করে যাওয়া, আর কোটিপতি বাবার টাকার জোরে স্বপ্নপূরণ করে দেওয়া? এটাই সরকারের মূলমন্ত্র হয়েছে বিগত দশ বছরে। নীট পাস করতে লাগে মাত্র 18%মার্ক্স, অর্থাৎ মোট 720র মধ্যে ভাবুন লাগে মাত্র 138নং তাও ডাক্তারির মতো একটা বিষয়ে। কিন্তু ঐ 138নং তো গল্পের ওপরের অংশ মাত্র, ভিতরে গেলে আপনি সিউরে উঠবেন।

এইখানেই কোটি টাকার খেলা, কি ভাবে
এখন সারা দেশে মোট ডাক্তারি পড়ার আসন আছে 90675টি, যার মধ্যে সরকারী আসন আছে 44555টি আর বাকী বেসরকারি। সরকারীতে ভর্তি হতে পারলে খরচ নাম মাত্র, আর বেসরকারিতে ভর্তি হলে পড়ার খরচ শুরু হয় সত্তর লক্ষ দিয়ে, আবার একটু নামী হলে খরচ এক থেকে দের কোটি এটাই বলে তাঁদের প্যাকেজ। তার সাথে অন্য খরচ আলাদা।
বিগত বছরে নীট পরীক্ষা দিয়েছে প্রায় পনেরো লক্ষ র মতো। তার মধ্যে পাশের সংখ্যা আট লক্ষ র মতো, অর্থাৎ প্রায় 52-53%. যাদের র‍্যাঙ্ক প্রথম দিকে তাঁরা সরকারীতে যায়, আর বাকীদের জন্য ? ফেলো করি মাখো তেল। সেখানে মেধার দরকার নেই। দরকার বাবার মোটা টাকার ইনভেস্টমেন্ট।

এবার ভিতরের গল্পে আসা যাক —
১)সকলেই এটা স্বীকার করবেন ডাক্তারি সেটা মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত তাহলে পাস মার্ক্স কেন 18%?.
যদি পাস মার্ক্স টা কম করে 60%করা হতো তাহলে শুধু মেধাবীরাই সুযোগ পেতো, সেটা হতো সমাজের লাভ, কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর লক্ষী লাভ হতো না?. কিন্তু সরকার তো সেটা চায় না, তাঁরা দিবারাত্রি আপনাকে বুঝিয়েছে বেসরকারি হ’লে পরিসেবা ভালো হবে, এই হচ্ছে তার নমুনা।তাই মেধা না থাকলেও ডাক্তার হওয়া যাবে শুধু মাত্র বাবার কয়েক কোটি থাকলেই। তারপরে ঐ ডাক্তার রা আপনাকে পরিসেবা দেবে সেটাও দেখুন, ধরুন আপনার কিডনি তে স্টোন হলো, আপনি জানেন বিশ্বাস করেন বেসরকারিতে টাকা লাগবে কিন্তু পরিসেবা ভালো। আপনি ঘটি -বাটি বেঁচে টাকার যোগাড় করে ভর্তি হলেন, অপারেশন হলো দেখা গেলো কিডনির স্টোন না বারকরে ডাক্তার বাবু আপনার লিভার টা কেটে বার করে এনেছেন। আপনাকে দেখানো হলো দেখুন কত বড়ো পাথর ছিলো। কারণ ডাক্তার বাবু তো নিজেই 18%মার্ক্স পেয়ে বা অল্প মেধার অধিকারী হয়ে বাবার টাকার জোরে ডাক্তার হয়েছেন। আপনার রুগী মারা গেলেও ভুলেও কাঁদবেন না, কারণ আপনি এই সিস্টেম কে যারা বিগত দশ বছর ধরে এনেছেন তাঁদের দু হাত ভরে ভোট দিয়েছেন, তারাই আপনাকে শিখিয়েছিল বেসরকারি হ’লে মানুষ উন্নত পরিসেবা পাবে, আপনি সেটাকে সমর্থন করেছেন বারে বারে ভোট দিয়ে।এই সিস্টেম কে বদলাতে চেয়েছে তাঁদের আপনি সমর্থন করেন নি।
২)নীট এর প্রশ্ন পত্রের প্যাটার্ন নিয়েও অভিযোগ আছে। যেহেতু এটা CBSE পরিচালনা করে, তাঁরা তাঁদের সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্ন পত্র তৈরি করে, আবার CBSE সিলেবাস অনুসরণ করে অধিকাংশ বেসরকারি স্কুল। যেখানে টাকা ছাড়া অন্য কোনো গল্প নেই। মেধা থাকলেও সবার পক্ষে সম্ভব নয় সন্তান কে CBSE বোর্ডে র স্কুলে পড়ানো। প্রশ্নোর প্যাটার্ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে কেস হয়, তামিলনাড়ু থেকে, যদিও আদালতের রায় যায় নীট এর পক্ষে।
৩)আমাকে বিশ্বের একটা দেশ দেখাতে পারবেন যেখানে মেধার দামের থেকে টাকার দাম বেশী? বিশেষ করে ডাক্তারির মতো একটা সমাজ সেবামূলক পেশায়। না দেখাতে পারবেন না। অথচ আপনাকে বিশ্বাস করানো হয়েছিলো গত দশ বছরে ভারত নাকি বিশ্বের দরবারে আলাদা নাম করেছে। তার নমুনা তো আমি আপনি দেখছি।

আমাদের রাজ্যে বীরভূমের শান্তিনিকেতন একটা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আছে। সেইখানেও ৬৫লক্ষ দিয়ে প্যাকেজ চলছে। ভাবতে পারেন সেখানে অল্প মেধার অধিকারী রা ডাক্তার হচ্ছে। তারাই পাঁচ বছর পরে MBBS হয়ে আমার আপনার স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নেবে?. দয়া করে কেউ সিউরে উঠবেন না, কারন আপনি সত্তর বছরের সিস্টেম কে দশবছরের পরিবর্তন কে মেনে নিয়েছেন। জানেন কি আপনাদের কাছের কিছু প্রতিবেশী রাষ্ট্রে মাত্র ত্রিশ বা চল্লিশ লাখ খরচে ডাক্তার হওয়া যায়, তাও সেখানে মেধার প্রমান দিয়ে, কিন্তু ভারতে?18%পেলেই ডাক্তারি পড়ার ছাড় পত্র পেয়ে যায়। কেন?. নিজেকে প্রশ্নটা করুন, এর জন্য দায়ী কি আপনি নন?. ঠান্ডা মাথায় একটু চিন্তা করুন। বুঝতে পারছি যে দেশে ঘুমন্ত প্রজা থাকে সেই দেশে এটাই হয়, যেমন হয়েছিলো শ্রীলংকায়। একটু সচেতন কবে হবেন?


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।