মিতা দত্ত:চিন্তন নিউজ:২২শে এপ্রিল:-ছোট্ট একটি দেশলাইয়ের কাঠি যেমন চোখের নিমেষে একবার অন্ধকার দূর করতে পারে, তেমনিই মানুষের জেগে ওঠবার মাত্র কটা বছর দেশের বুক থেকে দূর করতে পারে হাজার বছরের পুরোনো শোষন ও অত্যাচারের ব্যবস্থা।আর এই কাজ সফলভাবে প্রয়োগ করেছিলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন।
অথচ সত্যিই তো আর রূপকথা নয়। ইতিহাসে কেমন করে জেগে উঠল মানুষ? উত্তরে শুধু একটি কথা মার্ক্সবাদ। মার্ক্সবাদের কাছ থেকেই ওরা প্রেরণা পেয়েছে পথের নির্দেশ, শিখেছে পৃথিবীতে নতুন পৃথিবী গড়বার কায়দাকানুন।পথনির্দেশক রূপে পেয়েছে ভি.আই.লেনিনকে ।তাই তারা অর্থাৎ রাশিয়ার জনগণ অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছে।
সমাজতন্ত্রের ধারনা কাল মার্ক্সের চেতনায় একদিনে উদ্ভূত হয়নি, তাঁর তীব্র পর্যবেক্ষণ শক্তি, ইতিহাসবোধ, অতীত সম্পর্কে জ্ঞান ও অধ্যয়ন। প্রশ্নাতীত বোধ ও চেতনা তাঁকে প্রাচীন রোমের হারানো এক ইতিহাসের খোঁজ দিল, সেই ইতিবৃত্তে তিনি পেলেন, মাটির সঙ্গে মিশে থাকা প্রলেতারিয়ুস নামে চিহ্নিত একদল শ্রমজীবির সন্ধান ।মার্ক্স দেখলেন এরা ক্রীতদাস নয়। শ্রম বিক্রি করে এরা আজীবন শুধুই উৎপাদন করে। মজুরি পায় কাজের বিনিময়ে কিন্তু ন্যায্য মজুরী পায় না।অথচ নিজের বলতে কিছু নেই। এদিক থেকে এরা সর্বহারা, ইংরেজিতে প্রোলেটারিয়েট। শোষণ, অত্যাচার, ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে তারাও একদিন বুর্জোয়াদের হটিয়ে সমাজ নিয়ন্ত্রা হতে পারবে। প্রতিষ্ঠিত হবে সর্বহারার নিরঙ্কুশ শাসন। এই ভাবনা থেকেই মার্ক্সের পথ চলা শুরু।
অমানুষিক মেহনত দিয়ে লেখা হল দাস ক্যাপিটাল। একদিকে সমাজকে ঠিকমত চেনা, অপর দিকে সমাজ বদল করার কাজ। মার্ক্সের সাথে যোগ দেয় তার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ফ্রেডারিক এঙ্গেলস । উভয়ের সমবেত প্রচেষ্টায় সমাজ বদলের জন্য চলল এক লড়াই। অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে মার্ক্সের মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় খন্ড লেখেন এঙ্গেলস।
মার্ক্সবাদ শুধু মার্ক্সের কিম্বা মার্ক্স-এঙ্গেলসের অবদান নয়। কারন মার্ক্সবাদ বিজ্ঞান কোনো মহাগুরুর কথামৃত নয়। মার্ক্স কতকগুলি বিজ্ঞান সম্মত সমাজ পরিবর্তনের মূল সূত্র দিয়েছেন। যে কোনো মার্ক্সবাদীর দায়িত্ব হল সেই মূল সূত্রগুলিকে বাস্তব পরিস্থিতির ওপর প্রয়োগ করা। এই কাজটি অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে করেছিলেন লেনিন।
মার্ক্স-এঙ্গেলসের সময়ে বিকশিত সাম্রাজ্যবাদের জন্ম হয়নি। কিন্তু লেনিন বিকশিত সাম্রাজ্যবাদের যুগে মার্ক্সবাদের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। এই কারনেই লেনিনবাদ হল মার্ক্সবাদের বিকশিত রূপ।
বিপ্লবের রণনীতি ও রণকৌশল প্রশ্নে লেনিনের অভিমুখ ছিল যথার্থ। লেনিন শুধু মার্ক্স আর এঙ্গেলস এর রণকৌশল সম্বন্ধে কয়েকটি প্রস্তাব পুনরুদ্ধার করে ক্ষান্ত হননি। তিনি সেগুলিকে আরো বিকশিত করেছিলেন। নতুন ধারনা ও নতুন সিদ্ধান্ত দিয়ে সমৃদ্ধ করেছিলেন। সর্বোপরি সেগুলিকে এক সূত্রে গেঁথে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বের পথনির্দেশ ও নিয়মাবলী প্রস্তুত করেছিলেন। লেনিনের লেখা কি করিতে হইবে, রাষ্ট্র ও বিপ্লব প্রভৃতি বইগুলি মার্ক্স বাদের ভান্ডারের বিপ্লবের অস্ত্রাগারে অমূল্য অবদান বলে পরিগণিত হবে।
প্রথম আন্তর্জাতিক এর উদ্বোধনী ভাষনে মার্ক্স বলেছেন যে , সাফল্যের একটা উদাহরণ শ্রমিক শ্রেণীর আছে কিন্তু সংগঠনের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ ও জ্ঞানের দ্বারা পরিচালিত হতে পারলে তবেই সংখ্যার পাল্লা ভারি হয়।
লেনিন মার্ক্সের এই ভাবনাকেই রাশিয়ায় প্রয়োগ করে সাফল্য পেয়েছিলেন। প্রথমে জারতন্ত্রের বিরুদ্ধে, জমিদারদের বিরুদ্ধে সমগ্র কৃষক সমাজ, শোষিত জনগনকে সঙ্গে নিয়ে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবে পরিণত করেন। শ্রমিক শ্রেণীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। রাশিয়ার জনগন মুক্তির স্বাদ পায়। পৃথিবীতে এক নুতন বার্তা নিয়ে আসে। সব মানুষ মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমগ্র পৃথিবীর মুক্তিকামী মানুষের আলোর দিশারী হয়ে ওঠেন মার্ক্স, এঙ্গেলস, লেনিন।