চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ১৯ ডিসেম্বর: আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় রোজগার যোজনা প্রকল্পের (রেগা) কাজের জন্যে দেশের সব রাজ্যের মধ্যে প্রথম পুরষ্কার পেতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের হিড়বাঁধ ও রানিবাঁধে উল্লেখযোগ্য কাজের জন্যেই এই পুরস্কার প্রাপ্তি। গত ১৩ ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের চিঠি আসে রাজ্য সরকারের হাতে। ১৯ ডিসেম্বর দিল্লি এসে এই পুরষ্কার গ্রহন করার জন্যে।
কিন্তু রেগার জন্যে এই বিরাট কর্মযজ্ঞে সামিল হলেন কারা? ঐ অঞ্চলের স্থানীয় অধিবাসীরা জানান, ঐ এলাকায় দীর্ঘদিন কাজের অভাবে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিরন্ন শ্রমিকরা। দিনের পর দিন রেগার কাজ থেকে বঞ্চিত তারা। লুট হয়েছে তাদের হকের কোটি কোটি টাকা। কোনো জায়গায় সামান্য কিছু কাজ হলেও তা পেয়েছে শুধুমাত্র শাসক দলের কর্মীরা। বিরোধী দলের কাউকে কোনো কাজ দেওয়া হচ্ছে না।
রেগার নোডাল অফিসার জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাসের কথায় ২০১৮/১৯ আর্থিক বছরে মূলত বাঁকুড়া জেলার কাজের জন্যেই এই এই পুরষ্কার আসছে। মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ এবারে রেগায় খরচ হয়েছে ৩০৪ কোটি ৬৭ লক্ষ ৬০০ টাকা। সরকারি তথ্য বলছে জবকার্ড প্রাপকের সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫ হাজার। কাজ পেয়েছে ২ লক্ষ ৪ হাজার পরিবার। বাকি ২ লক্ষ কাজ প্রাপক কোথায় গেল? এর কোনো উত্তর দেবার দায় কারোর নেই।
কয়েকদিন আগে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এক প্রতিনিধি দলের বাঁকুড়ার রানিবাঁধ ও হীরবাঁধ চাক্ষুস পরিদর্শর্নের ফলেই এই পুরষ্কার প্রাপ্তি।প্রকৃতপক্ষে যে কাজ ঐ অঞ্চলে হয়েছিল সবই বাম আমলে। এখন উল্লেখযোগ্য কোনো কাজ হয়নি। রাস্তা করার জন্যে মাটি তোলার ফলে তৈরি হওয়া গর্তকে পুকুর হিসেবে দেখানো হয়েছে। ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সভাপতি মনোরঞ্জন পাত্রের কথায়, যেখানে খরচ দেখানো হয়েছে ৯ কোটি টাকা সেখানে খরচ হয়েছে ১ কোটি টাকা। আসলে সরকারি অর্থ পুকুর চুরি করা হয়েছে। ১০ বছর আগে মৃত গোলকপুর গ্রামের গনেশ মাঝি, তার নামে পুকুর সংস্কারের জন্যে এসেছে ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকা। এভাবেই গরীবের সঙ্গে প্রতারনা করে লুট হয়েছে রেগার জন্যে নির্ধারিত সরকারি অর্থ।
অথচ বলা হচ্ছে এই মূহুর্তে রেগার কোনো শ্রমিকের কোনো অর্থ বকেয়া নেই। অথচ চোখ মেললে দেখা যায় হীরবাঁধ, ইন্দুপুর, রাধানগর, ভেদুয়াশোল, ওন্দা সহ বহু এলাকায় শ্রমিকদের মজুরি বাকি। যদি বছরে ১ কোটি ২৬ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হয়ে থাকে, তবে গত তিনমাসে ৭০ হাজার মানুষ(৪ এর ক) ফর্ম পূরন করবে কেন? পঞ্চায়েত গুলিও অস্বীকার করতে দ্বিধা বোধ করছে এই অনিয়মের। এই ভাবে শ্রমিকদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে আজ রেগায় প্রথম পুরষ্কার পাচ্ছে বাংলা।