সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১২ সেপ্টেম্বর: ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন থেকে কলকাতা – দূরত্ব ২০ হাজার ৩০ মাইল। ছয়ের দশকে এই বিশ্বের দীর্ঘতম রাস্তায় চলতো বাস। বাসের নাম অ্যালবার্ট। বিশ্বের এই দীর্ঘতম রাস্তার বাস ছাড়ার আগে প্রত্যেক যাত্রীর ছবি তোলা হত।বাসটি গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর আগে ১১টি দেশের মাটি ছুঁয়ে যেত। কোনদিন কখনো অ্যালবার্ট আইনি জটিলতায় পড়েনি।
ইতিহাস বলছে ডবল ডেকার বাসটি ১৯৪৭ সালে তৈরি করা হয় আর তার নম্বর ছিল ২০০৪ সিডনি। দীর্ঘ ২১ বছর চলার পর এক দূর্ঘটনায় পড়ে অ্যালবার্ট। পরবর্তী কালে এটি সারিয়ে এক বিলাসবহুল বাস তৈরি করা হয়। ১৯৬৮ সালের ৮ই অক্টোবর সিডনির মার্টিন প্যালেসের জিপিও থেকে প্রথম যাত্রা শুরু করে এবং ১৩২ দিন পার করে ১৯৬৯ সালের ১৭ ই ফেব্রুয়ারি লন্ডন পৌঁছায়। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত অ্যালবার্ট লন্ডন থেকে কলকাতা ১৫ বার যাতায়াত করে। লন্ডন থেকে কলকাতা হয়ে অষ্ট্রেলিয়ার সিডনি পর্যন্ত চারবার যাতায়াত করেছিল অ্যালবার্ট। কলকাতা থেকে লন্ডন পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৮৫ পাউন্ড – ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার টাকা।
পরে বাসটি আ্যন্ডি স্টুয়ার্ট বাসটি কিনে নেন।এরপর তিনি বাসটিকে নিজের ভ্রাম্যমাণ গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তিনি বাসটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সুযোগ সুবিধা রেখেছিলেন নিজের জন্য এবং যাত্রীদের জন্যও। তিনি বাসে চড়ে অষ্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে লন্ডনে নিজের বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এই দীর্ঘ পথ তিনি একা না গিয়ে সঙ্গে কয়েক জন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত শুরু করেন। অ্যালবার্ট বাসের ভিতরের চাকচিক্য ছিল দেখার মতো। যাত্রদের এতক্ষণ যাত্রা করতে একঘেয়ে না লাগে তার জন্য বাসের মধ্য সিট থেকে উঠে হাঁটাচলার জায়গা ছিল। সিটের পাশে বিরাট জানলা ছিল। বই পড়া ও খাবার জায়গা ছিল। রেডিও ও মিউজিকের এলাহি ব্যাবস্থা ছিল। অ্যালবার্ট বিশ্বের ইতিহাসে “বিশেষ দূত” হিসেবে পরিচয় দিত।
সম্প্রতি অ্যালবার্ট এর স্মৃতি উস্কে দিয়েছে গুরুগ্রামের একটি ট্রাভেল সংস্থা। দিল্লি থেকে বাসে থাইল্যান্ড, চীন, রাশিয়া, জার্মানি সহ ১৮টি দেশ ঘুরে লন্ডন। দীর্ঘতম সড়ক পথে দিল্লি থেকে লন্ডন যাওয়ার হাতছানি। ৭০ দিনের ট্যূরে মাথাপিছু খরচ ১৫ লক্ষ টাকা।
কেমন হবে এই যাত্রা? ট্রাভেলার সংস্থা জানিয়েছে বাসে করে ২০ হাজার কিলোমিটার যাত্রা। ১৮টা দেশ ঘুরে ৭০ দিনে লন্ডন পৌঁছবেন পর্যটকরা। ৭০ দিনের টানা যাত্রাপথ। তাই যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যর কথা মাথায় রাখতে হয়েছে সংস্থার কর্তাদের। বাসে থাকছে ২০টি বিজনেস ক্লাস সিট। প্রত্যেক সিটের সঙ্গে থাকছে ল্যাপটপ, মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থা, ডিজিটাল ডিসপ্লে সহ নানাবিধ ব্যবস্থা। ট্রাভেল সংস্থাই যাত্রীদের ভিসার ব্যবস্থা করবে। থাকছে বিদেশে চারতারা বা পাঁচতারা হোটেলের ব্যবস্থা। চাইলে বাঙালি খাবারও পাওয়া যাবে। করোনার জেরে এখনো যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়নি। শুরু হলে হয়তো অনেকেই ইতিহাসকে ফিরে দেখতে নাম লেখাবেন। অ্যালবার্ট এর যাত্রাপথও তো একটা ইতিহাস।