পাপিয়া ঘোষ সিনহা, নিজস্ব প্রতিবেন: চিন্তন নিউজ:১৯শে মে:– “মিথ্যারও মহত্ত্ব আছে। হাজার হাজার মানুষকে পাগল করিয়া দিতে পারে মিথ্যার মোহ। চিরকালের জন্যে সত্য হইয়াও থাকিতে পারে মিথ্যা।”
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়– পুতুলনাচের ইতিকথা
১৯০৮ সালের ১৯ মে জন্মগ্রহণকারী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছেলেবেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত দূরন্তছিলেন। কখনও হাত- পা কাটছে, কখনও বাজি তৈরী করছেন। এই একই মানুষ আবার জ্যোৎস্নারাতে আড়়বাঁশি বাজাতেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত-অতুলপ্রসাদী গাইতেন।
তাঁর সাহিত্যসাধনা, সংসারযাপন থেকে চরম দারিদ্রের সঙ্গে সহবাস, তাঁর গল্প-উপন্যাসের কাহিনির মতোই রূঢ় কঠিন। ১৯৩৫ সালে তিনি লেখালেখিতে প্রবেশ করেন। ১৯৩৫ সালে শুরু করে ১৯৩৬ সালেই লিখে ফেলেন ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’র মতো প্রভাবশালী এই উপন্যাসটি।পুতুল নাচের ইতিকথা’ ও ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ এই দুটি উপন্যাসই তাকে কিংবদন্তি কথাশিল্পীতে পরিণত করে।
পুতুনাচের ইতিকথা উপন্যাসটির কেন্দ্রীয় চরিত্র গ্রামের ডাক্তার শশী। ঈশ্বরের প্রতি তার বিশ্বাস নেই। গ্রামের পটভূমিতে শশী, শশীর পিতা, কুসুম-সহ অন্যান্য চরিত্রগুলোর মাঝে বিদ্যমান জটিল সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গড়ে উঠেছে এর কাহিনী ও প্রেক্ষাপট। ক্ষয়িষ্ণু সমাজের প্রেম, বিরহ, দ্বেষ ও পারস্পরিক সহমর্মিতাকে উপজীব্য করে লেখা এই উপন্যাস বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “সত্যিই তো মানুষ পুতুল নয়, যে এক অদৃশ্য শক্তি বা অন্য মানুষের আঙুলে ব়াঁধা সূতোর টানে পুতুলের মতো নাচবে না মানুষ।”
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কেন লিখি’ প্রবন্ধে বলেন, ‘লেখা ছাড়া অন্য কোনো উপায়েই যেসব কথা জানানো যায় না, সেই কথাগুলো জানানোর জন্যই আমি লিখি।”
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেছিলেন, সাহিত্যকেরও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিৎ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে মানবিক মূল্যবোধের চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যজগতে নতুন এক বৈপ্লবিক ধারা সূচিত হয় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। কয়েকজন প্রগতিশীল লেখকের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর রচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল মধ্যবিত্ত সমাজের কৃত্রিমতা, শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম, নিয়তিবাদ ইত্যাদি। ফ্রয়েডিয় মনঃসমীক্ষণ ও মার্কসের শ্রেণীসংগ্রাম তত্ত্ব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যা তাঁর রচনায় ফুটে উঠেছে। জীবনের অতি ক্ষুদ্র পরিসরে তিনি রচনা করেন চল্লিশটি উপন্যাস ও তিনশত ছোটোগল্প।
১৯৪৪ সালে তিনি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। এ সময় থেকেই তাঁর লেখায় কম্যুনিজমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আর্থ- সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের ভাঙ্গা গড়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবকে তিনি তাঁর সাহিত্যে চিত্রায়িত করেছেন। তিনি পূর্ববঙ্গ প্রগতি লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এর যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। দু’বার তিনি এ সঙ্ঘের সম্মেলনে সভাপতিত্বও করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তিনি কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে ঐক্য ও মৈত্রী স্থাপনের প্রয়াসে সক্রিয় ছিলেন।
জীবনের শেষদিকে তীব্র আর্থিক কষ্টে ভুগেছেন তিনি। দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ১৯৫৬সালের ৩রা ডিসেম্বর, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু ঘটে। আজ জন্মদিবসে চিন্তনের গভীর শ্রদ্ধার্ঘ্য