রাহুল চ্যাটার্জি: চিন্তন নিউজ:২৩শে আগস্ট:- অশুভ শক্তির গ্রাস থেকে মুক্ত হোক বিশ্বভারতী- এই আওয়াজ তুলে বোলপুরে বীরভূম জেলার ডিওয়াইএফআই- এসএফআই এর উদ্যোগে স্বাস্থ্য বিধি মেনে গণ-কনভেনশন কর্মসূচি হলো শনিবার সকালে। ডিওয়াইএফআই – এসএফআই এর উদ্যোগে ঐ একই ইস্যুতে গোটা জেলায় প্রতীকী অবস্থান ও পোস্টারিং করা হয়। শান্তিনিকেতনে মেলা প্রাঙ্গনকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরার পরিকল্পনার জন্য বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কড়া সমালোচনা করা হয় এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে। একই সঙ্গে, হিংসা ছড়িয়ে পাঁচিল ভাঙার বিরুদ্ধেও তাঁরা প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।
উপস্থিত ছিলেন এসএফআই এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, ডিওয়াইএফআই রাজ্য কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কলতান দাশগুপ্ত, বিশ্বভারতীর বর্তমান-প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী- সাধারণ মানুষ যারা তাদের প্রাণের শান্তিনিকেতনের গরিমাকে কলুষিত হতে দিতে চান না।
‘বিশ্বভারতীর ভিতরের ও বাইরের বিভিন্ন অংশের মানুষের আলোচনার মধ্য দিয়ে অশুভ শক্তির গ্রাস থেকে মুক্ত হোক বিশ্বভারতী’ এই ছিল এদিনের কনভেনশনে উপস্থিত সকলের মূল দাবী। এদিনের কনভেনশনে এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন বলেন, মোদি সরকার বিশ্বভারতীকেও তাদের পরীক্ষাগার বানানোর জন্য তাদের নিজেদের দলদাস উপাচার্য বসিয়েছেন যিনি কথায় কথায় সংবিধান পাল্টে দেওয়ার, ছাত্রদের শায়েস্তা করার নিদান দেন।।প্রাচীর তুলে তিনি আপামর সকলের মননে প্রাচীর তুলতে চাইছেন এটা ভুলে যে কবিগুরুর সংস্কৃতি-চেতনাকে কোনো গন্ডি কেটে আবদ্ধ করা যাবে না, যেখানে আমাদের বুকে রয়েছেন রবি ঠাকুর। তিনি আরও যোগ করেন যে এর পরেও প্রাচীর তোলার চেষ্টা হলে আমরাও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তা রুখবো তবে সেটা গণতান্ত্রিক উপায়ে। তৃণমূলের মত গুন্ডামি করে, প্রাচীর ভেঙে, জেসিবি চালিয়ে নয়। তিনি বলেন যে, কবিগুরুর এই পীঠস্থানকে কোন সাম্প্রদায়িক শক্তির আখড়া যেমন হতে দেব না তেমনই কোন অশুভ-গুন্ডারাজের আঁতুরঘর ও বানানো চলবে না।
সভায় উপস্থিত শিক্ষক কুন্তল রুদ্র বলেন, বিশ্বভারতীকে কংক্রিটের প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা, রবীন্দ্রনাথের আশ্রমিক ভাবনা বা কবিগুরুর মুক্ত শিক্ষাঙ্গনের আদর্শের পরিপন্থী। আমরা কেও প্রাচীর দেওয়া মেনে নিতে পারছিনা। প্রাচীর দেওয়ার বিরুদ্ধে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী,আশ্রমিক ও এলাকার মানুষের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে যে গুন্ডামীর নমুনা দেখা গেল, তা কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মেনে নিতে পারেন না। মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে কিছু কায়েমী শক্তি তাদের বাণিজ্যিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে।এই সংগঠিত লুম্পেনরাজের পেছনে জমি মাফিয়াদের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে। বিষয়টি সংগঠনগত ভাবে মানুষের কাছে আমাদের নিয়ে যাবো।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার মেলার মাঠে পাঁচিল তোলার কাজ শুরু করেছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এই ব্যাপারে আপত্তি ছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী, আশ্রমিক, পড়ুয়া ও স্থানীয় মানুষদের। পৌষ মেলার মাঠে পাঁচিল তোলাকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায় সোমবার। এই ঘটনায় সংঘটিত হয় মিছিল, মেলার প্রবেশদ্বার জেসিবি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং নির্মীয়মান পাঁচিল ভাঙচুর করেন উপস্থিত জনতা। নেতৃত্বে দেখা যায় স্থানীয় বিধায়ক নরেশ বাউড়িকেও, যিনি পরে এই ঘটনাকে ‘স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষ’ আখ্যা দেন। বিধায়ক, স্থানীয় তৃণমূল নেতা গগণ সরকার সহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিত অভিযোগ করে থানায়। সোমবারই স্বত:প্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছিল শান্তিনিকেতন থানার পুলিশ। যদিও পরে তারা জামিনে মুক্ত। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, অন্য প্রতিষ্ঠানের সাথে বিশ্বভারতীর আর কোনো ফারাক থাকছে না। রবীন্দ্র সংস্কৃতি, ভাবাদর্শ, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভাবাবেগ সব কিছু ধ্বংস করে বর্তমান উপাচার্য এখন বিশ্বভারতীকে কংক্রিটের জঙ্গল বানানোর চেষ্টা করছেন। এই ভাঙচুরের ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধনেরও অভিযোগ উঠেছে। গোটা ঘটনায় সিবিআই তদন্ত চেয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষামন্ত্রকে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।