দেশ রাজ্য

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ইউনিয়ন তৈরীর পথে বামেরা ::


রত্না দাস: চিন্তন নিউজ: ৮ই সেপ্টেম্বর,২০২০:- মার্চের মাঝামাঝি কেন্দ্রীয় সরকার আচমকা লকডাউন ঘোষণা করে এর ফলে রাজ্যের বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা পড়ে মহা বিপদে। সেই সময় রাঁচির কাছে একটি কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ সেকেন্দ্রা গ্রামে আব্দুল মান্নান নামে একজন পরিযায়ী শ্রমিক গ্রামে ফিরে আসেন অতিকষ্টে। এই গ্রাম থেকে শ’য়ে শ’য়ে কর্মী ভারতের বিভিন্ন শহরের কাজের জন্য যায়। কিন্তু হঠাৎ লকডাউন এর ফলে ট্রেন বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা কেউই নিজের গ্রামে ফিরতে না পেরে , সেই জায়গায় অনাহারে অনিদ্রায় দিন কাটাতে থাকে। মান্নান কোনক্রমে গ্রামে ফিরলেও তার মত ভাগ্য অনেকের ক্ষেত্রেই হয়নি । এই গ্রামেরই কুড়ি জন শ্রমিক উড়িষ্যার বারিপদায় আটকে অনাহারে রাস্তায় দিন কাটাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে মান্নান নিজে উদ্যোগী হয়ে তার বন্ধু বান্ধবদের সাথে নিয়ে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বারিপদা সেই কুড়িজন পরিযায়ী শ্রমিককে ও ঝাড়খন্ডে আটকে পড়া আরো কিছু শ্রমিককে গ্রামে ফিরিয়ে আনেন।

সিপিএম-এর শ্রমিক সংগঠন সিটু এই প্রথম পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি ইউনিয়ন তৈরি করেন। এই ইউনিয়নটির নাম রাখা হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্রেন্ট ওয়াকার্স ইউনিয়ন ‘।মধ্য পঞ্চাশের এই নির্মাণ শ্রমিক আব্দুল মান্নানকে রাজ্য সম্পাদক করা হয়।
কেন এই ইউনিয়ন এর প্রয়োজনীয়তা পড়ল?মান্নানের কথায়,’লকডাউনের সময় আমরা বুঝতে পারলাম ঠিক কতটা অসহায় অবস্থার মধ্যে রয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক। খেতে না ,পেয়ে জীবন হাতে করে নিঃস্ব অবস্থায় তাদের গ্রামে ফিরতে হয়েছে। তাই আমরা ইউনিয়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এই ইউনিয়ন গঠনের ভাবনাচিন্তা গত জুলাই মাস থেকেই শুরু হয়। রাজ্যের শ্রমদপ্তরে এই ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র জমা পড়েছে। তাদের লক্ষ্য একলাখ সদস্য সংগ্রহ করা। এই নতুন ইউনিয়ন এখনো পর্যন্ত ৪০হাজার সদস্য সংগ্রহ করতে পেরেছে বলে তারা দাবি করছে । কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্রেও এই ইউনিয়ন গঠন হয়েছে।

সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক এস এম সাদীকে ইউনিয়নের সভাপতি করা হয়েছে। তার কথায়,’পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কাগজে-কলমে ১৯৭৯সালের একটি আইন রয়েছে । আপাতত কাজ হারানো এই পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি মাসে ৭৫০০টাকা করে ৬মাস সহায়তা প্রদান, যে ঠিকাদার এদের নিয়ে যান তাদের নাম নথিভুক্তকরণ ও পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য রাখার জন্য জেলায় জেলায় নোডাল অফিসার নিয়োগ সহ বিভিন্ন দাবিতে আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। কারণ কোন রাজ্য থেকে ক জন শ্রমিক কাজের খোঁজে ভিন রাজ্যে যান তার কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই। পুরুলিয়া সহ আরো কয়েকটি জেলায় এই দাবী নিয়ে ভিডিও অফিসে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। সিটু একটি হেল্পলাইন চালু করেছে যাতে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাথে যোগাযোগ করা যায়।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।