রঘুনাথ ভট্টাচার্য্য: চিন্তন নিউজ:৫ই মার্চ:– উৎসাহী পাঠকের স্মরণে থাকতে পারে বলিভিয়ায় গত অক্টোবরে নির্বাচনী দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে তদানীন্তন বামপন্থী ভূমিপুত্র (আদিবাসী?) নেতা মোরালেসকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তিনি দেশ থেকে বহিস্কৃত হয়ে প্রথমে মেক্সিকো ও পরে আর্জেন্টিনায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। বর্তমানে সেখানেই আছেন।এই দুস্কার্য্য সম্ভব হয়েছিল বলিভিয়ায় আমেরিকার স্বার্থরক্ষার দায়িত্ব প্রাপ্ত পুতুলের নেতৃত্বে।
সক্রিয় সংস্থা অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস্(OAS) নিয়োজিত ইলেক্টোরাল মিশন
নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভূয়া তথ্য দেওয়ায়, যেটা দক্ষিণপন্থী সংবাদ মাধ্যমে ব্যপক অন্ধপ্রচার পায়। এর ফলে ছায়া গণরোষ সৃষ্টি করে এক ঘৃন্য চক্রান্তে মোরালেস বিমুখী রাজনৈতিক ঘুর্ণি তৈরী করা হয়।তারপর আমাজন দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। লাতিন আমেরিকার বামপন্থী জনতার আন্দোলন চলতে থাকে। ক্রমে তা প্রগতিশীল সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শেষে আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্টের উদ্যোগে ম্যাসাচুসেট ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির(MIT) শাখা ইলেকশন ডাটা ও সায়েন্স ল্যাবের বিশ্লেষণী তদন্তর সাহায্যে সেন্টার ফর ইকনমিক এন্ড পলিসি রিসার্চ-এর(CEPR) এক সত্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে,” মোরালেসের জয় অত্যন্ত ন্যায্য ছিল। সংবাদ মাধ্যমে ‘ দুর্নীতি ‘ সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য পরিবেশিত হয়েছিল। তাঁর অনুসরণে ‘নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের ‘ বিচার অন্যায় ভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। ” নির্বাচন- রীতি পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ হিসাবে তাঁরা বলেন যে,’ বিশ্লেষিত সংখ্যা -তথ্য’ কখনোই মোরালেসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী দুর্নীতির অভিযোগ সমর্থন করে না। এই রিপোর্ট গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্ট সাধারণ্যে প্রকাশ করে।
ঐ ডিসেম্বরেই ১২৬ জন প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস্(OAS)কে চিঠির লিখে মিথ্যাচারে অভিযুক্ত করেন এবং বলেন যে তাঁরা যেন অবিলম্বে তাঁদের ঐ ভ্রান্ত রিপোর্ট প্রত্যাহার করে নেন, কারন তাদের তদন্তে জানা গেছে যে ঐ মিথ্যা রিপোর্টের ফলেই বলিভিয়ায় গণতন্ত্র
অপহৃত হয়েছিল এবং এক বিষম রাজনৈতিক অস্থিরতাতৈরী করে জনগনের নির্বাচিত
সরকারের পতন ঘটিয়ে অবশেষে জনগণের অধিকার অপহরন করা হয়। সিইপিআরএর
কো-ডিরেক্টর মার্ক ওয়েসব্রট প্রশ্ন তোলেন ও ব্যাখ্যা দাবি করেন যে, কেন ওএএস এর মত এক দায়িত্বশীল সংস্থা এরকম ভুল তথ্য পরিবেশন করে জনরোষের সৃষ্টি করলেন
যার ফলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তার রাজনৈতিক সুস্থতা হারাল। কেন এই অসত্য বিভ্রান্তিকর রিপোর্ট বাতিল হবে না এবং সত্যের প্রতিষ্ঠা হবে না।
প্রকৃত তথ্য যা সামনে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাচনের দিন শেষ গণনা পর্যন্ত মোট ৮৩.৮৬% ভোট গোণা হয়। তখন পর্যন্ত মোরালেস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণপন্থী কার্লোস মেসা-এর থেকে ৭% শততম
পয়েন্টে ( percentile?) এগিয়ে ছিলেন। পরদিন গণনা শুরু হলে ৯৫%ভোট গণনা পর্যন্ত মোরালেসের ‘লীড’ বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শততম পয়েন্টের একটু বেশি। ঠিক এই সময় ওএএস নিযুক্ত ইলেকশন ট্রাইব্যুনাল -এর নির্দেশে ভোট গণনা বন্ধ করে দেওয়া হয় এই সন্দেহে যে মোরালেস-এর পক্ষে এই হঠাৎ অগ্রগতির পিছনে দুর্নীতি থাকা সম্ভব।এই প্রসঙ্গে, সিইপিআর-এর রিপোর্টে বৃহষ্পতিবার বলা হয় যে, –প্রাথমিক গণনার ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত মোরালেস এগিয়ে ছিলেন প্রথম রাউন্ডে
জয়ের লক্ষ্যে। তারপর যখন গণনা শুরু হয়েছে তখন তাঁর ভোট প্রাপ্তির গতিপ্রকৃতি গতদিনের সাথে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল,একথা অনস্বীকার্য। ওএএস এর দাবিমত কোনো অসঙ্গত’ পরিবর্তনের লক্ষণ প্রমাণিত হয় নি। এর পূর্বেই সিইপিআর বলে মোরালেসের অগ্রগতি কোনো ভাবেই আকস্মিক ছিল না, বরং সুস্থ ধারাবাহিকই ছিল।
এই রিপোর্ট ওয়াশিংটন পোস্টের মত দায়িত্বশীল সংবাদ প্রকাশ করার সাথে সাথেই মোরালেস এক বার্তায় দাবি করেন যে, বলিভিয়ার জনগণের সঙ্গে পর্বতপ্রমাণ প্রতারণার সাক্ষ্য উন্মোচিত হল। সত্য অবশ্যই তার পথ চিনে নেবে। ওএএস , তার প্রধান লুই আলমাগরো এবং ইলেকশন ট্রাইব্যুনাল তথা কমিশন , যাঁরা ঐ নির্বাচনের ফলাফল তদারক করছিলেন
তাঁরা বলিভিয়ার জনগণের কাছে ও সারা বিশ্বের প্রগতিশীল জনতার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
আগামী তেসরা মে,২০২০, বলিভিয়ার জনগণ আবার তাঁদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য চক্রান্তের উপযুক্ত জবাব দেবেন, আশা করা যায়।
সর্বশেষ সংবাদ, ইভো মোরালেস তাঁর নিজের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন । তাঁরই বামপন্থী দলের দুই নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী, আরসেরা কাটাকোরা ওএনড্রিকো রডরিগেজ, এর মধ্যে কোন একজনের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।সারা বিশ্বের প্রগতিশীল জনতা চেয়ে থাকবে এই নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি ও চূড়ান্ত ফলাফলের দিকে।