স্বাতী শীল, চিন্তন নিউজ, ১৩ মে: সেই ১৮৮৬ তে প্রথমবার ১৬ ঘন্টা থেকে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ঘটে শ্রমিক আন্দোলন, তারপর থেকে সেটাই চলে এসেছে। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্র সরকার পুনরায় ৮ ঘন্টা থেকে ১২ ঘন্টা কাজের সময় নির্ধারিত করে দেশের শ্রম আইনকে লঘু করতে চাইছে। মঙ্গলবার বিকেলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথাই জানান সিপিআইএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
তিনি বলেন একদিকে প্রধানমন্ত্রী সমানে ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকদের বেতন ও মজুরি কাটা যাবে না, লকডাউনে কোন মানুষ কাজ হারাবেন না। অথচ বাস্তবে উল্টোটাই ঘটে চলেছে। লক ডাউনের ৫০ দিনের মধ্যেই প্রায় ১৪ কোটি লোকের চাকরি গেছে। যে পুঁজিপতিরা নির্দ্বিধায় শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে, তাদের পুরো বেতন দিচ্ছে না, তারাই আবার অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে মোটা অঙ্কের টাকা অনুদান দিচ্ছেন। অন্যদিকে আবার শ্রমিকদের রীতিমতো বাধ্য করা হচ্ছে তাদের একদিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে দিতে। অর্থাৎ শ্রমিকদের হকের টাকা দিয়েই চলছে এই তহবিল আর বরবাদ হচ্ছে শ্রমিকদের জীবন। দেশের যে শ্রমিক কৃষকরা ক্রমাগত লড়াই করে তাদের অধিকার আদায় করেছিল সেই অধিকার তাদের থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আর এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করলেই তার ওপর ইউপিএ আইনে মামলা করছে এই ফ্যাসিবাদী সরকার।
এইদিন অভিবাসী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিতারাম ইয়েচুরি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ৩১শে মার্চ ঘোষণা করেন যে, আর কোন অভিবাসী শ্রমিক রাস্তায় নেই। সবাইকে সরকার যথাযথ আশ্রয় এবং খাবার দিয়েছে। অথচ ওই দিনের পর থেকে আজ ৪২ দিন অতিক্রান্ত প্রায়। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক আজও হেঁটে বাড়ি ফিরছে। অনাহারে রয়েছে। কোন সরকার তাদের কথা ভাবছে না, না কেন্দ্র না রাজ্য। এভাবে বাড়ি ফিরতে গিয়ে বহু শ্রমিকের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে, কখনো চলন্ত গাড়ির ধাক্কায়, কখনো রাতে নিশব্দে পিষে দিয়ে গেছে ট্রেন, আবার কখনও খিদের জ্বালায়, আবার কোথা উচ্চ হারে দাম দিয়ে ঘরে ফেরার জন্য টিকিট কিনতে হচ্ছে। এদের দায়িত্ব কে নেবে? সরকারেরই দায়িত্ব তাদের যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু এই দায়িত্ব নিতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ।
তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রাত্রি আটটায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। তার কাছে আমরা কিছু বিষয়ে দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রথম দাবি অবশ্যই অভিবাসী শ্রমিকদের দায়িত্ব সহকারে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে। সরকারের কাছে আমাদের দ্বিতীয় দাবি, যারা বেকার হয়ে গেছেন, যাদের হাতে টাকা নেই, থাকার জায়গা নেই, যে পরিবারগুলি ইনকাম ট্যাক্স দেয় না, সেইসব পরিবারকে আগামী তিন মাস পর্যন্ত প্রত্যেক মাসে ৭,৫০০ টাকা করে দিতে হবে। আর তৃতীয় দাবি প্রত্যেক দরিদ্র মানুষকে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ১০কেজি করে খাদ্যশস্য দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা আশা করব ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই তিনটি দাবির বিষয়ে স্পষ্ট করে ঘোষণা করুন।” তিনি আরো বলেন যে, “গতকাল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী জানান, কোভিড১৯ মোকাবিলায় ভারতের পদক্ষেপ গোটা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে। অথচ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে কোভিড ১৯ টেস্টের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবথেকে কম। এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীরা পর্যন্ত এই মহামারী শিকার হচ্ছে। এদের অনেকেই উপযুক্ত সুরক্ষা ছাড়াই চিকিৎসা করতে বাধ্য হচ্ছেন। যেদিন প্রথম লকডাউন শুরু হয়েছিল সেদিন দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ আর আজ লক ডাউনের ৪৯ তম দিনে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩০০। আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। তাহলে কোথা থেকে ভালো হয়েছে? দেশের পরিস্থিতি এর থেকে অনেক ভালো হতো যদি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে যথাযথ পরিকল্পনা মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। দেশের প্রশংসা যদি কোথাও হয়ে থাকে তো সেটা একমাত্র হয়েছে কেরলের জন্য। যেভাবে ওখানকার বামপন্থী সরকার করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে তা প্রশংসিত হয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে। যদি কেরল সরকার পেরে থাকে তাহলে আমরা কেন পারব না? এই প্রশ্নের জবাব চাই আমরা প্রধানমন্ত্রী কাছে।”
পরিশেষে বলা যায় বর্তমান পরিস্থিতিতে একটাই মাত্র কর্তব্য। সেটি হল করোনার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে লড়াই করা। এই মহামারীকে জিততে না দেওয়া। তবে সেই লড়াই যেন শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী না হয়ে যায়, এই বিষয়ে সরকারকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।