চিন্তন নিউজ:৩১শে আগস্ট,২০২০:- কাকলি চ্যাটার্জী—৩১ আগস্ট খাদ্য আন্দোলনের শহীদ দিবস পালন বর্তমান অবস্থার নিরিখে বড়ই প্রাসঙ্গিক। ১৯৫৩-৫৪ সালে কৃত্রিম খাদ্যসংকট তৈরী করা হয়েছিল কালোবাজারের কারবারীদের মদত দিতে এবং সেটা ১৯৫৯ সালে তীব্র হয়। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায়কে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে এক স্মারকলিপি দেওয়া হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই সংকট মোচনে কোনো পদক্ষেপ নেননি। ফলে আন্দোলনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ১৯৫৯ সালের ৩১ আগস্ট লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশ হয় শহীদ মিনার ময়দানে, সমাবেশ শেষে অভুক্ত ও অসহায় জনতার মিছিল এগিয়ে চলে মহাকরণ অভিমুখে। শাসকদলের পেটোয়া পুলিশবাহিনী লাঠিচার্জ শুরু করে নিরন্ন মানুষগুলোর ওপর, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন ৮১ জন, নিখোঁজ হন ১০০ জন। প্রায় ৩০০০জন আহত এবং গ্ৰেপ্তার করা হয় বিশ হাজারের মত লোককে।
আজকেও দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ পেটে খিদে নিয়ে ঘুমাতে যান। অন্যদিকে দশ হাজার কোটি টন খাদ্যশস্য গুদামে পচে গেলেও বিতরণ করা হয় না দরিদ্র পরিবারগুলোর মধ্যে। খাদ্য নিরাপত্তা আইন খাতায় কলমে থাকলেও নেই প্রয়োগ এবং ক্রমশ তা শিথিল করা হচ্ছে। অসহায় চাষীরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না যদিও বাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী! ফড়ে, দালালদের পকেট ভর্তি হচ্ছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় লকডাউনে মানুষের অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়েছে। রেশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, আকালের সন্ধানে হাঁটছে ভারতবর্ষ। কৃষক আত্মহত্যা বেড়েই চলেছে। শাসকের চরিত্র পরিবর্তন হয়নি, পাল্টেছে শুধুমাত্র সময়। কেন্দ্র এবং নবান্ন থেকে স্বৈরাচারী সরকারের পরিবর্তন না ঘটালে, শাসক শ্রেণীর নীতির বদল না হলে খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের প্রতি সত্যিকারের সম্মান বা শ্রদ্ধা জানানো বোধহয় সম্ভব নয়।
আজ লকডাউন রাজ্য সরকারের চরম খামখেয়ালিপনার নজির বহন করে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আজ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে খাদ্য আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরাড়ম্বরভাবে কিন্তু আন্তরিকতার সঙ্গে স্মরণ করা হয় তাঁদের ত্যাগ ও আদর্শের কথা। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র প্রমুখ বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ।
স্মরনে খাদ্য আন্দোলনের শহীদ—
অচ্যুত চক্রবর্তীর প্রতিবেদন—কলকাতা জেলা:-
আজকে পূর্ব ঢাকুরিয়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে ১৯৫৯ সালের খাদ্যেরদাবিতে লড়াই করতে গিয়ে যারা শহীদ হন, তাঁদের প্ৰতি শ্রদ্ধা জানাতে এক কর্মসূচি নেয়া হয় ! এই কর্মসূচিতে অংশ গ্রহন করেন এলাকার এরিয়া কমিটির সম্পাদক গোরা সেনগুপ্ত, এছাড়া ছিলেন অচ্যুত চক্রবর্তী , ৯২ এর পৌরমাতা মধুছন্দা দেব সহ সিপিআই(এম) এবং সিপিআই আঞ্চলিক নেতৃত্ব এবং অনেক এলাকার বাম কর্মী সমর্থক!শহীদ বেদীতে মাল্য দানের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়, তার পর সিপিআই এবং সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ উপস্থিত জনতা কে ব্যাখ্যা করেন খাদ্য আন্দোলনের ইতিহাস, এবং আজকের দিনে খাদ্য আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা!
দেবী দাস জানান:- ৩১ শে আগষ্ট ৬১ তম খাদ্য শহীদ দিবস আন্দোলন। নতুন করে দেশ জুড়ে খাদ্য সংকটের পরিস্থিতি।সব পরিবারে মাসে নুন্যতম ৭৫০০ টাকা ৬ মাস দিতে হবে।এ পি এল — বিপিএল না দেখে প্রত্যেকে কে মাসে ১০ কেজি চাল,গম দিতে হবে। বেহালা পূর্ব (১) এরিয়া কমিটি অন্তর্গত জোকা ১ নং শাখার উদ্যোগে শহীদ দিবস পালন হলো। শহীদ তোমায় জানাই লালে লাল লাল সেলাম।
আজ ৩১ শে আগষ্ট ৬১ তম খাদ্য দিবস।আজ বেহালা পশ্চিম (১) এরিয়া কমিটি। তিন,চার, পাঁচ,ছয়,সাত ও আট নং শাখার উদ্যোগে শহীদ দিবস উপলক্ষে শহীদ স্মরণে মাল্য দান করা হয়। শহীদ তোমায় জানাই লাল সেলাম।
সাথী চক্রবর্তী জানিয়েছেন,আজ খাদ্য শহীদ দিবস ৬১ তম দিন।বেলগাছিয়া(১) নং এরিয়া শেঠপুকুর ,বিবি বাজার কাশীপুর রোড ও মহিলা ২ লকগেট শাখা এরিয়া কমিটি উদ্যোগে শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য দেওয়া হয়।
সিপিআই(এম) কাশীপুর-বেলগাছিয়া ২ অঞ্চলে আজ শহীদ স্মরণ করা হয় এবং সিপিআই(এম) কাশীপুর-বেলগাছিয়া ১ এরিয়া কমিটির অন্তর্গত ভৈরব মুখার্জি লেনে স্যানিটাইজেশনের কাজ করা হল এলাকা জীবাণুমুক্ত রাখতে।
সংবাদদাতা—-সুপর্ণা পাঠক জানান, গতকাল ভারতের ছাত্র ফেডারেশন, গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন এবং সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কাশীপুর-টালা-চীৎপুর আঞ্চলিক কমিটি এলাকার ৩২৫ জন দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষাসামগ্ৰী প্রদান করে।
সি পি আই ( এম) কসবা ৩ নং এরিয়া কমিটি অন্তর্গত খাদ্য আন্দোলনের আজ ও খাদ্য সংকটে।খাদ্য আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় ৯/১০/৬৬শাখা অঞ্চলে। এছাড়া ও খাদ্য আন্দোলনে নির্মল মজুমদার স্মৃতি কক্ষ ভেরি অফিসে শহীদ বেদীতে মাল্যদান করা হয়। শহীদ তোমায় জানাই লাল সেলাম।
কাকলি মৈত্র জানান, সবার জন্য খাদ্য চাই, নিরন্ন না থাকে যেন কেউ। শ্রদ্ধায়, শপথে জোড়াসাঁকো ১ এরিয়া কমিটি স্মরণ করল খাদ্য আন্দোলনের লড়াকু শহিদদের।