রাজ্য

বন্ধ হয়ে গেল কলকাতার আনন্দলোক হাসপাতাল


চৈতালী নন্দী, চিন্তন নিউজ, ৩১ ডিসেম্বর: দেশের এই সঙ্কটময় অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যেখানে কর্মীসঙ্কোচন আর ছাঁটাই একটা জ্বলন্ত সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে সেখানে হঠাৎই কাল সকাল ১১টা নাগাদ সল্টলেকের আনন্দলোক হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় লক আউটের নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

কত্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে  পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে এই  স্বনামধন্য হাসপাতালটি। এমনকি এই দিনের পর থেকে কোনো কর্মীকে  কোন অর্থ দেওয়া হবেনা। যে সমস্ত রোগী এখনো ঐ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন, তাদের ঐ দিনের পর অন‍্য কোথাও ভর্তির আবেদন করা হয়েছে রোগীর পরিবারের কাছে।

বাম আমলে তৈরী হওয়া এই বেসরকারী হাসপাতালটিতে খুব কম খরচে (নন-প্রফিট) চিকিৎসা পেয়ে আসছিলেন সাধারণ মানুষ। এমনকি বিভিন্ন অপারেশন এর খরচ ছিল অন‍্যান‍্য মাল্টিস্পেশালিটি বেসরকারি হাসপাতালের তুলনায় ৩০% কম। সেই কারনেই স্বাভাবিক ভাবেই রোগীর সংখ্যা ছিল বেশী।

প্রত‍্যাশিতভাবেই  এই নোটিশ পাবার পর অত‍্যন্ত ভেঙে পড়েন ৩৫ বছর সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা ও তাদের পরিবার। এই আকষ্মিক ঘোষনায় স্তম্ভিত হয়ে যান ডাক্তার ও নার্সরাও। সংবাদিকদের তাঁরা জানিয়েছেন গত ২ মাস ধরে বেতন বাকী কর্মচারীদের এবং ৩ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না চিকিৎসকরাও। এছাড়াও হাসপাতালের সামগ্রী সরবরাহ কারীদের প্রাপ‍্য টাকাও ৮ মাস বকেয়া রয়েছে।

আগে যেখানে হাসপাতালে র দৈনিক উপার্জন ছিল ১২/১৩ লক্ষ টাকা, বর্তমানে তা কমে দাঁড়ায় ৩/৪ লক্ষতে। কত্তৃপক্ষের মতে এভাবে হাসপাতাল চালানো সম্ভব নয়। তবে কর্মীদের বকেয়া সমস্ত প্রাপ‍্য অবিলম্বে মিটিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তারা দিচ্ছেন। এর জন‍্যে কর্মীদের শৃঙ্খলাহীনতা এবং কিছু কর্মীর অসহযোগিতাকে দায়ী করছেন তাঁরা। ফলে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া অনুদান বন্ধ হয়ে যায়। চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে হাসপাতালটি। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, হাসপাতালটি আর খোলার সম্ভবনা নেই।

কিন্তু কর্মচারীরা এই অভিযোগ মানতে রাজী নন। তাঁদের মতে এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করার পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। এর পিছনে অন‍্য কোনো কারন আছে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য তারা মানছেন না। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে সামিল হবেন তারা। কর্তৃপক্ষের বাড়িতে গিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানাবেন।

এদিন গিয়ে দেখা যায় প্রায় ফাঁকা হাসপাতাল এবং তার আইসিইউ। যেসব রোগী এখনও ভর্তি রয়েছেন তাঁরা পড়েছেন বিপদে। রাজ‍্য সরকারের তরফ থেকেও এই সুলভ মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালটি চালু রাখার জীবনদায়ী কোনো উদ‍্যোগ দেখা যাচ্ছে না।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।