কলমের খোঁচা

চান্নার বিদ্রোহের ২০০ বছর – একমঞ্চে একসুরে স্মরণ করলেন কেরালা ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ও এম কে স্ট্যালিন


বিশেষ প্রতিবেদন: মধুমিতা ঘোষ: চিন্তন নিউজ :১৪/০৩/২০২৩:– ২০০ বছর আগে ফিরে গিয়ে একবার দেখা যাক যে কেন এই বিদ্রোহ হয়েছিল। দক্ষিণ ভারতের ত্রিবাঙকোর এ নাদার গোষ্ঠী ভুক্ত রমনীরা এই আন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা গ্রহণ করে। আন্দোলন হয়েছিল একেবারেই উচ্চ বর্গের হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়ের পুরুষদের নিম্ন বর্ণের পিছিয়ে পড়া মানুষদের, বিশেষ ভাবে নারীদের ওপর বিভিন্ন নিয়ম আরোপ করবার জন্য।

আন্দোলনকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়।
প্রথম স্তর- আন্দোলন শুরু হল পিছিয়ে পড়া নারীদের বক্ষ আবরণে র সামাজিক অনুমতি চেয়ে। অর্থনৈতিক ভাবে পিছনে থাকা মহিলাদের স্তন ঢাকতে বা শরীরের উপরিভাগ যথার্থ আবৃত করতে অনুমতি কর ধার্য করা হয়েছিল। দরিদ্ররা ওই কর না দিতে পারলে,বক্ষ আবরনের অনুমতি পেত না।
প্রথম স্তরে পিছিয়ে পড়া নারীরা যারা কেবল খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করল তারা শুধু ব্লাউজ পরবার অনুমতি পেল। তাও উচ্চ বর্গ ‘র নারীদের মত পুরো উপরের অংশ ঢাকা না।
১৮২৭ -১৮২৯ , আন্দোলনের ২য় স্তরে আরও একটু জয়লাভ হলো। এবার নিম্ন আয় ও বর্ণের সব নারীরা ই ব্লাউজ পরবার অধিকার আদায়ে সমর্থ হলো। খৃষ্টান হবার দরকার পড়লো না।
আর বিদ্রোহ এর ৩য় স্তর বা শেষ পর্যায়ে ১৮৫৮-১৮৫৯ এ হলো সেই জয়লাভ। সমগ্র নারী জাতি,যে কোনো সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থানেই থাকুক না কেন,পুরো শরীরের উপরিভাগ আবৃত করবার অধিকার অর্জন করলো।
এতো বছরের এই যুদ্ধে নারী ছিনিয়ে নিল সমাজে সম্মানজনক ভাবে বাঁচার অধিকার।
সেই সময় উচ্চ বর্ণের হিন্দু অভিভাবকরা নিম্ন বর্ণের মানুষের ওপর যেভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ করতো, তা এখনও নানা রূপে, নানা পদ্ধতিতে ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে চলছে। বিশেষ করে ভারতে কট্টর হিন্দুবাদীরা ক্ষমতায় আসার পর, দেশ কে আবার পিছিয়ে পড়া চিন্তা ও চেতনায় আচ্ছন্ন করতে সব রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে।
শুধুমাত্র, কাল এর নিয়ম মেনে উচ্চ বর্ণবাদী দের এই শোষণ এর চেহারা এক এক জায়গায় এক এক রকম। তাই, চান্নার বিদ্রোহের ইতিহাস ও তার দীর্ঘ যুদ্ধ এর পর সম্মান জনক জয়লাভের ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরা খুব গুরুত্বপূর্ন। এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এখনকার পীড়িত, শোষিত সমাজকে মুক্তি র পথ দেখাক।
কেরালার কন্যাকুমারী র মঞ্চ থেকে ২০০ বছরের বিদ্রোহ এর ইতিহাস স্মরণ করে, বর্নবাদ ও মনুবাদীদের মোকাবিলা করার আহবান জানিয়ে বর্তমান সময়ে এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করলেন বিজয়ন ও স্টালিন।
এখন দেখার, আধুনিক মনস্ক শিক্ষিত মহিলা সমাজের মনে এই আবেদন কতটা রেখাপাত করে।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।