দীপশুভ্র সান্যাল, চিন্তন নিউজ:৫ জুলাই:-
গত বছর সিকিমের বন্যার জেরে তিস্তার জলস্ফীতির কারণে ভেসে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর একটা গোটা সেনা ছাউনি। প্রান হারিয়েছিলেন বহু মানুষ জলের নিচে দু’দিন ডুবেছিল সমতলের তিস্তা পারে সমস্ত জমি। পলির তলে চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল তিস্তার বিখ্যাত বোড়লি সহ বহু নদিয়ালি মাছ পলি সরিয়ে এ বছর ও চর এলাকায় চাষবাস সম্ভব হয়নি।
বর্ষার শুরুতেই নদীর গতিপথ পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল সরকারি তরফে সিকিম ও কেন্দ্রীয় সেচ দপ্তর ও রাজ্য সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল আপাতত এবারের বর্ষায় বাঁধ রক্ষা করে বর্ষায় তিস্তার গতিপথ দেখে আগামীতে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর মাঝেই স্পষ্টতই দেখা গেল তিস্তার গতিপথ পরিবর্তনের পরিস্কার চিত্র। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের নন্দনপুর বোয়ালমারী এলাকার বাহের চর বলে পরিচিত এলাকা ক্রমশ ভাঙ্গতে শুরু করল ২০২৪ এর প্রথম বর্ষায়। জানা গেছে চরের এই অংশে আইসিডিএস সেন্টার গত ২ তারিখের পাহাড়ে প্রবল বর্ষার জেরে তিস্তার জলস্ফিতির কারণে জল বাড়ায় নদী ভাঙ্গনে তলিয়ে যায়। ক্রমশ ভাঙছে চর দুই-একদিনের মধ্যে তলিয়ে যাবে গ্রামের একমাত্র প্রাইমারি স্কুল যেখানে ওই এলাকার ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতেন। জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকা থেকে চারজন শিক্ষক ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতে যান, স্কুলে রয়েছে প্রায় ৫০ জনের কাছাকাছি ছাত্র-ছাত্রী এবছর আরো ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি শুরু হয়েছিল। তিস্তার ভাঙনে স্কুল তলিয়ে গেলে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ কি হবে তা নিয়ে চিন্তিত সকলে। শুখা মরসুমে সদর ব্লকের মন্ডল ঘাট সংলগ্ন নন্দনপুর বোয়ালমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের এই অংশের মূল ভূখণ্ড থেকে তিস্তার চড় দিয়ে হাটা পথে যাওয়া গেলেও বর্ষার চার মাস এই গ্রামে প্রবেশ করতে হয় ময়নাগুড়ি হেলা পাকরি হয়ে ভুটভুটিতে তিস্তা পেরিয়ে। বাহের চর এলাকায় প্রায় ১২০০ র কাছাকাছি মানুষের বাস। এলাকায় রয়েছেন একজন পঞ্চায়েত সদস্য। বিস্তীর্ণ এই চর এলাকায় মূলত বাদাম, আলু, মরসুমী সবজি চাষ হয়। তিস্তার চরের জমিতে চাষ করে ফসল ফলান প্রায় সাড়ে ৩০০ কৃষক পরিবার। সম্প্রতি আইসিডিএস সেন্টার তিস্তার জলে চলিয়ে গেছে জানা গেছে সেই সেন্টার থেকে এলাকার প্রায় ৩০০ মা ও শিশুর প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার পেতেন। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী আইসিডিএস সেন্টার তলিয়ে যাওয়ার পরও এখন পর্যন্ত সরকারি তরফের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য জিতেন দাস ক্ষোভের সুরে জানান বাম জমানায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে তিস্তার বিভিন্ন চর এলাকার গ্রামগুলিকে রক্ষা করার জন্য চর বাঁচাও কমিটি গঠন করা হয়েছিল সরকারি তরফে আলোচনা করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যাতে ইস্কার চরের এই গ্রামগুলিকে রক্ষা করা যায়। ২০১১ সরকার পরিবর্তনের পর তৃণমূল সরকার চোরের মানুষের প্রতি বিমাতৃসুলভ ব্যবহার শুরু করে মূলত কৃষি কাজ ও গবাদি পশু পালনের উপরে বেঁচে থাকা শহর এলাকার এই মানুষরা সরকারি তরফে দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তাদের বাঁচার কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে কার্যত হতাশ। তার জলের তোড়ে তলিয়ে যাচ্ছে গোটা বাহেরচর ।

স্থানীয় দের অভিমত ২০১৫ সালে ময়নাগুড়ির দিকে পদমতির ২ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পিঠাবাড়ি পর্যন্ত তিস্তার ওপারে থাকা স্পারগুলি সম্প্রসারিত করা হয় যার জেরে তিস্তার ডানদিকে অবস্থিত কালামপুর চর ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে সদর ব্লকের নন্দনপুর বোয়ালমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন বাহের চর ভাঙতে শুরু করেছে। স্থানীয় কানাই নগর পাড়া নিউ প্রাইমারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর টিচার ইনচার্জ হরিপদ রায় গত কয়েক দিন ধরে খরস্রোতা তিস্তা নদী পেরিয়ে ময়নাগুড়ি হয়ে ভুটভুটিতে স্কূলে পৌঁছে গ্রামের মানুষদের সাথে নিয়ে স্কুল বাঁচানোর জন্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করলেও বাস্তব পরিস্থিতি এই মুহূর্তে তিস্তা কানাইনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০ মিটার দূরে অবস্থান করছে যে কোন রাতে তিস্তার করাল গ্রাসের তলিয়ে যেতে পারে বিদ্যালয়টি। সদর ব্লকের স্কুল ইন্সপেক্টর কে তিনি লিখিত বিষয়টি জানিয়েছেন। স্কুলের প্রয়োজনীয় সামগ্রী দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে নিখিল বঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক যথা রাজ্য সহ সভাপতি বিপ্লব ঝা র সাথে কথা বলে জানা যায় গত কয়েক বছর ধরে স্কুল রক্ষার জন্য বারবার সরকারি তরফে যোগাযোগ করা হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যে কোন দিন স্কুলটির তিস্তায় তলিয়ে যেতে পারে গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয় যাতে কোনোভাবেই বন্ধ না হয় তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেচ দপ্তরের এক কর্মী জানান তারা বিষয়টি দেখছেন কিন্তু
সরকারি কোনো নির্দেশ না আসলে তাদের কিছু করণীয় নেই আর বাহের চর এলাকা তিস্তার মাঝখানে সেখানে বাঁধের কোন ব্যবস্থা করে চড় বাঁচানো সম্ভব নয়। স্থানীয়দের
বক্তব্যে জানা গেছে ১৯৬৮ সালের জলপাইগুড়িতে তিস্তার ভয়াবহ বন্যার পরবর্তী সময়ে তিস্তার ডাউন স্ট্রিমে গজিয়ে ওঠে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে বসতি তিস্তার বেলে দোআঁশ মাটিতে ভালো ফসল উৎপাদনের কারণে বসতি গ্রামের রূপ নেয় মানুষের দাবি মেনে বাম জমানায় গ্রামের উন্নয়নের জন্য গড়ে ওঠে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা স্কুল আইসিডিএস সেন্টার আজ তিস্তার জলে গোটা ব্যবস্থাপনা তলিয়ে যেতে বসলেও সরকারি মহলে কোন হেলদোল নেই। সরকারি সাহায্য না পেয়ে গ্রামবাসীরা ধীরে ধীরে তাদের ঘরবাড়ি র আস্তানা ভেঙে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন আগামীতে এই চর থাকবে না ধরে নিয়ে বিকল্প ভাবনার শুরু করেছেন অনেকেই কিন্তু অধিকাংশ কৃষক পরিবারেরই চরের এইটুকু জমি ছাড়া কিছুই নেই। আগামীতে বাহের চর না থাকলে সেই মানুষগুলো কোথায় যাবেন তাদের নিয়ে কোন ভাবনা নেই সরকারের। ভোট আসে ভোট যায় শুধু প্রতিশ্রুতি সার সরকারি তরফে গত ১২ বছরে চড় বাঁচানোর জন্য কোন প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়নি। তিস্তা নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে
গত কয়েক মাসে কয়েক দফা বৈঠক হলেও কখনই চর এলাকার তিস্তার চরের বাসিন্দাদের বাঁচানোর প্রসঙ্গ উঠে আসে নি কেন ক্ষোভ স্থানীয় বাহের চর এলাকার গ্রামবাসীদের।।শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইতিমধ্যে ভাঙ্গনের তলিয়ে গেছে স্কুলের রান্নাঘর আর কিছুক্ষণের মধ্যেই তলিয়ে যাবে স্কুল।
