দেশ

বীর শহীদ যতীন্দ্রনাথ দাস স্মরণে


তুলসী কুমার সিনহা, চিন্তন নিউজ, ২৭শে অক্টোবর: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাসের নাম চিরস্মরণীয়।যিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। লাহোর সেন্ট্রাল জেলে সহযোদ্ধাদের অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে ৬৩ দিন অনশন করে হাসিমুখে মৃত্যু বরণ করেন।

যতীন্দ্রনাথ ১৯০৪ সালে ২৭শে অক্টোবর কলকাতায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বঙ্কিম বিহারী দাস ও মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। তিনি ১৯২০ সালে ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাশ করেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হন। বঙ্গবাসী কলেজে পাঠরত অবস্থায় তিনি আরও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।

১৯২৫ সালের নভেম্বর মাসে রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য তাঁকে ব্রিটিশ সরকার অ্যারেস্ট করে ময়মনসিংহের সেন্ট্রাল জেলে আটক করে রাখে। সেখানে রাজনৈতিক বন্দীদের সাথে জেল কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণ ও নির্যাতন তাঁকে জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হতে বাধ্য করে। ফল স্বরূপ তিনি জেলের মধ্যে অনশন শুরু করেন। ২০ দিন অনশন চলার পর জেল সুপার তাঁদের কাজের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলে যতীন্দ্রনাথ অনশন প্রত্যাহার করেন।

তিনি ততদিনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের তৎপরতা চালানোর উদ্যোগ নেন। এই সময়েই তিনি ভগৎ সিং এর সাথে আন্দোলনে সামিল হন। বিপ্লবী শচীন্দ্র স্যানালের সংস্পর্শে এসে তিনি বোমা বানানোর কায়দা রপ্ত করেন।

১৯২৯ সালের ১৪ জুন যতীন দাসকে পুনরায় তাঁর কলকাতার বাড়ি থেকে লাহোর পুলিশের নির্দেশে গ্রেপ্তার করা হয়। ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত, শুকদেব থাপার, শিভরামন রাজগুরুর মতো তাঁকেও লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয় এবং সকলকে লাহোর সেন্ট্রাল জেলে আটক রাখা হয়। জেলের মধ্যে ভারতীয় রাজবন্দীদের প্রতি অমানবিক ব্যবহারের প্রতিবাদে এবং ইউরোপীয় বন্দীদের সাথে ভারতীয় বন্দীদের মধ্যে সমতা বজায় রাখার দাবিতে যতীন্দ্রনাথ ১৩ই জুলাই থেকে অনশন শুরু করেন।

এই সময় তাকে বহুবার জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করা হলেও জেল কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়। ৬৩ দিন অনশনের পর ১৩ই সেপ্টেম্বর ঐ জেলের মধ্যে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর ফলে জেলে অন্য বন্দীদের উপর অত্যাচারের মাত্রা হয়তো কিছুটা কমেছিল। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে ভারতবর্ষ একজন বীর সাহসী যোদ্ধাকে হারায়। তাই বীর শহীদের দেহ লাহোর থেকে কলকাতায় আনা হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ শোক মিছিলে সামিল হয় যার নেতৃত্ব দেন স্বয়ং সুভাষ চন্দ্র বসু।


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।