মল্লিকা গাঙ্গুলী: চিন্তন নিউজ:১৫ই অক্টোবর:- সাম্প্রতিক রাজনীতির বিতর্কিত বিষয় হ’ল কেন্দ্র সরকারের অগণতান্ত্রিক ভাবে পাশ করা তিনটি কৃষক বিরোধী কৃষি বিল তথা কৃষি আইন। এই বিতর্কিত কৃষি আইনকে কেন্দ্র করে সারা দেশ জুড়ে সর্ব শ্রেণীর মানুষ বিজেপি বিরোধী আন্দোলনে সামিল।
এই কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে শুধু রাজনৈতিক সংগঠন বা কৃষক সমাজ নয়, সর্বস্তরের সচেতন নাগরিক কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে এই আইনের সংশোধন অথবা প্রত্যাহার চান। ভারতের সমস্ত রাজ্যে নানা ভাবে নতুন কৃষি আইন বাতিলের জন্য আন্দোলন চলছে, তবে এ বিষয়ে শীর্ষে আছে পাঞ্জাব। পাঞ্জাবের তিরিশটি কৃষক সংগঠন একজোট হয়ে কোনও রকম রাজনৈতিক ছত্রছায়া ছাড়াই সোচ্চার আন্দোলনে সামিল। পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠন গুলির বিক্ষোভের তীব্রতা প্রশমিত করার কারনেই এই বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে চেয়ে কেন্দ্র সরকার সময় দিয়েও কিন্ত কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর সেই বৈঠকে উপস্থিত হলেন না।
এ প্রসঙ্গে বলা দরকার কেন্দ্র মন্ত্রক পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মাধ্যম করে সমগ্র দেশের কৃষকদের কেন্দ্রের কৃষিনীতি ব্যাখ্যা করার জন্য কেন্দ্র নিজেই এই বৈঠক ডাকে। প্রথমে কৃষক নেতৃত্ব এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে রাজি ছিল না, পরে পাঞ্জাবের বিশিষ্ট নেতৃত্বরা বৈঠকে যোগ দান করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্ত শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের দ্বিচারিতায় নেতারা হতাশ হন। নির্দিষ্ট দিনে শান্তিপূর্ণ আলোচনার দ্বারা মন্ত্রীকে তাদের বক্তব্য বোঝাবেন বলে বৈঠকে উপস্থিত হয়ে দেখেন মাননীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং সেখানে অনুপস্থিত। মন্ত্রীর সচিবকে তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে দেখে নেতৃত্ব ক্ষোভে ফেটে পরে। কৃষিভবনের ভিতরেই কৃষক নেতারা সরকার বিরোধী স্লোগান তুলে মন্ত্রীর উপস্থিতির দাবি জানান। তাদের হাতে বিতর্কিত কৃষি আইনের যে কপি ছিল তা সচিবের সামনে ছিঁড়ে ফেলে আইন বাতিলের দাবিতে ভবন কাঁপিয়ে আওয়াজ তোলেন- ভারতের কৃষক সমাজ এই অবমাননা মেনে নেবে না, এই স্বৈরাচারী আইন যতদিন না বাতিল হবে তাদের এই আন্দোলন আরও তীব্র ভাবে অব্যাহত থাকবে বলে প্রতিবাদ করে। বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এসে বিশিষ্ট এক কৃষক নেতা সাংবাদিক দের বলেন, তারা এই বৈঠকের আলোচনায় সন্তুষ্ট নন, বৈঠকে কোনও মন্ত্রী না আসায় তারা ওয়াক আউট করেছেন, এবং তারা পাশ হওয়া তিনটি আইন ই প্রত্যাহারের দাবি রেখেছেন।
তাদের মতে সম্প্রতি পাশ হওয়া কৃষি আইনের মূল কথা, যেকোন প্রদেশের কৃষক দেশের যেকোন স্থানে পণ্য বিক্রি করতে পারবে, সরাসরি কৃষক কর্পোরেট সংস্থার সাথে চুক্তি করতে পারবে বলা হলেও কৃষক দের কাছে এই বন্দোবস্ত যথেষ্ট উদ্বেগের। তারা এই নতুন আইনে তাদের ফসলের ন্যায্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাবে না বলেই তারা মনে করে। আর এই আশঙ্কার কারনেই কৃষকশ্রেনী এই আইন মানতে পারছে না।
ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। আসমুদ্র হিমাচল প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন ভারতের মূল অর্থনৈতিক ভিত্তি। রোদে, জলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চাষী যে সোনার ফসল ফলিয়ে সারা দেশের ক্ষুধা নিবারণ করে, সেই কৃষক স্বার্থ বিরোধী কৃষি আইন কার্যকর করে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার কর্পোরেট সংস্থাকে মাধ্যম করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির যে অনৈতিক নীতি গ্রহণ করেছে তা কৃষকদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। কৃষিবিল উত্থানের শুরুর দিন থেকেই পাঞ্জাবের কৃষকরা প্রতিবাদে সোচ্চার, পাঞ্জাবের নেতৃত্বে সমগ্র ভারতের কৃষক সমাজ একযোগে তাদের হল- লাঙল তুলে হরতালে সামিল হলে দেশের কি শোচনীয় পরিস্থিতি হবে তা সরকারের ভাববার সময় এসেছে।
বর্তমান কোভিড১৯ জর্জরিত ভারতের অর্থনীতি ক্রমশ তলানিতে, এর মধ্যে দেশের মেরুদন্ড কৃষক স্বার্থ বিঘ্নিত আইন কার্যকর হলে দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা কি ভয়ঙ্কর রূপ নেবে একথা মাথায় রেখে অবিলম্বে কেন্দ্র সরকারের কৃষি আইন তথা কৃষক দের প্রতি নমনীয় হওয়া উচিত বলে সমস্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও চিন্তাশীল মহল মনে করেন।