সুপর্ণা রায়, চিন্তন নিউজ, ১৪ নভেম্বর: পুকুরে ইলিশ! হ্যাঁ সম্ভব, হাতেনাতে তা করে দেখিয়েছে গবেষকরা। পুকুরের মিষ্টি জলে তরতড়িয়ে বেড়ে উঠছে সকলের প্রিয় রূপালী শস্য। ভোজন রসিক মানুষের হা-করে ইলিশ কবে পাতে পড়বে তার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকার দিন শেষ।
কাজটি অবশ্যই একদিনে হয়নি। দিনের পর দিন কসরত করেছেন গবেষকরা। আজও করে চলেছেন। ঘড়ির কাঁটায় চোখ রেখে ওঁৎ পেতে বসে থেকেছেন। কেউ আবার ট্রলার, বোটে চড়ে ভেসে বেড়াচ্ছেন মোহনা বা মাঝদরিয়ায়। দিন রাত এক করে জলে ভেসে বেড়াচ্ছেন, যদি তাদের দেখা মেলে। অনেক সময় দেখা মেলেনি, তবু হাল ছাড়েননি গবেষকরা। গঙ্গায় ভেসে চলা বোটে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিনত স্ত্রী ও পুরুষ ইলিশ মাছের “যুগল বন্দী” না ঘটলে তো ডিম নিষিক্তকরন সম্ভব নয়। এটা হলে কাজ অনেকটা এগিয়ে যায়। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় ল্যাবরেটরিতে। সেখানে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফোটানো হয় ইলিশ এর বাচ্চা। দিন চারেক পর তাদের মুখ খোলে। কিছু বাঁচে, আবার মারাও যায় অনেক। কাজটি মোটেও মসৃণ নয়। সবাই উপযুক্ত নয় এই কাজের জন্য।
গবেষকরা অবশ্য কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছেন, তাঁদের দরকার একেবারে পরিনত মা ইলিশ, যাদের চেহারা একটু থলথলে। পেটের কাছে অল্প চাপ দিলেই বেরিয়ে আসবে ডিম। আবার পুরুষ ইলিশ মাছটাকেও হতে হবে প্রজননক্ষম। কিন্তু চাইলেই কি আর পাওয়া যায়? বিশেষ মুহূর্তে তারা ধরা দেয়। এমনও হয় মা ইলিশ ডিম পাড়ার মুহূর্তে জালে ফাঁসে তো তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পুরুষ ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। অনেক সময় আবার উল্টোটাও হয়। তখন সব পরিশ্রম ব্যর্থ; ফিরতে হয় খালি হাতে।
ইলিশ নোনা জলের মাছ; ডিম পাড়ার সময় উঠে আসে নদীর মিস্টি জলে। আর তখনই ধরা পড়ে শিকারির জালে। এদের নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাবার সময় গবেষকরা দেখেন এমন কিছু ইলিশ গঙ্গা নদীতে আছে যারা আবাসিক হয়ে গেছে। তারা আর সমুদ্রে ফেরে না। এখানেই ডিম পাড়ছে আবার এখানেই বাচ্চা হচ্ছে। রীতিমত সংসার গড়ে তুলেছে। এই ভাবনাটাই গবেষক দের উস্কে দেয়। তখন তাঁরা ভাবেন তাহলে তো মিস্টি জলে ইলিশ মাছ হয়।
সাল ২০১২, শুরু হয় গবেষণা। পুকুরে ছাড়া হয় ইলিশের বাচ্চা। কিন্তু দিন দশেক পর বেশ কিছু বাচ্চা মারা যায়। রাতদিন এক করে কারণ খুঁজতে লাগলেন গবেষকরা। দেখা গেল হ্যাচারি কিছুটা বড়ো করে পুকুরে ছাড়লে মাছের মৃত্যু হার কিছুটা হলেও কমে। ফের গবেষণায় জানা যায় তাদের উপোযোগী খাদ্যের অভাব ঘটছে। পুকুরের মাছ যা খায় তা তো আর খাবে না ইলিশ। তার দরকার স্পেশাল মেনু। ছোট বেলায় উদ্ভিদ ও প্রাণী কনা। আরো কিছু দরকার যা খেয়ে তরতড়িয়ে বাড়বে ইলিশ।
গবেষকরা একটি নতুন খাবার তৈরি করলেন “ফর্মমুলেটেড ফিড”; দেখা গেল এই খাবার বেশ চেটে পুটে খাচ্ছে। এখন মৃগেলের সাথে বন্ধুত্ব করে বেশ কয়েকটি পুকুরে বেড়ে উঠছে রূপালী শস্য। বাচ্চা ইলিশের মৃত্যু হার অনেকই কমে গেছে। বাঁচানো গিয়েছে ডিমপোনা থেকে ধানিপোনা পর্যন্ত ইলিশ মাছের বাচ্চা। এই মুহূর্তে ৫৫০ গ্রাম ইলিশের বাচ্চা আছে পুকুরে। এসব ইলিশ দেখার সুযোগ আছে নিশ্চিন্দিপুরে, কাকদ্বীপ থেকে প্রায় ১০ কিমি দূরে বঙ্গোপসাগরের মুখে।